হজরত বেল্লাল জামে মসজিদের জেনারেটর, ফ্যান, আইপিএস, গাছ ও আধাপাকা ভবন ভেঙে বিক্রি করে দিয়েছেন বরিশালের উজিরপুর উপজেলা ওলামা লীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন ওরফে লালন ফকির। এ ঘটনায় মুসল্লিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। লালন ফকিরের হাত থেকে মসজিদের জমি ও মালামাল রক্ষা করতে আদালতে দুটি মামলা করা হয়েছে।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কাওছার বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার ওলামা লীগ নেতা লালন ফকির, ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম (নুসা) তার সহযোগী কবির হাওলাদার, বদর মোল্লা ও খলিল হাওলাদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে বরিশাল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে উজিরপুর থানা পুলিশকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে একই ঘটনায় একটি মামলা করেছিল মসজিদ কমিটি।
স্থানীয় মুসল্লিরা জানান, ২০১৩ সালে ওলামা লীগের আহ্বায়ক লালন ফকিরের বাবা উজিরপুর পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডের মাদার্শী মহল্লার বাসিন্দা আব্দুল লতিফ ফকির মসজিদ নির্মাণের জন্য পাঁচ শতাংশ জমি দান করেন। পরবর্তীতে স্থানীয়রা অনুদান দিয়ে আধাপাকা ভবন নির্মাণ করে মসজিদের নাম দেন হজরত বেল্লাল জামে মসজিদ। ১৫ দিন আগে ওলামা লীগ নেতা লালন ফকির গোপনে মসজিদের জেনারেটর, আইপিএস, টিন, জানালা, জানালার গ্রিল ও ফ্যান স্থানীয় ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের কাছে বিক্রি করে দেন।
২১ আগস্ট সকালে ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম লোকজন নিয়ে মসজিদ ভেঙে জেনারেটর, আইপিএস, মসজিদের চালের টিন, থাই জানালা, জানালার গ্রিল ও ফ্যান খুলে নিয়ে যান। সেই সঙ্গে বাইরের অংশের দেয়ালের ইট খুলে নিয়ে যান। এ সময় মুসল্লিরা বাধা দিলে নুরুল ইসলাম জানান ওলামা লীগ নেতা লালন ফকির এসব মালামাল বিক্রি করেছেন।
মুসল্লিদের অভিযোগ, পৌর সদরের উপজেলা পরিষদসংলগ্ন জমিতে আধাপাকা মসজিদটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০ ফুট এবং প্রস্থ ৩৫ ফুট। মসজিদের মিম্বার ভেঙে দেয়া হয়েছে। শুধু মসজিদের ফ্লোর পড়ে আছে। মসজিদের ফ্যান, আইপিএস, জানালার গ্রিল, ওজু খানার ট্যাংক ও মোটর কিছুই নেই।
মাদার্শী এলাকার বাসিন্দা মো. মাহাবুব ফকির বলেন, মসজিদের ইমামের বেতন দেয়ার জন্য আমি একটি দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছিলাম। লালন আমার ওই দোকান দখল করে ওলামা লীগের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন। মসজিদ ভেঙে মালামাল বিক্রি করে দিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, মসজিদের দুই শতাংশ জমি নিজের দাবি করে বিক্রির কথা বলে আমার কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা নিয়েছেন লালন ফকির।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কাউছার বলেন, মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহর ঘর কেউ ইচ্ছা করলেই বিক্রি করে দিতে পারেন না, ভাঙতে পারেন না। লালন ফকিরের হাত থেকে মসজিদের জমি ও মালামাল রক্ষা করতে প্রথমে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করা হয়। আদালত নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পরও মসজিদের মালামাল বিক্রি করে দিয়েছেন লালন। এ কারণে গত বৃহস্পতিবার বরিশাল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে লালন ফকিরের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়। এরপরও লালন ফকির মসজিদের জমি বিক্রির চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে জানতে উজিরপুর ওলামা লীগের আহ্বায়ক লালন ফকিরের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ করেননি তিনি। তবে লালন ফকিরের মা উজিরপুরের রাখালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম (৬২) বলেন, আমার স্বামীর দানকৃত জমিতে ছেলের ব্যক্তিগত টাকায় মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। এটা নিয়ে অন্যের মাথা ঘামানোর দরকার নেই।
মসজিদ ভেঙে মালামাল বিক্রির বিষয়ে মমতাজ বেগম বলেন, মসজিদটি পাকা করতে আধাপাকা ভবনের কিছু অংশ রেখে বাকিটা ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে মসজিদের মালামাল বিক্রির বিষয়টি আমি জানি না।
শিকারপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা মো. কবিরুল ইসলাম বলেন, লালনের বাবার ওয়াকফ করা সম্পত্তিতে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখন কেউ এটির মালিকানা দাবি করতে পারেন না।
ঘটনাস্থাল পরিদর্শনকারী উজিরপুর থানা পুলিশের এসআই মো. মিজান বলেন, মসজিদের মালামাল বিক্রি ও কিছু অংশ ভেঙে ফেলায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করা হয়। তখন আদালত স্থিতাবস্থা জারি করেন। পরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মসজিদের গাছ কেটে বিক্রি করেন লালন ফকির। বিষয়টি জানতে তখন ঘটনাস্থলে গেলে লালর ফকির পুলিশ দেখে পালিয়ে যান।
এসআই মো. মিজান বলেন, গত বৃহস্পতিবার বরিশাল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে লালন ফকিরের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে মসজিদ কমিটি। পরে মসজিদের বর্তমান অবস্থা জানতে চান আদালত। গাছ কেটে নেয়ারও কথা জানতে চেয়েছেন আদালত। লালন ফকিরের এসব কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবেদন দেয়া হবে।
এসআই মিজান আরও বলেন, জমি ওয়াকফকারী আব্দুল লতিফ ফকির এখন বেঁচে আছেন। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন ওয়াকফকৃত জমি দাবি করার কোনো অধিকার নেই ছেলে লালন ফকিরের।
জমি ওয়াকফকারী আব্দুল লতিফ ফকির বলেন, ওই জমি আমি মসজিদের জন্য ওয়াকফ করেছি। মসজিদের ওই জমি আমার পরিবারের কেউ দাবি করতে পারবেন না।