Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দুই কোরিয়ার একত্রীকরণে মূল সমস্যা অর্থনীতি

korea_mapউত্তর কোরিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি ৪৩ গুণ বড়। দুই কোরিয়ার একীভূতকরণ নিয়ে পর্যালোচনায় এমনই এক হিসাব দিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস কমিশনের (এফসিসি) দেয়া এক প্রতিবেদন অনুসারে, দুই কোরিয়ার একত্রীকরণের পর পরবর্তী ২০ বছর ধরে উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতিকে উন্নত করতে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হবে। এ প্রেক্ষাপটের বিপত্তের, ২৫ বছর আগে বার্লিন দেয়াল পতনের সময় পূর্ব জার্মানির তুলনায় পশ্চিম জার্মানির অর্থনীতি ১০ গুণ বড় ছিল। অনেক হিসাব ও উপাত্ত বলে, একীভূতকরণের পর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে পশ্চিম জার্মানি ২ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।

চলতি বছরের শুরুতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক গুন হে বলেছিলেন, দুই কোরিয়া এক হলে তা হবে ‘সোনায় সোহাগা’। দক্ষিণের পুঁজি ও প্রযুক্তির সঙ্গে উত্তরের শ্রম ও প্রাকৃতিক সম্পদের মেলবন্ধন ঘটাতে পারলে সম্মিলিত অর্থনীতি আরো বড় হবে। কিন্তু কিম জং উন উত্তর কোরিয়ার মসনদে বসার পর থেকে দুই দেশের সীমান্তে বেশ কয়েক দফা গোলাবিনিময় হয়েছে। তাই এ অবস্থায় দুই কোরিয়ার মিলন কতটুকু বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

chardike-ad

নিজেদের হিসাবের বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বেশ বিব্রত বলে জানালেন এফসিসির প্রধান শিন জে ইউন। ১৯ নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে এক সম্মেলনে এ বিষয়ে তার কাছে বিস্তারিত তথ্য নেই জানিয়ে শিন বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার আর্থিক বাজার বা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য নেই। বহু দিন ধরেই আমরা এ একত্রীকরণ নিয়ে স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু একে বাস্তবায়ন করার জন্য আমাদের কাছে কোনো সঠিক পরিকল্পনাই নেই।’

নিজেদের হিসাবগুলো পরবর্তীতে বদলে যেতে পারে, বলে সতর্ক করে দেয়ার পর শিন বলেন, মূলত উত্তর কোরিয়া সরকারের অস্বচ্ছতার কারণেই তারা একটি কার্যকর পরিকল্পনা গঠন করতে পারছেন না। শেষ ১৯৬৫ সালে উত্তর কোরিয়া সরকার তাদের অর্থনীতির সার্বিক দেশজ উত্পাদনের তথ্য প্রকাশ করেছিল।

ব্যাংক অব কোরিয়ার হিসাবে, গত বছর উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি ১ দশমিক ১ শতাংশ হারে সম্প্রসারিত হতে পারে। মোট জিডিপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। সমকাতারের জিডিপির দেশ আছে লাতিন আমেরিকার বলিভিয়া। ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের মতো জাতীয় গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ার এ কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করে।

শিনের বাইরেও অন্য বিশ্লেষকদের হিসাবে, একত্রীকরণের খরচ ৫০ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩ ট্রিলিয়নে পৌঁছতে পারে। শিন জানান, প্রতিবেশীর অর্থনীতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানলে একত্রীকরণের পর ২০০৮ সালের লেহম্যান ব্রাদার্সের মতো ভয়াবহ আর্থিক বিপর্যয়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।

সিউলের স্থায়ী আয় বিশ্লেষক হং জাং হি বলেন, এ একীভূতকরণে দক্ষিণ কোরিয়ার আর্থিক কাঠামো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এতে ওনের ওপর চাপ বৃদ্ধিসহ ঋণ গ্রহণের খরচও বেড়ে যাবে। অন্যদিকে গোল্ডম্যান স্যাকস গ্রুপের কোরিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ কোন গোহন বলেন, ‘একীভূতকরণের এ স্বপ্ন অর্থনীতির জন্য ভালো কিছু বয়ে না-ও আনতে পারে। জনগণের সম্মতিতে একীভূতকরণ সম্ভব হলেও তা বাস্তবায়ন করা প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জিং হবে।’

এ বছরের শুরু থেকে দুই কোরিয়ার একত্রীকরণ নিয়ে একটি প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট পার্ক। এ একীভূতকরণের পক্ষে জনমত অনেক কমলেও অনেকে বিশ্বাস করে এটি এখন সময়ের দাবি। ২০১২ সালে তার পূর্বসূরি লি মুইয়ং বাক একীভূতকরণের উদ্দেশ্যে একটি তহবিল সৃষ্টির পদক্ষেপ নিলেও জনগণের কাছ থেকে খুব একটা সাড়া পাননি।

একীভূতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যয় গোটা প্রক্রিয়ার একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। একীভূতকরণের মাধ্যমে আরো ২ কোটি ৪০ লাখ উত্তর কোরীয় নাগরিক দক্ষিণের অর্থনীতিতে প্রবেশ করবে, যারা নানা মাপকাঠিতে দক্ষিণ কোরীয়দের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। দুই জনগোষ্ঠীর মাঝে বিপুল আর্থসামাজিক ব্যবধান সম্মিলিত অর্থনীতিতে আরো বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। ব্লুমবার্গ অবলম্বনে।