সাময়িকভাবে গ্যালাক্সি নোট ৭ উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে স্যামসাং। ব্যাটারি বিস্ফোরণ ঘটনার সমালোচনা এখনো চলছে। পাশাপাশি ২৫ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন ফেরত নেয়া নিয়ে নানা জটিলতায় পড়ছে প্রতিষ্ঠানটি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই নোট ৭ উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও বিবিসি।
দক্ষিণ কোরিয়ার টেকজায়ান্টের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, ডিভাইসের মান ও নিরাপত্তার বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত করতে উৎপাদন পরিকল্পনায় খানিকটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। মান ও নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চয়তা পাওয়া গেলে পুনরায় গ্যালাক্সি নোট ৭ উৎপাদন শুরু হবে। অগ্নিঝুঁকিসম্পন্ন ব্যাটারির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিকে নতুন মডেল ইস্যুতে বাধ্য করা হয়েছে। ফলস্বরূপ সেপ্টেম্বরে বিক্রীত স্মার্টফোন ফিরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয় স্যামসাং। কিন্তু হ্যান্ডসেট বদলের পরও গ্যালাক্সি নোট ৭ বিস্ফোরণের খবর আসছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। সমালোচনার মুখে দুই মার্কিন সেলফোন নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠান গ্যালাক্সি নোট ৭ বদল ও বিক্রির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। এটিঅ্যান্ডটি ও টি-মোবাইল নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা যুক্তরাষ্ট্রে আর কোনো ডিভাইস বদলি করবে না। পরবর্তীতে এ হ্যান্ডসেট বিক্রি না করার ঘোষণাও দেয় তারা।
টি-মোবাইলের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট ৭-এর ব্যাটারি বিস্ফোরণের বিষয়টি তদন্ত করছে। এ অবস্থায় টি-মোবাইল সাময়িকভাবে নতুন নোট ৭ বিক্রির কার্যক্রম স্থগিত রাখছে। পাশাপাশি ডিভাইস বদলির কার্যক্রমও বন্ধ রাখা হচ্ছে। একই কথা জানিয়েছে ব্রডব্যান্ড ও নেটওয়ার্কিং প্রতিষ্ঠান এটিআ্যাান্ডটি। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, এখন আমরা আর নোট ৭ বিক্রি বা বদলি করছি না। এ কার্যক্রম বিস্ফোরণ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন তদন্ত নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। গত মাসে দেয়া এক বিবৃতিতে ব্যাটারি বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে উৎপাদন ত্রুটিকে দায়ী করেছে স্যামসাং। কিন্তু গত সপ্তাহে বদলি হওয়া দুটো গ্যালাক্সি নোট ৭ বিস্ফোরণের খবর এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্যামসাং গতকাল জানায়, নতুন করে উন্মোচিত নোট ৭ নিয়ে ক্যারিয়ার ও ভোক্তাদের উদ্বেগ প্রতিষ্ঠান বুঝতে পারছে। যেমন গত মাসের প্রথম দিকে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) কর্তৃপক্ষ উড়োজাহাজে গ্যালাক্সি নোট ৭ ব্যবহার ও চার্জ দেয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানায় যাত্রীদের। এফএএর আগে অস্ট্রেলিয়ার তিনটি এয়ারলাইনস কানতাস এয়ারওয়েজ, জেটস্টার ও ভার্জিন অস্ট্রেলিয়া এমন অনুরোধ জানিয়েছিল।
এ বিষয়ে স্যামসাং বলছে, বিস্ফোরণের কারণ নির্ণয়ে তদন্ত চলছে। শিগগিরই তদন্তের ফল প্রকাশ করা হবে। পণ্যের নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে তদন্ত শেষ হলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কাজ করব ইউএস কনজিউমার প্রডাক্ট সেফটি কমিশনের (সিপিএসসি) সঙ্গে। তবে সিপিএসসি সাম্প্রতিক বিস্ফোরণের বিষয়ে অবগত নয়। প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র স্কট উলফসনের তথ্য অনুযায়ী, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলতে চাই। এর মাধ্যমেই তাদের ফোনের সমস্যা সমাধান করা যাবে।
সার্বিক পরিস্থিতির প্রভাব পড়ছে প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদরেও। শুক্রবার সিউলে স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের শেয়ারের দাম কমেছে দেড় শতাংশ। এদিকে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের খবরে ক্ষুণ্ন হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ইমেজ। রেপুটেশন ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্টসের ব্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি বিশেষজ্ঞ এরিক শিফারের মতে, ইমেজ বাঁচাতে প্রতিষ্ঠানের এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া উচিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভিয়েতনামে প্রচুর পরিমাণে স্মার্টফোন উৎপাদন করছে স্যামসাং। এ স্মার্টফোনের ব্যাটারি সেল তৈরি হয় দক্ষিণ কোরিয়ার চিওনান ও চীনের তিয়ানজিনে। কিন্তু হ্যান্ডসেট নির্মাণ হয় ভিয়েতনামে।