Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মাস্টার্স পড়ুয়া এনামুল রিকশা চালিয়ে মেটাচ্ছেন শিক্ষা ব্যয়

base_1476157846-khulna-pic-01-09-10-16

গ্রামের ছেলে এনামুল হকের জীবনযুদ্ধ শুরু মাত্র সাত বছর বয়সে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র থাকাবস্থায়। এর পর শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি হাল ছাড়েননি। পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। বর্তমানে তিনি খুলনা সরকারি বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স (সম্মান) সম্পন্ন করে মাস্টার্সে পড়ছেন। পাশাপাশি নিজের ছোট ভাইয়ের পড়াশোনা, জটিল রোগে আক্রান্ত মায়ের চিকিত্সা খরচও বহন করতে হচ্ছে তাকেই। খুলনা শহরে রিকশা চালিয়েই তিনি এ ব্যয়ভার বহন করছেন।যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের দিনমজুর মো. ফজলুল রহমানের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে এনামুল বড়। স্ত্রী ও তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে দরিদ্র ফজলুল হকের সংসার চালানোই ছিল দায়। এক্ষেত্রে ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ বহন করা স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু না। কিন্তু শৈশব থেকেই লেখাপড়ার প্রতি ছিল এনামুলের প্রবল আগ্রহ।

chardike-ad

গ্রামের ছেলে এনামুল হকের জীবনযুদ্ধ শুরু মাত্র সাত বছর বয়সে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র থাকাবস্থায়। এর পর শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি হাল ছাড়েননি। পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। বর্তমানে তিনি খুলনা সরকারি বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স (সম্মান) সম্পন্ন করে মাস্টার্সে পড়ছেন। পাশাপাশি নিজের ছোট ভাইয়ের পড়াশোনা, জটিল রোগে আক্রান্ত মায়ের চিকিত্সা খরচও বহন করতে হচ্ছে তাকেই। খুলনা শহরে রিকশা চালিয়েই তিনি এ ব্যয়ভার বহন করছেন।

এনামুল জানান, ২০০৫ সালে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় তিনি রাস্তায় মাটি কাটার কাজ করতেন। সে সময় তার বাবা তাকে সংসারে ব্যয় নির্বাহের জন্যও তাগিদ দেন। এতে অভিমান করে তিনি খুলনা শহরে চলে যান। সেখানে রিকশা চালিয়ে তিনি নিজের খরচ জোগাড় করেন। ২০০৮ সালে মঙ্গলকোট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১০ সালে কেশবপুর শহীদ লে. মাসুদ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি।

২০১১ সালে খুলনা সরকারি বিএল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সে ভর্তি হন তিনি। সে সময় ব্যাংক কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন ও স্কুল শিক্ষিকা শাহনাজ বেগমের সহযোগিতায় রিকশা কেনেন তিনি। এ সময় মঙ্গলকোট ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেনও তাকে সহযোগিতা করেন। ২০১৫ সালে তার অনার্স শেষ হয়। বর্তমানে তিনি একই বিভাগে মাস্টার্স করছেন। তার কলেজ রোল-১৪৮১ বিশ্ববিদ্যালয়ের-৯৭৪৩৮৫৬।

শুধু নিজের পড়াশোনার খরচ নয়; তার ছোট ভাই আশরাফুল আলমের পড়াশোনার খরচও বহন করছেন তিনি। আশরাফুল বর্তমানে একই কলেজের বিবিএ প্রথম বর্ষে অধ্যয়ন করছেন। এদিকে ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এনামুলের মা শিউলী বেগম। তিনি কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এনামুল করিমের অধীনে চিকিত্সাধীন রয়েছেন। শুধু মায়ের চিকিত্সার জন্যই এনামুলকে প্রতি মাসে ব্যয় করতে হয় ৫ হাজার টাকা। লেখাপড়ার শেষ প্রান্তে এসে যাবতীয় এসব ব্যয় বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন এনামুল।

এনামুল হক প্রসঙ্গে সরকারি বিএল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শিকদার মনিরুজ্জামান বলেন, এনামুল খুব পরিশ্রমী ও মেধারী ছাত্র। জন্মের পর থেকেই কষ্ট ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত এসেছে। রিকশা কেনার সময় কলেজের পক্ষ থেকে আমরা তাকে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু এখন তার মায়ের অসুস্থতাসহ যাবতীয় ব্যয় তার একার পক্ষে বহন করা আর সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের পক্ষেও খুব একটা কিছু করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় দরিদ্র এ মেধাবী ছাত্রের পরিবারকে সহযোগিতা করতে সমাজের সচ্ছল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে কলেজে যোগাযোগ করতে পারেন। এমনকি সরাসরি এনামুলের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যেতে পারে। বণিকবার্তা।