Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দক্ষিণ কোরিয়া দেশ ছোট, চোখ ছোট নয়

south-korea

দক্ষিণ কোরিয়া তার জিডিপির প্রায় সাড়ে চার ভাগ অর্থ গবেষণায় ব্যায় করে। দুনিয়ায় আর কোন দেশ, তাদের জিডিপির এতো ভাগ অর্থ গবেষণায় ব্যায় করে না। দেশটির সমতুল্য অর্থ গবেষণায় ব্যায় করে আর একটি মাত্র দেশ। সে দেশটি নাম ইসরাইল। ইসরাইলের গবেষণা নিয়ে আমি আগেই কিছুটা বলেছিলাম। আজ বলি দক্ষিণ কোরিয়া নিয়ে।

chardike-ad

দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু প্রফেসরের (রসায়নের) কাজ, আগে থেকেই আমি ফলো করতাম। তাদের কাজ দেখেই বুঝেছিলাম, তারা কতো উন্নত গবেষণা করে। তবে গভীর ধারণাটা আসে গত প্রায় পাঁচ বছর আগে। একটা আর্ন্তজাতিক রসায়ন সম্মেলনে সেদেশের অনেকগুলো স্টুডেন্টদের সাথে দেখা হয়ে যায়। তাদের কাজ দেখে আমি তাজ্জব বনে যাই। তাদের সাথে কথা বলে, আমার ঘুম ভাঙ্গে। ছেলেগুলোর কাজ, তাদের উদ্ভাবণ শক্তি এবং আন্ডাস্টেডিং থেকে বুঝতে বাকি রইলো না যে, সেখানে গবেষণার একটা শক্ত সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।

গবেষণা হলো একটা সংস্কৃতি। এটা গড়ে উঠতে হয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় এটা গড়ে উঠেছে। এখন শুধু উত্তরোত্তর বাড়ছে। বাঁশগাছের মতো বর্ধিঞ্চু তাদের গবেষণার সফলতা ও খ্যাতি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তোর জাপান তার উগ্র জাতীয়তাবাদ আর যুদ্ধংদেহী মনোভাব ঝেড়ে ফেলে গবেষণায় মেতে উঠেছিলো। আর সে হাওয়া লেগেছিলো চীন এবং কোরিয়াতেও। আমার কাছে সে সময়টাকে পূর্ব এশিয়ার রেঁনেসা মনে হয়। শুধু সত্তরের দশক পরবর্তী সময়ে, দুই ডজন নোবেল পুরস্কার ঘরে তুলেছে জাপান!

দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষণা বিস্তৃত। তারা মহাকাশ নিয়ে কাজ করে। গবেষণা করে ন্যানো মেডিসিন নিয়ে। গবেষণা করে মাইন-ম্যাটেরিয়ালস নিয়ে। মৌলিক গবেষণায় তারা এখন এশিয়াতে চীন-জাপানের সমতুল্য। চারট্টেখানে কথা নয়! তাদের বিশ্ববিদ্যালয় এখন জগৎসেরা। সিউল ন্যাশেনাল ইউনিভার্সিটি এখন দুনিয়ার খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান। সেখান থেকে দলে দলে ছেলে-মেয়েরা এমেরিকা আসছে। কাজ করছে। পোহান, চনবুক, পুসান, চোনাম ইত্যাদি নামে যে ইউনিভার্সিটিগুলো আসে, সেগুলো এখন সাড়া জাগানো প্রতিষ্ঠান।

গত পাঁচ দশকে দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষণা কোথায় চলে গেছে, সেটা জানার জন্য সেদেশের তরুণ এবং গবেষকদের সাথে আপনাকে কথা বলতে হবে। তাদের চিন্তাভাবনা এবং দূরদর্শিতা দেখে থ হয়ে যেতে হয়। আগামী পঞ্চাশ বছরে তারা তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চায়—এমনই বলেছিলেন চনবুকের এক প্রফেসর। গবেষণায় তাদের অস্ত্র একটাই—মেধা! মেধার প্রশ্নে, তাদের জিরো কম্প্রোমাইজ! আর, ছেলে-মেয়েরা সেদেশে কী পরিমাণ কাজ করছে, সেটা অকল্পনীয়।

দক্ষিণ কোরিয়া আয়তনে বাংলাদেশের চেয়ে ছোট। কিন্তু আয়তন দিয়ে কী আসে যায়! দুনিয়ায় টিকে থাকতে হলে চোখটাকে খোলা রাখতে হয়। দেখতে হয়। শিখতে হয়। দেশ ছোট হলে চলে, চোখ ছোট হলে চলে না!

ড: রউফুল আলম, ফিলাডেলফিয়া, যুক্তরাষ্ট্র