বৃহস্পতিবার । ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক রাজনীতি ৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২২ অপরাহ্ন
শেয়ার

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকার

নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে সরকার গঠন করবে, দৃঢ় বিশ্বাস তারেক রহমানের


Tareque Rahman

ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে এককভাবে সরকার গঠন করবেন বলে দৃঢ় বিশ্বাস প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানিয়েছেন।

লন্ডনে প্রায় ১৭ বছর পরিবার নিয়ে বসবাস করা তারেক রহমান জানিয়েছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য তিনি দেশে ফিরবেন। তিনি বলেন, “আমি মনে করি, আমার বাংলাদেশে ফেরার সময় খুব সন্নিকটে।”

তারেক রহমান আরও মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশে একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সম্পূর্ণ হবে না। তিনি বলেন, “আমরা আত্মবিশ্বাসী যে আমরা জয়ী হবো। আমরা জোরালোভাবে বিশ্বাস করি যে এককভাবে সরকার গঠনের অবস্থায় আমরা রয়েছি।”

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে দলই পরবর্তী সরকার গঠন করুক, তাদের দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি সামলাতে হবে। তৈরি পোশাক খাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক এবং প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনমন গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

জনমত জরিপে বিএনপি এগিয়ে থাকায় ফেব্রুয়ারির ভোটের পর তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনায় নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিস্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তারেক রহমানও সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্যের প্রতিধ্বনি দিয়েছেন এবং বলেন, “বিএনপি অন্যান্য দলকে নিয়ে সরকার গঠনে প্রস্তুত। গত বছর অভ্যুত্থানে সামনের কাতারে থাকা ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি নতুন দলও রয়েছে, আমরা তাদের রাজনীতিতে স্বাগত জানাই। তারা তরুণ, তাদের একটা ভবিষ্যৎ আছে।”

তারেক রহমান দেশের অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করার জন্য নতুন কর্মসূচির দিকও তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে রয়েছে আমাজন, ইবে ও আলিবাবার মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশকে ‘সরবরাহ কেন্দ্র’ হিসেবে তৈরি করার পরিকল্পনা।

পররাষ্ট্রনীতিতে তিনি ভারতকে নিয়ে বলেন, “সব কিছুর আগে বাংলাদেশ” নীতি অনুসরণ করবেন। তিনি বলেন, “ঐতিহাসিকভাবে শেখ হাসিনাকে সমর্থন জুগিয়ে আসা ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক একপক্ষীয় ছিল, সেটা আমরা নতুন করে স্থাপন করবো।”

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের পারিবারিক রেষারেষির ইতিহাসও তুলে ধরা হয়েছে। শেখ হাসিনা স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা ও দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। ১৯৭৫ সালে একদল সেনা সদস্যের হাতে তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য নিহত হয়েছিলেন। অন্যদিকে, তারেক রহমানের বাবা জিয়াউর রহমানও সাবেক রাষ্ট্রপতি ছিলেন।

২০০৮ সাল থেকে নির্বাসনে থাকা ৫৯ বছর বয়সী তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলা চলেছে। তিনি এসব মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন। নতুন সরকার প্রতিহিংসার বৃত্ত ভাঙবে এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরতে দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া তারেক রহমান বলেন, “যদি তারা অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে তারা কিভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে?”

তিনি আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নির্বাচিত হলে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশাসনের মতো বিএনপি সরকার শত শত কোটি ডলার উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। তবে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের নোটে বলা হয়েছে, বিএনপি সর্বশেষ ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সূচকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।