Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বুড়োদের দেশ হয়ে যাচ্ছে জাপান

henohara-japani-doctorবিফলে যাচ্ছে সকল চেষ্টা। মিডিয়ার প্রচার এবং অনেক প্রণোদনা সত্ত্বেও সমস্যা সমাধানের কোনো লক্ষণ নেই। অদূর ভবিষ্যতে জনসংখ্যা বাড়ার কোনো সম্ভাবনা তো নাইই, উপরন্তু কেবলই কমছে জাপানের জনসংখ্যা। বুড়োদের সংখ্যা অস্বাভাবিকহারে বেড়ে যাওয়া এবং ক্রমাবনতিশীল জন্মহারের কারণে ভয়াবহ জনসংখ্যাগত সমস্যা মোকাবিলা করছে দেশটি। পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ যে, এখন থেকে দুই দশক পর সেখানে প্রতি চার জন জ্যেষ্ঠ নাগরিকের বিপরীতে ১৫ বছরের কম বয়সি লোকের সংখ্যা দাঁড়াবে এক জনে। অর্থাত্ শিশুকিশোররা হয়ে যাবে একপ্রকার ‘অমাবস্যার চাঁদ’। আরো বিস্ময় জাগানো তথ্য হলো—সংখ্যার প্রশ্নে প্রাপ্তবয়স্কদের ডায়াপার বিক্রি শিশুদের জন্যে ন্যাপি বিক্রির মোট পরিমাণকে ছাড়িয়ে গেছে! গত বছর জাপানের সার্বিক জনসংখ্যা সিকিমিলিয়ন কমে নেমে আসে ১২৭.৮ মিলিয়নে। ২০৬০ সাল নাগাদ আরো এক-তৃতীয়াংশ কমে দাঁড়াবে মাত্র ৮৭ মিলিয়ন। আর তখন ৪০ শতাংশেরও বেশি লোকের বয়স থাকবে ৬৫ বছরের বেশি।

অস্বাভাবিকহারে জনসংখ্যা কমে যাওয়াতে নানাবিধ সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে জাপানে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে ‘কদোকুশি’ বা একাকী মৃত্যু। ১৯৮০-এর দশকেই মূলত এ সমস্যার সূত্রপাত। ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকায় এখন তা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে চার মিলিয়ন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পুরোপুরিভাবেই একা বসবাস করে। যারা ছেলেমেয়ে কিংবা অন্য কোনো আত্মীয়ের সঙ্গে থাকে, তারাও একপ্রকার নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করে। ব্যাপারটা শুনতে খারাপ শোনা যায়, তবুও বলা, জাপানের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের টানতে টানতেই ক্লান্ত। বর্ধিষ্ণু পেনশনভোগীদের সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করার জন্য তাদেরকে মূল্য দিতে হচ্ছে যথেষ্ট। এ অবস্থায় জাপান সরকার ভোগ কর ৫ শতাংশ বৃদ্ধি এবং অবসরের বয়স ৭০-এ নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে। উদ্দেশ্য, সামাজিক নিরাপত্তা ও পেনশন পদ্ধতির ওপর চাপ কমানো।

chardike-ad

বিশ্লেষকরা অনেক দিন ধরেই বলাবলি করছেন, শ্রমশক্তির ঘাটতি পূরণে অভিবাসীদের ব্যাপকহারে স্বাগত জানানো ছাড়া আর কোনো রাস্তা খোলা নেই। নইলে খুব শিগগিরই উন্নয়নের চাকা পেছনের দিতে ঘোরা শুরু করতে পারে। অবশ্য বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াটা কিছু লোকের জন্য পোয়াবারো। কয়েকটি কোম্পানি তাদেরকে সচল রাখার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, যারা বয়সের ভারে একেবারেই হাঁটতে পারে না, তাদের জন্য চালু করা হয়েছে রোবোটিক লেগ। এ মুহূর্তে জাপানই পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যাদের ৩০ শতাংশ লোকের বয়স ৬০ বছরের ওপরে। ২০৫০ সাল নাগাদ এ তালিকায় বিশ্বের আরো ৬০টি দেশ যুক্ত হবে। তবে পৃথিবীর বৃদ্ধদের ৪৭ শতাংশ আর বৃদ্ধাদের ২৪ শতাংশ এখন পর্যন্ত শ্রমশক্তিতে যুক্ত রয়েছেন। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনে। যে ৩৩টি দেশে মানুষের গড়আয়ু ৮০রও উপরে, জাপান তার মধ্যে একটি। ২০৬০ সাল নাগাদ জাপানি মহিলাদের গড়আয়ু বেড়ে দাঁড়াবে ৯০-এরও বেশি। চিকিত্সার প্রভূত উন্নতি, জন্মহার অত্যন্ত কমে যাওয়া এবং খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপক পরিবর্তনের ফলেই জাপানের সামনে এমন দিন অপেক্ষা করছে। একের অধিক সন্তান নেওয়ার ব্যাপারে তাদের মধ্যে কাজ করে প্রবল অনীহা।

তবে কম জনসংখ্যা থাকায় সহজেই হাল ছেড়ে দেওয়ার দেশ জাপান নয়। ইউরোপ ও আমেরিকার মতো সস্তা শ্রম গ্রহণে তারা অনিচ্ছুক এবং জাতীয়তাবোধ প্রবল। বৃদ্ধদেরও সক্রিয় রাখতে উদ্ভাবন করেছে ‘ইনটেলিজেন্ট’ হুইলচেয়ার। এটি প্রতিবন্ধকতা এড়াতে পারে খুব সহজেই। এখানেই শেষ নয়, বৃদ্ধদের সুযোগসুবিধা ও শ্রম নিশ্চিত উদ্ভাবিত হয়েছে বিশেষ রোবট। জাপান তরুণ শ্রমিকদের ঘাটতি মোকাবিলা করছে সত্য; কিন্তু সেখানে রয়েছে শিল্প রোবটের প্রাচুর্য। ২০০৩ সালে সারা পৃথিবীতে মোট শিল্প রোবট ছিল ৮ লাখ ১ হাজার। এর ৪৪ শতাংশই ছিল জাপানে। এবার বয়স্ক ও শারীরিকভাবে পঙ্গুদের সাহায্যার্থে ‘পুনর্বাসন রোবট’ তৈরি করছে। এখন পর্যন্ত এর দাম অনেক বেশি হলেও ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বিশ-ত্রিশ বছরের মধ্যে এটি সস্তাতেই পাওয়া যাবে। এই রোবট স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টিও খেয়াল রাখতে পারে। মোদ্দাকথা, জাপানের প্রযুক্তিবিদরা অশীতিপর লোকদেরকেও অসহায় ও অক্ষম দেখতে নারাজ। অন্যের দয়ায় রাষ্ট্রের প্রবীণ নাগরিকদের বেঁচে থাকাটা তাদের কাম্য নয়।