Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

‘ইসলামের পুরো ব্যাপারই আমাকে মুগ্ধ করেছে’

muslim-women
ফাইল ছবি

ক্যারোল বোটসের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকার এক খ্রিস্টান পরিবারে। তিনি খ্রিস্টান সমাজব্যবস্থার মধ্যে বড় হয়েছেন। ক্যারোল বোটস ক্যাথলিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় অন্য সাদা চামড়ার খ্রিস্টান মেয়েরা যে স্বাধীন জীবনযাপনে অভ্যস্ত, ক্যারোলও সেভাবেই বেড়ে ওঠেন। তবে সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে জানার জন্য তাঁর মনে তীব্র বাসনা ছিল। তিনি এই দুনিয়ায় তাঁর জীবন সম্পর্কে ভাবতেন। বিধাতার সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নিয়েও তিনি ভাবতেন। স্কুলে পড়ার সময় তিনি খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতাদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন ড. ইকবাল কবীর মোহন

ক্যারোল বোটস বিশ্বাস করতেন, মানুষের জীবন অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ ও তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু এ বিষয়ে জানার বা বোঝার কোনো সুযোগ তিনি পাননি। তবে ধর্ম সম্পর্কে তাঁর আগ্রহ ছিল প্রবল। তিনি বিভিন্ন ধর্ম যেমন, বৌদ্ধ ধর্মমত ও হিন্দু ধর্মমত সম্পর্কে পড়াশোনা করেন। সৌভাগ্যক্রমে তিনি ইসলাম সম্পর্কেও অবগত হওয়ার সুযোগ লাভ করেন।

ইসলামকে বোটসের কাছে আধুনিক ধর্মমত বলে মনে হয়েছে। ইসলামের যে বিষয়টি তাঁর হৃদয়কে স্পর্শ করে তা হলো অসত্যের সঙ্গে ইসলামের আপসহীন অবস্থান। তাঁর মনে হয়েছে ইসলাম সব ধরনের কুসংস্কার ও অনৈতিকতা থেকে মুক্ত। তিনি হঠাৎ করেই ইসলাম কবুল করেননি। ইসলাম গ্রহণ করার জন্য তিনি এক বছরের বেশি সময় নেন। এর আগে নিশ্চিত হন যে ইসলাম সর্বশেষ একটি ধর্মমত কি না এবং মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী কি না।

ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে বোটসের দুই ধরনের মত ছিল। খ্রিস্টান হিসেবে তিনি মনে করতেন, ঈশ্বর বা বিধাতা খুবই নরম প্রকৃতির, কোমল বা সদয়। ঈশ্বর এমন এক সত্তা যার কোনো চাহিদা নেই। ঈশ্বর মানুষকে যা ইচ্ছা তা করার সুযোগ দেন এবং মানুষ আবার তাঁর কাছে ফিরে যাবে সে প্রত্যাশা করেন বিধাতা। তিনি এ মতের সঙ্গে একমত ছিলেন না। ইসলামের সঙ্গে বোটসের সম্পৃক্ততা যত বাড়তে থাকে, ততই তিনি আস্থা ফিরে পান। আল্লাহকে তাঁর কাছে খুবই শক্তিশালী বলে মনে হয়। আল্লাহ মানুষের কাছে শৃঙ্খলা চান। তাঁর মতে, আল্লাহই হচ্ছেন প্রকৃত বিধাতা। আল্লাহ মানুষের কাজের জন্য তাকেই দায়ী করেছেন। আর আল্লাহ তাআলা সেভাবেই মানুষকে পুরস্কার দেবেন এবং শাস্তি প্রদান করবেন।

বোটস বলেন, মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী পড়ে তিনি খুব অভিভূত হয়েছেন। কেননা তিনি মহানবী (সা.)-এর আদর্শকে উত্তম এবং পূর্ণাঙ্গ বলে দেখতে পেয়েছেন। তিনি লক্ষ করেছেন, মহানবী (সা.)-এর অনুসারীরা নবীকে গভীরভাবে ভালোবাসেন। তাঁর জন্য ভক্তরা জীবন পর্যন্ত বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত ছিলেন। তিনি মুহাম্মদ (সা.) এবং যিশুর মধ্যে একটি তুলনা করেন। বাইবেলের মতে, যিশুর অনুসারীরা ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার পর তাঁকে ত্যাগ করেন। কিন্তু মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসারীরা তা করেননি। এই দুজন নবীর মধ্যে তুলনা করতে গিয়ে বোটস মুহাম্মদ (সা.)-কে শেষ নবী বলেছেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মিশন ছিল শাশ্বত, যা সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রযোজ্য। তাঁর মতে, মুহাম্মদ (সা.)-এর আনীত জীবনব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ। তিনি তাঁর জীবন কুরআনের নির্দেশিকা মতো যাপন করে দেখিয়েছেন। অন্যদিকে যিশুর জীবন ছিল অপূর্ণাঙ্গ। মহানবী (সা.) পৃথিবীর জীবন পরিচালনা করা এবং এখানে কার্য সম্পাদনের যে পথ দেখিয়েছেন যিশু তা দেখাননি।

পবিত্র কোরআন বোটসের জীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। তাঁর মতে, কোরআন অত্যন্ত বিশুদ্ধ এবং আল্লাহ তাআলার অপরিবর্তনীয় বাণীতে সমৃদ্ধ। এটি মানুষের দ্বারা কোনোক্রমেই দূষিত বা পরিবর্তিত হয়নি।

বোটস বলেন, ‘ইসলামের কোনো নির্দিষ্ট বিষয় আমাকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করেনি। ইসলামের পুরো ব্যাপারই আমাকে মুগ্ধ করেছে এবং আমার মধ্যে অনুকূল প্রভাব ফেলেছে। ফলে আমি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছি যে ইসলামের মতো এত সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন কোনো ধর্ম পৃথিবীতে আর নেই।’

ক্যারোল বোটসের মতে, ‘ইসলামের পথে ফিরে আসা এমন কারো পক্ষে একটি অনৈসলামী পরিবেশে ইসলামকে সফলভাবে চর্চা করা খুব কঠিন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার ভাগ্য ভালো যে আমার বিয়ে হয়েছিল একজন ভালো মুসলিম পরিবারে। ইসলাম ছিল সে পরিবারের সদস্যদের হৃদয়ে প্রোথিত। তাঁরা ছিলেন সুশৃঙ্খল ও অনুগত মুসলিম। তাঁরা তা-ই পালন করতেন যা তাঁরা প্রচার করতেন। ইসলামী জীবনযাপন করতে গিয়ে বর্তমানে ইসলাম সম্পর্কে আমার জ্ঞান অনেকটা সমৃদ্ধ হয়েছে। আমার এখন মনে হয় আমার জীবন একটা আশীর্বাদস্বরূপ।’

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email