বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১৯৭১ সালের পর এ দেশের মানুষ ভারতে কেন যাবে? তারা আমাদের চেয়ে অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত নয়। তাদের ১০ লাখ মানুষ আমাদের দেশে কাজ করে। ভারতের বৈদেশিক আয়ের দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ।
এ সরকার বিদেশিদের পদলেহন করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকার জন্য তারা দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে। তারা জনগণের নয়, নিজেদের স্বার্থে কাজ করছে।
বিদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর সঙ্গে নিজেদের স্বার্থ ঠিক রাখতে হবে। আমাদের স্বার্থ বাদ দিয়ে অন্যের স্বার্থ চরিতার্থ করা যাবে না। আমরা তিস্তার পানি পাই না, সীমান্তে আমাদের দেশের মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। কিন্তু এর বিচার হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে নরসিংদীতে এক স্মরণসভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের বাবা ও দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মরহুম আবদুল মোমেন খানের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ স্মারণসভার আয়োজন করা হয়।
খালেদা জিয়া মুক্ত না হলে গণতন্ত্র মুক্ত হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সরকার তাকে (খালেদা জিয়া) ভয় পায়। তিনি কারাগারের বাইরে থাকলে আওয়ামী লীগ এসব অন্যায়-লুটপাট করতে পারতো না।
বিএনপিকে মুক্তিযোদ্ধাদের দল উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার বানাচ্ছে। তারা যে মুক্তিযুদ্ধের সরকার সরকার করে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ই তো বানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাও স্বাধীনতার ঘোষক।
তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে গণতন্ত্র। দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। সেই চেতনাকে নিয়ে আমরা লড়াই করছি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করলে এদেশে গণতন্ত্র মুক্ত হবে না। কারণ গণতন্ত্র এবং খালেদা জিয়া অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি সেই ব্যক্তি, সেই নেত্রী, যিনি সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম, লড়াই করেছেন।
বর্তমান সরকারকে অবৈধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিজয় অবশ্যই হবে, বাংলাদেশের মানুষ কখনও কোনো আন্দোলনে পরাজিত হয়নি। আজকে আমরা ন্যায়ের পথে আছি, সত্যের পক্ষে আছি, তাই বিজয় অবশ্যম্ভাবী। আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয়ার জন্য বর্তমান সরকারকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় সময় পাবেন না।
মোমেন খান প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, তিনি শুধু নরসিংদীর জন্য নয়, সারা দেশের জন্য কাজ করে গেছেন। আমাদের সবাইকে তার পথ অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে হবে।
এ সময় প্রধান আলোচক জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রব বলেন, এ সরকার স্বৈরাচারী সরকার। একে হটাতে হলে দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গণআন্দোলন তৈরি করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার বার বার আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। ১৯৭৩ সালে এই নরসিংদীতেই আমার মিছিলে নির্বিচারে গুলি করে তিনজনকে হত্যা করে। এ ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে।
আবদুল মোমেন খান স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে নরসিংদী সিঅ্যান্ডবি রোডের বধূয়া কমিউনিটি সেন্টারে স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
আরও বক্তব্য রাখেন জেএসডির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান রতন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) জয়নাল আবেদিন, বিএনপির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন বকুল, সাবেক ছাত্রনেতা ফেরদৌস আহমেদ খোকন, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন মিন্টু, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সুলতান উদ্দিন মোল্লা, সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুর এলাহী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন ভূইয়া ইরান, জামাল আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।