Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আংটির কারণে প্রাণ গেল প্রবাসী যুবকের

ringএকটি আংটির কারণে প্রাণ গেল প্রবাসী যুবকের। মা হারালেন তার ছেলেকে। আর বিয়ের ৪ দিনের মাথায় নববধূ হারাল তার স্বামী। প্রবাসী ওই যুবকের নাম আল-আমিন (২৬)।

ভৈরবের শিবপুর ইউনিয়নের রঘূনাথপুর গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে তিনি। বাবা পেশায় পিকআপ চালক। দুই ভাই, দুই বোন আর মা-বাবাকে নিয়ে ছয় সদস্যের পরিবার তারা।

chardike-ad

শ্বশুরবাড়ি থেকে একটি স্বর্ণের আংটি না দেয়ায় নববধূ মারুফা বেগমকে তার শ্বাশুড়ি কটুকথা, বকাঝকাসহ মাঝে মাঝেই লজ্জা দিতো। এ বিষয়ে আল-আমিন তার মাকে বার বার বুঝিয়েও শান্ত করতে পারছিলেনা। এক পর্যায়ে মায়ের সঙ্গে রাগ করে গত ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে স্ত্রীর ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। গতকাল বুধবার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার সকালে তার নামাজে জানাজার পর স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এর আগে গত ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার আল-আমিনের সঙ্গে একই এলাকার কৃষ্ণনগর গ্রামের ফুল মিয়া মেম্বারের মেয়ে মারুফা বেগমের বিয়ে হয়। আল-আমিন কুয়েত প্রবাসী। ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেম করে তারা বিয়ে করে। গত ১০ দিন আগে তিনি কুয়েত থেকে দেশে আসেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দরিদ্র পরিবারের সন্তান আল-আমিন ৮ বছর আগে প্রবাসে পাড়ি জমান। দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার পর তার পরিবারে কিছুটা স্বচ্ছলতা ফিরে আসে। প্রবাসে থেকে গত বছর ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয় এলাকার মারুফা বেগমের (১৯) সঙ্গে। এরপর দু’জনের প্রেম ভালোবাসা জমে উঠে মোবাইলে। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেয় তারা বিয়ে করবে।

কথা অনুযায়ী গত ১৪ ডিসেম্বর কুয়েত থেকে দেশে এসে মা-বাবাকে প্রেমের বিষয়টি অবগত করেন আল-আমিন। তারপর মারুফার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিয়ের তারিখ নির্ধারণ হয় গত ২০ ডিসেম্বর। যথারীতি তাদের বিয়েও হয়। এদিন বিয়ের পর কনেকে নিয়ে আসার সময় বর তার শ্বশুর-শাশুড়িকে সালাম করার সময় তারা তারা জামাইকে সালামি বাবদ টাকা দেয় জামাইকে। কিন্ত গ্রামের প্রথা অনুযায়ী জামাইকে স্বর্ণের আংটি নাকি দিতে হয়! কিন্তু মারুফার দরিদ্র বাবা-মা জামাইকে টাকার অভাবে আংটি দিতে পারেনি। তবে কথা ছিল পরে আংটি দেয়া হবে। তবে আল-আমিনের কোনো চাওয়া ছিল না।

কিন্তু বউ নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পর বিপাকে পড়েন আল-আমিন। তার মা মর্জিনা বেগম জানতে পারেন ছেলেকে আংটি দেয়া হয়নি। এরপর থেকে তিনি পুত্রবধূকে কটুকথা ও লজ্জা দেয়াসহ বকাঝকা করতে থাকে। এভাবে তিনদিন চলে যায়। ছেলে মাকে বুঝিয়েও কটু কথা থেকে শান্ত করতে পারছিলেন না।

আত্মহত্যার আগের দিন সোমবার আল-আমিন তার মাকে বলেছিলেন আংটি না দেয়ায় মারুফার কি দোষ? তার বাবা দরিদ্র বলেই আংটি দিতে পারেনি। বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও মা বিরত হচ্ছিলেন না। পরদিন মঙ্গলবার সকালে স্ত্রী ওড়না গলায় দিয়ে আত্মহত্যা করেন আল- আমিন।

স্বামীর এমন মৃত্যুতে হতবাক মারুফা বলেন, বিয়ের পর থেকে শাশুড়ি আংটির জন্য আমাকে কটুকথা, লজ্জা দেয়াসহ বকাঝকা করেছে। তিনি সারাক্ষণ আমাকে গালিগালাজ করতেন। আমার স্বামী বলেছিল গোপনে একটি আংটি কিনে আমার মাকে দিয়ে তাকে দিতে। যাতে আর কটুকথা না বলে তার মা। কিন্ত এর আগেই সে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল। তার মায়ের কারণেই সে আত্মহত্যা করেছে।

ভৈরব থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) বাহালুল খাঁন বাহার জানান, আত্মহত্যার ঘটনায় আল-আমিনের পরিবার থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছে। আংটির বিষয়টি পুলিশ বলতে পারবে না। তবে তার স্ত্রী এমন অভিযোগ করলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।