Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
নিজের টাকায় পড়তে আসবেন?
আমি একেবারেই নিজের টাকায় কোরিয়াতে এসে পড়ার পক্ষপাতী না। কারণ কোরিয়াতে টিউশন ফি অনেক বেশি, সেই সাথে আপনার থাকা খাওয়ার খরচও অনেক বেশি। আমি জেনারেল একটা হিসাব দিচ্ছি, এখানে টিউশন ফিস প্রতি সেমিস্টারে ৩৫ থেকে ৬০ লাখ উওন বা টাকায় ২ লাখ ৮০ থেকে ৫ লাখ টাকার মত। আর থাকা খাওয়ার বাবদ মাসে ৫ থেকে ৭ লাখ উওন। যদি আমি কম করে হিসাব করি তাহলে দাঁড়ায়, ৩লাখ x ৮ সেমিস্টার= ২৪ লাখ টাকা ৪ বছরে। আর থাকা খাওয়া , ৩৫ হাজার x ৪৮ মাস= ১৭ লাখ টাকা(প্রায়)। তাহলে মোট হিসাব দাঁড়ায়, ২৪+১৭= ৪১ লাখ টাকা।
আপনি যদি চিন্তা করে থাকেন পার্টটাইম জব করে নিজের খরচ নিজেই বহন করবেন, তাহলে তার একটা হিসাব দেওয়া যাক। প্রথমেই বলে রাখি কোরিয়ান ভাষা জানা না থাকলে আপনি পার্ট-টাইম জব পাবেন না। আগে অনেকেই ফ্যাক্টরিতে ভারী কাজ করতো যদিও স্টুডেন্টদের জন্য এই কাজ নিষেধ ছিল। গত মাস থেকে আইন করা হয়েছে স্টুডেন্টরা ফ্যাক্টরিতে কাজ করলে তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। অন্য দিকে প্রথম ৬ মাসের কাজের কোন অনুমোদন নাই। ধরে নিলাম আপনি কাজ পেয়ে গেছেন আসার পরদিন থেকে যদিও আকাশ কুসুম কল্পনা। তারপরও ধরে নিলাম পেয়ে গেছেন। আপনার সপ্তাহে ৫ দিন ক্লাস থাকবে, মাত্র দুইদিন ফ্রি থাকবেন সেমিস্টার চলাকালীন সময়ে। যদি আপনি সেই দুইদিন কাজ করেন তাহলে মাসে ৮ দিন ফ্রি থাকবেন। ৪৮ মাসের মধ্যে আপনার ছুটি থাকবে ১৬ মাস আর সেমিস্টার চলবে ৩২ মাস। তাহলে হিসাব করা যাক সেমিস্টার চলাকালীন আর ভ্যাকেশন টাইমে আপানার পার্ট-টাইমের ইনকাম। ৩২ মাস x ৮= ৮৯,৬০০০ টাকার অনুমানিক। আর ভেকেশন টাইমে আপনার ইনকাম ১,২৮,০০০০ লাখ টাকা অনুমানিক। তাহলে আপনার মোট আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ২১ লাখ ৭৬০০০টাকা এর মত কিন্ত আপনার ৪ বছরের মোট খরছের জন্য ২০ লাখ টাকার মত ঘাটতি থেকে যায়। এই টাকাটা আপনাকে দেশ থেকে আনতে হবে। এখানে আপনি আসার সাথে সাথে কাজ পাবেন না, ভাষা জানা থাকলেও সবসময় কিন্তু আপনি কাজ পাবেন না। এবং আপনি যদি এর মধ্যে দেশে বা অন্য কোন দেশে ঘুরতে যান তাহলে ইনকামের যে হিসাব দিয়েছি সেটা আরো কমবে। ক্লাসের দিনগুলোতে যদি আপনি কাজ করতে চান তাহলে আসলে পড়াশোনা করা খুবই কঠিন। ক্লাস লেকচারে মনোযোগী হওয়া, প্রেজেন্টেশনসহ ক্লাস, বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতিসহ পড়াশোনার কথা চিন্তা করলে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া ক্লাসের দিনগুলোতে কাজ করার চিন্তাই করা যায় না।
উপরের হিসাব থেকে আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নিজের খরচে আপনি কোরিয়ায় আসবেন কিনা। আমি বলবো নিজের খরচে আসার কথা মাথায় না আনতে। কোরিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য যারা আসতে চান তাদের স্বাগতম। তবে অবশ্যই স্কলারশীপ নিয়ে আসবেন। আপনাদের জন্য শুভ কামনা রইলো।
শেষ করার আগে আরেকটি ব্যাপার উল্লেখ না করলেই নয়। বর্তমানে বিদেশে যাবার প্রবনতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে এবং প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ পাড়ি জমাচ্ছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, কেউ কাজের খোঁজে কেউ উচ্চ শিক্ষার জন্য। দক্ষিণ কোরিয়াতেও আগের তুলনায় অনেক ছাত্রছাত্রী আসছে বা আসার জন্য চিন্তা করছে। কিন্তু অনেকেই সঠিক তথ্য না জানার জন্য প্রতারিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কোরিয়ায় কোন রিক্রুটিং এজেন্সীর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানো হয়না। নিজেরদেরকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করে আবেদন করতে হয়। যদিও কিছু এজেন্সি লোভনীয় অফারের কথা বলে একেবারেই পিছনের সারির কিছু ইউনিভার্সিটিতে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ভর্তি করাচ্ছে। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।
লেখক- আল জাবের ফয়সাল
হানগুক ইউনিভার্সিটি অফ ফরেন স্টাডিজ, সিউল, দক্ষিণ কোরয়া।
যোগাযোগ- faisalaljaber7@gmail.com