Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

eps-workerদক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী পাঠানোর কোটা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। চলতি বছর দেশটিতে কর্মী পাঠানোর কোটা ছিল ১০ হাজার। গত ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চার হাজার ৬১৪ জন কর্মী পাঠাতে পেরেছে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত অর্ধেকের বেশি, অর্থাৎ পাঁচ হাজার ৩৮৬ জন কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। এই সংস্থার মাধ্যমে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী পাঠানো হয়।

chardike-ad

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘কোটার তুলনায় কর্মীর সংখ্যা কম হওয়ার পেছনে দক্ষিণ কোরিয়ার কম্পানিগুলোর চাহিদা মূলত দায়ী। সে দেশের রপ্তানি খাতের কাজ অনেক কমে গেছে।

এই খাতে কাজ করা কম্পানিগুলো বেশি কর্মীর চাহিদা দিয়ে থাকে। এসব কম্পানির চাহিদা কম থাকায় আমাদের দেশ থেকে কর্মীও কম গেছে।’ অনেক কর্মীর কম্পানি বদলেও এই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে জানান দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা।

দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় উৎপাদন ও জাহাজ নির্মাণ খাতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া হয়। এই খাতগুলোতে দক্ষ কর্মী নেয় দক্ষিণ কোরিয়া। সেখানে গিয়ে অনেক কর্মী দুই-তিন মাস পর কম্পানি বদল করেন, যা নিয়োগকর্তাদের জন্য বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য অন্য দেশের কর্মী নিয়ে আসে। এখানে বড় ধরনের বিনিয়োগও থাকে।

একই কথা বলেন বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মল্লিক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘অনেক কর্মী সেখানে গিয়ে এক কম্পানি থেকে আরেক কম্পানিতে চলে যান। এ বিষয়টি কোরিয়ার কম্পানিগুলো পছন্দ করে না। তারা যথেষ্ট সুশৃঙ্খল জাতি। বিষয়টি জানার পর আমরা দূতাবাসের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছি। এরপর কর্মী আর যাননি। আমাদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ছিল যে কেউ নিয়োগদাতা কম্পানি থেকে চলে গেলে তাঁর জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হবে। তবে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে যেসব কম্পানি থেকে কর্মীরা চলে যান, তারা দ্বিতীয়বার বাংলাদেশ থেকে আর কর্মী নেয়নি।’

কর্মীরা যা বলছেনঃ ঢাকার সাভারের মিরাজ ফকরুল চার বছর ধরে দক্ষিণ কোরিয়া থাকেন। কাজ করেন ইস্পাত কারখানায়। বাংলাদেশি কর্মীদের কম্পানি বদলের বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন। মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক কম্পানি বেসিক বেতনে কাজ করাতে চায়। কিন্তু অনেক কর্মী এভাবে কাজ করতে চায় না। সে যখন দেখে যে বাংলাদেশি কোনো কর্মী অন্য কম্পানিতে বেসিকের বাইরে ওভারটাইম করে বাড়তি আয় করছে, তখন সে-ও আর বেসিক নিয়ে পড়ে থাকতে চায় না। সুযোগমতো অন্য কম্পানিতে চলে যায়।’

মিরাজ বলেন, ‘আরেকটি সমস্যা হচ্ছে যে অনেক কম্পানিতে তাদের নিজ ব্যবস্থাপনায় খাবার দেওয়া হয়। এর মধ্যে কোনো কোনা কম্পানির খাবার কর্মীরা খেতে পারে না। তখন কর্মীরা কম্পানি বদল করে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশি আরেক কর্মী মোবাইল ফোনে বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ায় কম্পানি বদলের নিয়ম আছে। শুধু আমরা নই, অন্যান্য দেশের কর্মীরাও কম্পানি বদলায়। তবে বোয়েসেল যে এক লাখ টাকার জামানত নিয়ে থাকে, কম্পানি বদল করলে এখন তা বাজেয়াপ্ত করে। এটি আমাদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মীরা সমস্যায় না পড়লে কখনো কম্পানি বদলায় না।’

বেসরকারি খাতেও যাচ্ছে না কর্মীঃ সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় সাড়ে চার হাজার কর্মী গেলেও বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে কর্মী গেছে খুব সামান্য।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত নভেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো মাত্র ৩৪০ জন কর্মী দক্ষিণ কোরিয়া পাঠিয়েছে।

রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মালিকরা বলছেন, সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির বাইরে বেসরকারি রিত্রুদ্ধটিং এজেন্সিগুলোকে সেভাবে অনুমোদন দেয় না দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস। এতে তাঁরা সেভাবে কর্মী পাঠাতে পারেন না।

দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বেসরকারি খাতে কর্মী পাঠানো বাড়লে বাড়তি টাকা নিয়ে ভিসা বাণিজ্য শুরু হয়ে যেতে পারে। কেউ কেউ প্রতারণা করার সুযোগও নিতে পারে। এতে এই শ্রমবাজারে এক ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে কাউকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দিচ্ছে না দূতাবাস।

নতুন কোটা অনুমোদনঃ দক্ষিণ কোরিয়া প্রতিবছর বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশের কর্মী নিয়ে থাকে। বছর শেষে দেশটি পরের বছরের জন্য কোটা অনুমোদন করে। এরপর নতুন বছরের শুরুতে এই কোটা ১৬টি দেশের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি দেশটি ২০২৪ সালে ১৬টি দেশ থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার কর্মী নেওয়ার কোটা অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে উৎপাদনশিল্প খাতে ৯৫ হাজার, কৃষি খাতে ১৬ হাজার, সেবা খাতে ১৩ হাজার, মত্স্য খাতে ১০ হাজার, নির্মাণশিল্প খাতে ছয় হাজার, জাহাজশিল্প খাতে পাঁচ হাজার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাতে ২০ হাজার কর্মী নেওয়ার কথা জানিয়েছে দেশটি।

এই খাতগুলোর মধ্যে উৎপাদনশিল্প ও জাহাজশিল্প খাতে ১২ হাজার থেকে ১৪ হাজার কর্মী পাঠানোর চাহিদা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মল্লিক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আশা করছি, সামনের বছর ১২ থেকে ১৪ হাজার কোটা পাব। নতুন আরো কিছু সুযোগ আসছে।’