সাজেকে আগুনে পুড়ল রিসোর্ট-কটেজসহ ৯৫ স্থাপনা

 

chardike-ad

মেঘ-পাহাড়ের উপত্যকা রাঙামাটি বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালি পর্যটন কেন্দ্রে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ৯৫টি স্থাপনা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সাময়িকভাবে সেখানে পর্যটকদের যাতায়াত বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

এর আগে, গতকাল সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সোয়া ১টার দিকে সাজেক ভ্যালি পর্যটন কেন্দ্রের অবকাশ ম্যানুয়েল রিসোর্টসহ আশেপাশের এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

সোমবার রাতে জেলা প্রশাসনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুপুর সোয়া ১টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং তা মুহূর্তেই আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পর স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা শুরু করেন। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে প্রায় ৯৫টি রিসোর্ট, ঘরবাড়ি ও স্থাপনা পুড়ে ছাই গেছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে, সাজেক ভ্যালিতে আগুনের ঘটনায় খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটের সঙ্গে খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটও কাজ করেছে। তবে বিকেলে সাজেকের আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমানবাহিনীর ২টি হেলিকপ্টার আসার কথা থাকলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় এবং সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় আর হেলিকপ্টার আনা হয়নি।

অন্যদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, সাজেক ভ্যালিতে পানির সংকট ও দমকল বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে না পারায় আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। আগুনের ঘটনায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে ৯৫টির মতো স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হলেও, ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য এখনও নিরূপণ করা যায়নি।

স্থানীয় কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাজেকে আগুনের ঘটনার পানি সংকটের কারণে দ্রুত আগুন নেভানো যায়নি। এছাড়া দীঘিনালা, খাগড়াছড়িসহ অন্যান্য উপজেলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছাতে সময় লাগার কারণে আগুনে ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে গেছে। সাজেকে অগ্নি মোকাবিলার জন্য যথাযথ পানি সংরক্ষণ ছিল না।

সাজেক রিসোর্ট ও কটেজ মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিজয় ত্রিপুরা বলেন, “ক্ষয়ক্ষতি কী পরিমাণ হয়েছে, তা এখনো সঠিক বলা যাচ্ছে না। আগুন যেভাবে ছড়িয়েছে, মুহূর্তেই চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেছে। সঠিক তথ্য জানাতে একটু সময় লাগবে, কারণ তাৎক্ষণিকভাবে আমরা কিছুই বলতে পারছি না।”

১৬৭ নম্বর রুইলুই মৌজার হেডম্যান লাল থাঙ্গা লুসাই বলেন, “আগুনের ঘটনায় আমার বসতবাড়িসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনা পুড়ে গেছে।”

রাঙামাটি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমীন জানান, “সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাজেকে ৯৫টির অধিক স্থাপনা পুড়ে গেছে। আগুনে এখনও হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। হেলিকপ্টারে মাধ্যমে আগুন নেভানোর কথা থাকলেও বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণ আসায় আর হেলিকপ্টার আনা হয়নি।”

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, “যতটুকু জানা গেছে বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তবে সেটি পরে তদন্ত সাপেক্ষে নিশ্চিত হওয়া যাবে। আপাতত আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ক্ষয়ক্ষতির নিরূপণে কাজ চলছে।”

খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাকের হোসেন বলেন, “বিকাল চার টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও আগুন যাতে অন্যত্র ছড়াতে না পারে সেজন্য পানি ছিটানোর কাজ করা হয়েছে। তবে এলাকাটি পাহাড়ের ওপর হওয়াতে পানি নিয়ে সংকট পড়তে হয়েছে।”

সাজেকে পর্যটক ভ্রমণে নিরুৎসাহ

সাজেকে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছে প্রশাসন। সোমবার রাতে সাড়ে ৮টার দিকে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো মো. সাইদুজ্জামানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক পর্যটক এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সাজেকে পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করা হলো।

৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

সাজেক ভ্যালির পর্যটন কেন্দ্রে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের উৎস ও কারণ উদ্ঘাটনে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।

তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহর সই করা এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, তদন্ত কমিটি প্রয়োজনে এক বা একাধিক সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।

তদন্ত কমিটিতে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মো. মোবারক হোসেনকে আহ্বায়ক ও বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিরীন আক্তারকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্য তিন সদস্য হলেন– রাঙামাটির সহকারী পুলিশ সুপার (বাঘাইছড়ি সার্কেল), রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (দীঘিনালা) সহকারী প্রকৌশলী।