Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কোন পথে স্যামসাং সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ?

samsung_crownদুনিয়াজোড়া ধনী ব্যক্তিদের আর্থিক হিসেব বলছে তাঁর বর্তমান সম্পদের মোট মূল্য প্রায় সাড়ে এগারোশ কোটি ইউএস ডলার। লি কুন হি দক্ষিণ কোরিয়ায় এই মুহূর্তের সবচেয়ে বিত্তশালী মানুষটির নাম। ইলেক্ট্রনিকসের বাজারে বিশ্বসেরা সব ব্র্যান্ডকে পিছনে ফেলে স্যামসাংয়ের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার পিছনের কারিগরটি তিনিই। স্মার্টফোন থেকে শুরু করে লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ২৭ বছর আগে বাবার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেয়ার পর থেকে অদ্যবধি স্যামসাং গ্রুপের বানিজ্য বিস্তৃত করেছেন সম্ভব সবদিকেই। কোরিয়ায় কিংবদন্তীতুল্য এই ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব যখন তৃতীয় মাসের মতো হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সাথে লড়ছেন তখন তাঁর গড়ে তোলা সুবিশাল সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ কি হবে সে নিয়ে অনিবার্য আলোচনাই এখন চলছে দেশটির ব্যবসায়িক অঙ্গনে।

সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তার প্রশ্ন আসছে যেসব কারনে সেগুলোর অন্যতম একটি হচ্ছে, কোরিয়ার আইন অনুসারে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের ৫০ শতাংশ কর হিসেবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হয়। সে হিসেবে স্যামসাং গ্রুপের পরবর্তী সম্ভাব্য কর্ণধার লি পুত্র জে ইয়ংকে ৫ শ’ কোটি মার্কিন ডলারের অধিক মূল্যের কর গুণতে হবে। তাছাড়া স্যামসাংয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ৭৪টি প্রতিষ্ঠানে লি পরিবারের মালিকানা আছে দুই শতাংশেরও কম। কোরিয়ার বাজারে স্যামসাং মোবাইলের চাহিদা হ্রাসের কারণে একদিকে যেমন মালিকপক্ষ বাজারে আরও শেয়ার ছাড়তে বাধ্য হতে পারে, অপরদিকে আবার অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ বিবেচনায় বিনিয়োগকারীরা স্যামসাংয়ের শেয়ারে আগ্রহ হারাবে না এমনটাও জোর গলায় বলা যাচ্ছে না। তেমন কিছু হলে সেটার জন্য জুনিয়র লির উপর মানুষের আস্থার অভাবটাই প্রধান কারন হবে বলে ধারনা অর্থনৈতিক বিশ্লেষক চুং সুন সুপের, “গুগল ও অ্যাপলের মতো শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি করতে পারলেও জে ইয়ং এখনো তার বাবার মতো প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিত্বে পরিণত হতে পারেননি।…শেয়ারবাজারে বেশ অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা জি ইয়ংয়ের ব্যাপারে আশাবাদী নয়।”

chardike-ad
lee keun hee
লি কুন হি

তবে কারন যাই হোক স্যামসাংয়ের শেয়ার হাতছাড়া হওয়া মানে প্রতিষ্ঠানটির উপর লি পরিবার তথা গোটা মালিকপক্ষেরই প্রভাব হ্রাস পাওয়া- এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সিউলের কুইয়ং হি স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক কিম হাওং ইউ যেমন বলছিলেন, “স্যামসাং এখন পৃথিবীর নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে আসতে পেরেছে তার একমাত্র কারণ চেয়ারম্যান লি কুন হি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনাকে বাহ্যিক প্রভাব থেকে দূরে রাখতে পেরেছিলেন। যদি একবার এর শেয়ারগুলো বাইরের বিনিয়োগকারীদের মালিকানায় চলে যায়, তাহলে কেবল লি পরিবারই নয়, গোটা গ্রুপই বাহ্যিক প্রভাব মোকাবেলায় আরো দুর্বল হয়ে পড়বে।”

সেক্ষেত্রে স্যামসাংয়ের ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে সেটা ব্যাখ্যা করে বোঝালেন দাইশিন সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক ক্লেয়ার কিম, “এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ বাড়াতে স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারে। প্রবৃদ্ধি শ্লথ হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে তারা ব্যবসার কৌশল পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেও চাপ প্রয়োগ করতে পারে।”

উত্তরাধিকার কর আর সরকারি নীতিমালা মানতে গিয়ে  স্যামসাং পরিবারকে ইতোমধ্যেই দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়তে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে আকারে ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চেলি ইন্ডাস্ট্রিজ। গ্রুপের সবচেয়ে বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্যামসাং ইলেকট্রনিকস হলেও লি পরিবারের ক্ষমতার উৎস কার্যত এই চেলি ইন্ডাস্ট্রিজ। এই প্রতিষ্ঠানের নামে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন পরিমাণ শেয়ার গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে লি পরিবারের কর্তৃত্ব ধরে রেখেছে। যেমন স্যামসাং লাইফ ইন্স্যুরেন্সে চেলির শেয়ারের পরিমাণ ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে স্যামসাং ইলেকট্রনিকসে ৭ দশমিক ৬ শতাংশের মালিক এই স্যামসাং লাইফ ইন্স্যুরেন্স। স্যামসাং কার্ড কোম্পানিতে স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের মালিকানার পরিমাণ ৩৭ দশমিক দশমিক ৫ শতাংশ। আবার এই স্যামসাং কার্ডই চেলিতে ৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা দখল করে আছে। এখন পর্যন্ত চেলির পূর্ণ মালিকানা আছে লি পরিবারের হাতেই। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চেলির শেয়ার ছাড়াটা তাই স্যামসাং পরিবারের জন্য কর্তৃত্বের ভাগ ছেড়ে দেয়ারই নামান্তর।

lee jae young
লি জে ইয়ং

সবদিক বিবেচনায় স্যামসাং সাম্রাজ্যের অনাগত আগামী যে খুব সুখকর কিছু হবে না সেটা বলাই বাহুল্য। কিন্তু নৈরাশ্যবাদীদের ভিড়ে লি পরিবারের জন্য আশার আলোও দেখছেন কেউ কেউ; তাঁদেরই একজন ‘স্যামসাং কালচার ৪.০’-এর লেখক মিন জিন গুই। গুইয়ের বিশ্বাস কঠিন পরিস্থিতিটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নেবেন লি জে ইয়ং। আর সেটা সফলভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হলে পিতার সম্মান আর প্রতিপত্তির উচ্চতায় পৌঁছানোটা তাঁর জন্য সময়ের ব্যাপার হবে মাত্র!

 

বানিজ্য ও অর্থনীতি বিষয়ক অনলাইন সাময়িকি ব্লুমবার্গ ডট কম অবলম্বনে