রবিবার । ডিসেম্বর ২১, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ১১ অগাস্ট ২০২৫, ৭:৪৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আল-জাজিরার ৫ সাংবাদিক নিহত


Journalist

গাজার যুদ্ধক্ষেত্রে আবারও রক্তাক্ত আঘাত হানল ইসরায়েলি বিমান হামলা। রবিবার গভীর রাতে গাজা সিটিতে আল-শিফা হাসপাতালের কাছে এক হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত সাতজন, যার মধ্যে পাঁচজন আল-জাজিরার সাংবাদ কর্মী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন প্রখ্যাত প্রতিবেদক আনাস আল-শরীফ ও গাজার আরেক পরিচিত সাংবাদিক মোহাম্মদ কুরেইকেহ।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তারা আল-শরীফকে নিশানা বানিয়েছে কারণ তিনি নাকি হামাসের একটি সেল পরিচালনা করছিলেন, যা ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক ও সেনাদের বিরুদ্ধে রকেট হামলার পরিকল্পনা করছিল। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এমনকি বেশ কিছু নথি দেখানো হয়েছে, যা তারা বলছে “তার হামাস-সংযোগের অকাট্য প্রমাণ।”

নিহতরা হলেন আল-জাজিরা আরবীর পরিচিত সংবাদদাতা আল–শরীফ (২৮), সংবাদদাতা মোহাম্মদ কুরেইকেহ, ক্যামেরা অপারেটর ইব্রাহিম জাহের, মোহাম্মদ নুফাল ও মুয়ামেন আলিওয়া।

তবে মৃত্যুর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আল-শরীফ লিখেছিলেন, “যদি এই উন্মাদনা বন্ধ না হয়, গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে, মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ হবে, মুখমণ্ডল মুছে যাবে—আর ইতিহাস আপনাদের মনে রাখবে সেই নীরব সাক্ষী হিসেবে, যারা গণহত্যা থামানোর চেষ্টা করেননি।”

হাসপাতাল পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবু সালমিয়া জানিয়েছেন, আল-শরীফসহ কয়েকজন সাংবাদিক তখন হাসপাতালের প্রবেশপথের কাছে একটি তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হন।

আল জাজিরার প্রতিবেদক আনাস আল-শরীফ

গত মাসেই আইডিএফের অভিযোগের জবাবে আল-শরীফ বলেছিলেন, “আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই। আমার একমাত্র দায়িত্ব হলো মাটির সত্য তুলে ধরা, পক্ষপাতহীনভাবে।”

আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সুরক্ষা কমিটি  জানিয়েছে, জুলাইয়ে তারা আল-শরীফের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। প্রায় দুই বছরের যুদ্ধের মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ১৮৬ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।

এদিকে, জাতিসংঘ ইসরায়েলের অভিযোগকে “ভিত্তিহীন” আখ্যা দিয়েছে। জাতিসংঘের মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি আইরিন খান দুই সপ্তাহ আগে সতর্ক করে বলেছিলেন, “উত্তর গাজায় আল জাজিরার শেষ জীবিত সাংবাদিক আনাস আল-শরীফের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক হুমকি ও অভিযোগ অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”

দুই সন্তানের জনক আল-শরীফ মৃত্যুর আগে সহকর্মীদের জন্য একটি শেষ বার্তাও লিখে গিয়েছিলেন,  “শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে নীরব হবেন না, সীমান্তে থেমে যাবেন না; ভূমি ও মানুষের মুক্তির সেতু হয়ে উঠুন, যতদিন না মর্যাদা ও স্বাধীনতার সূর্য আমাদের দখলীকৃত মাতৃভূমিতে উদিত হয়।”

সূত্র : সিএনএন ও আল-জাজিরা