Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পেট্রোবাংলার দুর্নীতির অনুসন্ধান নিয়ে তামাশা!

Logoপেট্রোবাংলার ১৩ প্রতিষ্ঠানে ৪২ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়োগ দুর্নীতির অনুসন্ধান নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চলছে তামাশা।

ওই দুর্নীতির নেপথ্যের মানুষদের বাঁচাতে কখনো অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে অব্যাহতি, কখনো চলছে পরিবর্তন। আর এমন কর্মকাণ্ডে দুদকের স্বচ্ছতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।

chardike-ad

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুরসহ ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার অনুমতি চেয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেওয়া হয়। পরে প্রতিবেদন কর্মকর্তার অদক্ষতার অজুহাত তুলে তৃতীয়বারের মতো তাকে পরিবর্তন করে দুদক।

এর আগে গত ৯ মার্চ ওই দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে উপপরিচালক আহসান আলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। মাঝপথে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ও নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে শেষমেশ ওই কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় কমিশন।

আহসান আলীকে বাধ্যতামূলক অব্যাহতি দেওয়ার পর গত ১৩ এপ্রিল সহকারী পরিচালক শেখ আবদুস সালামকে দায়িত্ব দেয় কমিশন।

অবশেষে গত ৭ সেপ্টেম্বর পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুরসহ ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন চেয়ে প্রতিবেদন পেশ করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক শেখ আবদুস সালাম।

 কিন্তু প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে ২৪ সেপ্টেম্বর অনুসন্ধান প্রতিবেদন পুনরায় প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়ে কর্মকর্তার নিকট ফেরত পাঠায় কমিশন।

পরে মামলার সুপারিশকারী ওই অনুসন্ধান কর্মকর্তাকেই বাদ দেয় দুদক। ৩০ সেপ্টেম্বর দুদকের এক আদেশে সহকারী পরিচালক শেখ আবদুস সালামের পরিবর্তে নতুন অনুসন্ধান কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুদকের উপপরিচালক ঋত্বিক সাহাকে।

 এ বিষয়ে দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু রাইজিংবিডিকে বলেন, দক্ষতার অভাব থাকায় তাকে (শেখ আবদুস সালাম) অনুসন্ধান কর্মকর্তার পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর কর্ণফুলী গ্যাস ফিল্ড কোম্পানিতে জনবল নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেন আবদুস সালাম। কিন্তু দাখিল করা অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশন আমলে না নিয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর তা পুনরায় পর্যালোচনা করতে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয় কমিশন। ওই নির্দেশনার এক সপ্তাহ পরে ৩০ সেপ্টেম্বর আবদুস সালামকে অনুসন্ধান কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।

সূত্র জানায়, আবদুস সালামের দায়ের করা প্রতিবেদনে কর্ণফুলী গ্যাস ফিল্ড কোম্পানিতে নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়ম ও দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ উল্লেখ করে বলা হয়, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান লোকবল নিয়োগ দেওয়ার সময় কোনো জেলা ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসরণ না করে মনগড়াভাবে লোকবল নিয়োগ দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ২১ জনকে নিয়োগ দেন চট্টগ্রাম জেলা থেকে। প্রতিবেদনে এই ধরনের অসংখ্য অনিয়মের তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর, কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির সাবেক এমডি সানোয়ার হোসেন, সাবেক এমডি জামিলে আলীম, জিএম আহসান হাবীব, সচিব নিয়াজুর রহমানসহ ১১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করেন।

এ ছাড়া প্রতিবেদনে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের নির্দেশেই ওই সব কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এ দুর্নীতি করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।

দাখিলকৃত প্রতিবেদনে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতে জনবল নিয়োগে অনিয়ম, নিয়োগ-বাণিজ্যের প্রমাণ পাওয়ায় ১৯৪৭ সালের ২ নম্বর দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছিল।

দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের শুরুতে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পেট্রোবাংলার আওতাধীন ১৩টি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য, নিয়োগের কথা বলে প্রার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, এমডিদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণের মাধ্যমে পদোন্নতি, পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পে নিজস্ব ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে ‘কাজ’ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা উত্তোলন ও আত্মসাৎ, প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ আনা হয়েছিল।