Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু এই মাসেই

dhaka eeপ্রায় তিন বছর অপেক্ষার পর অবশেষে শুরু হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ। চলতি মাসেই এ কাজ শুরু হবে বলে গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনাদের একটা সুখবর দিতে চাই। দীর্ঘ অনিশ্চয়তার পথ পাড়ি দিয়ে চলতি মাসের শেষের দিকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হতে যাচ্ছে।’

chardike-ad

বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ সেতু বিভাগের তথ্যমতে, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) এ প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড। ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে চায়না কনস্ট্রাকশন কমিউনিকেশন কোম্পানি (সিসিসিসি) লিমিটেডকে। নির্মাণকাজ শুরুর জন্য এরই মধ্যে ভারত থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনা শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের প্রথম অংশের জন্য জমি অধিগ্রহণও সম্পন্ন হয়েছে।

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২৬ কিলোমিটার। এর সঙ্গে ওঠানামার র্যাম্প হবে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। প্রথম পর্যায়ে বিমানবন্দর সড়ক থেকে মহাখালী পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার পথ নির্মাণ করা হবে। নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর এ অংশটুকু ২০১৫ সালে উদ্বোধনের কথা রয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে মহাখালী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার ও শেষ পর্যায়ে কমলাপুর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত আট কিলোমিটার অংশ নির্মাণ করা হবে। নির্মাণের পর পুরো এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের কথা রয়েছে ২০১৬ সালে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস বণিক বার্তাকে বলেন, প্রকল্পের কাজ শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি তহবিল জোগাড় করেছে। অন্যদিকে যন্ত্রপাতি আনা শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি। শিগগিরই এর নির্মাণকাজ শুরু করা যাবে।

রাজধানীর যানজট নিরসনে ২০০৯ সালে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে চুক্তি হয় ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি। সে বছর ৩০ এপ্রিল এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেলেও নির্মাণকাজ আর শুরু হয়নি। এর মধ্যে দুই দফা নকশা পরিবর্তন করা হয়। নতুন নকশায় এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পুনরায় চুক্তি করে সেতু বিভাগ। যদিও নির্মাণ শেষে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এটি উদ্বোধনের কথা ছিল।

সংশোধিত নকশা অনুযায়ী, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশ বিমানবন্দর সড়ক থেকে শুরু হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত বিদ্যমান রেললাইনের ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হবে। দ্বিতীয় অংশ কমলাপুর থেকে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) অতীশ দীপঙ্কর সড়কের ওপর দিয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে। পরের অংশটি গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার অংশের ওপর দিয়ে যাত্রাবাড়ী অতিক্রম করে কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে।

নকশার পাশাপাশি মহাখালী ও মালিবাগের র্যাম্পের অবস্থানেও পরিবর্তন করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পটির কাঠামোগত ধরনেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। ব্যয় কমানোর জন্য এক্সপ্রেসওয়েটি বক্স গ্রিডারের পরিবর্তে আই গ্রিডারে নির্মাণ করা হবে। তবে টোলের প্রাথমিক হার, প্রকল্পের মেয়াদসহ চুক্তির অন্যান্য শর্তে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণের জন্য রেলওয়ের কাছ থেকে বিনামূল্যে প্রায় ১২৮ একর জমি নেয়া হয়েছে।

প্রকল্পের পরামর্শক ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল হক বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ ব্যয় তুলনামূলক বেশি। সরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্মাণ করা হলে তা কিছুটা কম পড়ত। তবে পিপিপি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ধারণা। এক্ষেত্রে টোলের হার ও টোল আদায়ের সময়সীমা উল্লেখযোগ্য। এক্ষেত্রে ছাড় দেয়া উচিত নয়।

উল্লেখ্য, এক্সপ্রেসওয়েতে টোল ধরা হয়েছে মোটরগাড়িতে ১২৫ টাকা, যাত্রীবাহী বাসে ২৫০, ছয় চাকার ট্রাকে ৫০০ আর ছয় চাকার বেশি ট্রাকের জন্য ৬২৫ টাকা। তবে তিন বছর পর পর টোলের হার সমন্বয় করা হবে। ২৫ বছর টোল আদায় করবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে এক্সপ্রেসওয়েতে দৈনিক ন্যূনতম ১৩ হাজার ৫০০ যানবাহন চলাচল করতে হবে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী যানবাহন না চললে ক্ষতিপূরণ হিসেবে চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে হবে।