Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বড় নাশকতার ছক জামায়াতের!

hortal

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একের পর এক রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশে বড় ধরনের নাশকতার আশংকা করছে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। সংস্থাটি তাদের আশংকার কথা প্রকাশ করে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দিয়েছে সরকারের উচ্চপর্যায়ে। ওই প্রতিবেদনের পর দেশজুড়ে আইন-শৃংখলা বাহিনীকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। রোববার পুলিশ সদর দফতর থেকে সতর্কাবস্থা গ্রহণের জন্য সারা দেশে জেলা পুলিশ সুপারদের কাছেও ‘জরুরি বার্তা’ পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্রক্রিয়া যতোই পরিণতির দিকে এগোবে ততই এ ধরনের সহিংস অপতৎপরতা বাড়াবে জামায়াত-শিবির। আর এ আশংকা থেকে ট্রাইব্যুনালসহ সারা দেশের নিরাপত্তা ধাপে-ধাপে বাড়ানো হবে।
এদিকে রোববার ভোর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন করা হয়েছে ব্যাপকসংখ্যক র‌্যাব ও পুলিশ। কূটনৈতিক এলাকাসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তায় র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে সাদা পোশাকের বিপুল পরিমাণ সদস্য। এদিকে জামায়াতের ডাকে লাগাতার হরতালে অরাজকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড রোধে শুধু রাজধানীতেই মোতায়েন করা হয়েছে আইন-শৃংখলা বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য।
ভারপ্রাপ্ত আইজিপি (অতিরিক্ত আইজিপি-প্রশাসন) একেএম শহীদুল হক বলেন, হরতালের নামে কেউ যাতে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাতে না পারে সে জন্য সারা দেশে পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে। কেউ আইন ভাঙার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে একের পর এক রায় ঘোষণার পর একটি গোয়েন্দা সংস্থার দেশজুড়ে নাশকতার আশংকা প্রকাশ করায় পুলিশ সদর দফতরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে বসেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাৎক্ষণিকভাবে দেশের প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপারকে সতর্কতা জারি করে ‘জরুরি বার্তা’ পাঠানো হয়। বিশেষ করে যেসব জেলায় জামায়াত-শিবিরের তৎপরতা বেশি সেসব এলাকায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েনের জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে পুলিশ সদর দফতর থেকে। পোশাকধারী পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় এসবি ও জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কর্মকর্তাদের মাঠে থাকতে বলা হয়েছে। এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কয়েক দফা বৈঠকের পর হরতাল-আন্দোলনে পুলিশের কৌশল নির্ধারণ করেছেন। ডিএমপির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, হরতালে বিশৃংখলার আশংকায় গোটা নগরীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে। গোটা রাজধানীকে ৯টি সেক্টরে ভাগ করে হরতালের অরাজকতা ঠেকাতে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪ জন যুগ্মকমিশনার এসব সেক্টরের দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০টি ভিডিওচিত্র ও আলোকচিত্রের দল কাজ করবে। রোববার সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্পটে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন ও পথচারী তল্লাশি শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, জামায়াতের ডাকা হরতালে শুধু রাজধানীতেই মোতায়েন থাকছে প্রায় ১০ হাজার র‌্যাব ও পুলিশ। হরতাল সমর্থনকারীদের চোরাগুপ্তা হামলা, বিশৃংখলা ও যে কোনো ধরনের নাশকতা মোকাবেলায় ডিএমপির ৩২টি স্পর্শকাতর পয়েন্টে কঠোর গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি স্টাইকিং ফোর্স, দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অধিকতর স্পর্শকাতর স্পটগুলোকে কাঁটাতারের রোড ব্লকার দিয়ে ঘিরে রাখা হচ্ছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আর্মড পার্সোনাল কেরিয়ার (এপিসি), রায়ট কন্ট্রোল কার (আরসিসি) ও জলকামান। এর বাইরে সিটি এসবি ও গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) সদস্যদের তৎপরতা জোরদারের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হরতালের অরাজকতা পরিস্থিতি সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করতে পুলিশের আলোকচিত্র শাখার অন্তত ২০টি দল মাঠে থাকছে। তারা হরতাল সমর্থনকারীদের সৃষ্ট নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির ভিডিও ফুটেজ ও স্টিল ছবি তুলে রাখবে। পরে ছবি দেখে তাদের গ্রেফতার করা হবে। এছাড়া ডিএমপির বোম্ব ডিসপসেবল টিম ও সোয়াত টিমকে প্রস্তুত রাখা হবে। কোথাও বোমাবাজি বা বিশৃংখলা দেখা গেলেই বিশেষ টিম সেখানে ছুটে যাবে। মানবতাবিরোধী অপরাধে মঙ্গলবার জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। ওই রায়ের প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামী ৭২ ঘণ্টার হরতালের ডাক দেয়। প্রথম দফা হরতালে দুই দিন বিরতির পর রোববার থেকে শুরু হয়েছে ফের ৪৮ ঘণ্টার হরতাল। এদিকে একই অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রোববার জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেন। ওই রায়ের প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামী বৃহস্পতিবার হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করে।

chardike-ad

তথ্যসুত্রঃ দৈনিক যুগান্তর