Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

চিপ ব্যবসায় বেশি মনোযোগ দিচ্ছে স্যামসাং

Samsung-Logoসময় ভালো যাচ্ছে না স্মার্টফোন নির্মাতা স্যামসাংয়ের। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) প্রতিষ্ঠানটির নেট মুনাফা কমেছে আগের বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ২০ শতাংশ। এর পরের প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির অর্জিত মুনাফার পরিমাণ আরো শোচনীয় অবস্থানে দাঁড়ায়। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির নেট মুনাফার পরিমাণ আগের বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় হ্রাস পায় প্রায় অর্ধেক। স্মার্টফোন নির্মাতা হিসেবে বেশি পরিচিত প্রতিষ্ঠানটি এবার তাদের ব্যবসার কৌশলে পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। এরই অংশ হিসেবে তারা স্মার্টফোনের চেয়ে চিপ তৈরিতে বেশি মনোনিবেশ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর টেকটু।

এখনো স্মার্টফোন উত্পাদন ও সরবরাহে বিশ্বের এক নম্বর প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্বের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বাজারে প্রতিষ্ঠানটি তাদের শীর্ষস্থান হারিয়েছে। এর মধ্যে স্যামসাংয়ের কৌশলগত বাজার চীন অন্যতম। দেশটিতে স্মার্টফোন সরবরাহে এখন শীর্ষ প্রতিষ্ঠান জিয়াওমি। সমগ্র বিশ্বে বেশকিছু বাজার রয়েছে, যেগুলো স্মার্টফোন নির্মাতাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, রাশিয়া অন্যতম। বিপুল জনসংখ্যার কারণে এ দেশগুলোর গুরুত্ব সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অন্যান্য বাজারের তুলনায় একটু বেশিই। কিন্তু এ বাজারগুলোয়ও সম্প্রতি নিজেদের আধিপত্য হারাতে বসেছে স্যামসাং। প্রতিষ্ঠানটির গত দুই প্রান্তিকের আয়ের প্রতিবেদনে এ বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়েছে। ইলেকট্রনিক পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হলেও সম্প্রতি স্মার্টফোনের ওপরই বেশি নির্ভর করছে স্যামসাং। এ কারণে তাদের স্মার্টফোনের বাজার হ্রাস পাওয়ায় সরাসরি প্রভাব পড়েছে তাদের আয়ের ওপর।

chardike-ad

আইএম ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক লি মিন হির মতে, অ্যাপল ও চাইনিজ স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোই স্যামসাংয়ের জন্য মূল প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অ্যাপল ও চাইনিজ প্রতিষ্ঠানগুলোর চাপের মধ্যে পড়ে স্যামসাংয়ের ঠিক স্যান্ডউইচের মতো অবস্থা।’ এ মন্তব্যের ব্যাখ্যাও দেন তিনি। দামি স্মার্টফোনগুলোর মধ্যে অ্যাপলের ডিভাইসগুলোই বাজারে রাজত্ব করছে। আর সস্তা স্মার্টফোনের কথা বিবেচনা করলে চীনা ডিভাইসগুলোর তুলনা হয় না। এ দুই শ্রেণীর ডিভাইসগুলোই বর্তমানে বাজারে রাজত্ব করছে। যেখানে স্যামসাং দুই প্রান্তিক ধরে বাজার দখল বাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

স্যামসাংয়ের এ দুরবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ানোর যথেষ্ট সামর্থ্য রয়েছে বলে মন্তব্য করেন সিউলভিত্তিক আইবিকে ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক লি সিউং উ। তবে ব্যবসায় আগের অবস্থায় ফিরে যেতে প্রতিষ্ঠানটির বেশকিছু সময় লাগবে বলেও মনে করেন এ বিশ্লেষক।

তিনি আরো বলেন, ‘স্যামসাং এমন এক প্রতিষ্ঠান, যে একদিনে কয়েক লাখ স্মার্টফোন তৈরি করতে পারে। এ কারণে বিশাল এ ব্যবসাকে অন্য খাতে পরিচালিত করতে কিছুটা সময় তো লাগবেই।’

মূল ব্যবসায় ধস নামলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু স্যামসাং এমন এক প্রতিষ্ঠান, যার বিকল্পের কোনো অভাব নেই। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, কোরীয় প্রতিষ্ঠানটি স্মার্টফোনের বদলে চিপ তৈরির দিকেই ঝুঁকতে পারে। কারণ যে সময়ে স্মার্টফোন থেকে প্রতিষ্ঠানটির আয় কমছে, সে সময়েই চিপ খাত থেকে তাদের আয় বেড়েছে।

এ বিষয়ে স্যামসাংয়ের সেমিকন্ডাক্টর ইউনিটের ভাইস প্রেসিডেন্ট বায়েক জি হো বলেন, ‘কম দামের স্মার্টফোনগুলোয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নত চিপ ব্যবহারের চেষ্টা করছে। আর আমরা এরই মধ্যে ন্যান্ড ফ্ল্যাশ মেমোরি ও ড্রাম চিপ খাতে অভূতপূর্ব উন্নতি করেছি। আগামীতে আমরা চিপ তৈরিতেই বেশি মনোনিবেশ করব।’

আইবিকে ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক লি বলেন, ‘আমি মনে করি, আগামী বছরের শুরু থেকেই স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে স্যমসাং মেমোরি চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।’

২০১১ সাল থেকেই মূলত স্মার্টফোন খাতে স্যামসাংয়ের রাজত্ব শুরু হয়। তিন বছরে প্রতিষ্ঠানটি স্মার্টফোন খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছে। এ বিষয়ে এইচএমসি ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক গ্রেগ রোহ বলেন, ‘২০১২ ও ১৩ সালে স্যামসাং অস্বাভাবিক রকম আয় করেছে। এখন এ মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসছে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিটিকসের মতে, গত এক বছরে বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন খাতে স্যামসাংয়ের বাজার দখল ৩৫ থেকে ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে। পাশাপাশি তাদের আয়ও কমছে উল্লেখযোগ্য হারে। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসার ধরনের পরিবর্তন আনা ছাড়া স্যামসাংয়ের কোনো বিকল্প নেই বলেই মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। এক্ষেত্রে সার্বিক দিক বিবেচনায় চিপ ব্যবসা হতে যাচ্ছে স্যামসাংয়ের পরবর্তী রণক্ষেত্র। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, আগামী কয়েক বছরে স্যামসাং হয়তো সবার কাছে স্মার্টফোন নির্মাতার পরিবর্তে চিপ নির্মাতা বলেই অধিক পরিচিত হবে। বণিকবার্তা।