পশ্চিমবঙ্গে জামায়াতের হাত ধরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি- বিজেপি। বিজেপির পক্ষে মঙ্গলবার কলকাতায় এই দাবি তোলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ।
বিজেপির দাবি, জামায়াতের সাহায্য নিয়েই রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ৭৫টি বিধানসভা আসনের অধিকাংশে জিতেছিল কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। তৃণমূল জিতেছিল ৩২টি এবং কংগ্রেস ১৩টিতে।
বিজেপির কেন্দ্রীয় এই নেতার অভিযোগ, নির্বাচনে সাহায্য পাওয়ার বিনিময়ে তৃণমূল জামায়াত নেতৃত্বকে আশ্বাস দিয়েছিল, বাংলাদেশে আওয়ামি লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তারা যথাসাধ্য সাহায্য করবে।
সিদ্ধার্থনাথের প্রশ্ন করেন, এই সমঝোতার ফলেই কি মনমোহন সিংহের সঙ্গে প্রস্তাবিত বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছিলেন মমতা? ২০১১-র ওই সফরে দু’দেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা থাকলেও মমতার আপত্তিতে তা হতে পারেনি।
সিদ্ধার্থনাথ বলেন, “বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের রিপোর্ট দু’পক্ষের এই সমঝোতার কথাই বলছে। ও দেশের সংবাদপত্রেই এই খবর প্রকাশিত হয়েছে।” তার তোলা এই অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হলে তিনি দুঃখপ্রকাশ করবেন বলেও জানান ওই বিজেপি নেতা। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
তবে সিদ্ধার্থনাথের অভিযোগকে ‘কাল্পনিক’ আখ্যা দিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘কলকাতায় বসে সিদ্ধিনাথবাবু হালে পানি পাননি। এখন চলে গিয়েছেন সীমান্তে। পাগলে কী না বলে! জামাতের বন্ধু কারা বোঝা যাচ্ছে!’
কংগ্রেসও সিদ্ধার্থনাথের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বিজেপি যা খুশি তাই বলছে। বিধানসভা নির্বাচনে ভোটটা কি বাংলাদেশের মানুষ এসে দিয়ে গিয়েছিল?’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ আনন্দবাজারকে মন্তব্য প্রদানকালে জানান, বিজেপি যে সব অভিযোগ এনেছে তা ভারতের ঘরোয়া রাজনীতির বিষয়। তিনি বলেন, ‘তবে রাজনৈতিক স্বার্থে মৌলবাদী ও জঙ্গিদের প্রশ্রয় দেওয়ার ফল যে কী ধ্বংসাত্মক হতে পারে, বাংলাদেশের মানুষ তা ঠেকে শিখেছেন। আমরা চাই বিশ্বের কোথাও কেউ যেন জঙ্গিদের প্রশ্রয় না দেয়।’ ‘মৌলবাদীদের সাহায্যে ক্ষমতায় এসেছিলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া । রাজনীতিতে আজ তিনি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছেন’ বলেন হানিফ।
ভারতের ঘরোয়া বিষয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চান না বলে আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন বিএনপি নেতৃত্বও।
আনন্দবাজার পত্রিকার রিপোর্টটিতে বলা হয়, সারদা কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তৃণমূলের যোগসাজসের অভিযোগ উঠে এসেছে। তৃণমূলের এক সাংসদের বিরুদ্ধে সারদার টাকা বাংলাদেশে পাচার করে জামাতের জঙ্গি কার্যকলাপে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আবার খাগড়াগড়ে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের মদতেই বাংলাদেশে সন্ত্রাস চালানোর জন্য বিস্ফোরক তৈরি হচ্ছিল বলে অভিযোগ। এই সব অভিযোগের সত্যতা এখন খতিয়ে দেখছে এনআইএ এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় সরকারী সংস্থা।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকেও নানা তথ্য পাচ্ছে তারা। ভারতের মাটি থেকে বাংলাদেশ-বিরোধী সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগ করে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতেই ডসিয়ার তুলে দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।