Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মরেই প্রমাণ করতে হলো তিনি জীবিত ছিলেন

moron

অবশেষে তাকে মরেই প্রমাণ করতে হলো, এর আগে মরেননি। মৃত ঘোষণার তিন ঘণ্টার মাথায় জীবিত প্রমাণ হলেও চব্বিশ ঘণ্টার মাথায় সত্যিই মারা গেলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অজ্ঞাত পরিচয়ের সেই নারী (৪৫)। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুষ্টিহীনতার শিকার, প্রায় কঙ্কালশার ওই মহিলাকে গত ২ ডিসেম্বর লোকজন ফুটপাথ থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। দেখভালের জন্য লোকজন না থাকায় অযতেœ অবহেলায় হাসপাতালের মেঝেতে প্রায় লাশের মতোই পড়ে ছিলেন ওই মহিলা। চিকিৎসাপত্র হিসেবে তার শরীরে শুধু স্যালাইন চলছিল। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় মহিলাকে মৃত ঘোষণা করেছিলেন কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে মহিলার লাশটি মর্গে নেয়ার প্রস্তুতি চলছিল। এরই মধ্যে ট্রলিতে হঠাৎ হাত-পা নড়ে ওঠে। খবর পেয়ে চিকিৎসক ছুটে এসে ঘোষণা করলেন মহিলা মরেননি। চিকিৎসাপত্র হিসেবে তার শরীরে আবারো শুরু হয় স্যালাইন।

chardike-ad

এই ঘটনায় হাসপাতাল জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আজ দিনভর তোলপাড় ছিল এ ঘটনা নিয়ে। সরকারি পর্যায়ে দেশের সর্ববৃহৎ এই চিকিৎসা কেন্দ্রে এমন ঘটনায় চিকিৎসকদের দায়িত্বহীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠে।

ঘটনার কারণ উদঘাটনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। মহিলার যাবতীয় চিকিৎসার দায়িত্বও নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এরই মধ্যে মহিলা এবার সত্যি সত্যিই মারা গেলেন। ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টার মাথায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে ওই মহিলাকে মৃত ঘোষণা করে একজন চিকিৎসকের স্বাক্ষরিত মৃত্যুসনদ দেয়া হলেও সেটি নিয়ে চলছে লুকোচুরি। ইতোমধ্যে গায়েব হয়েছে সেটি। হাসপাতাল প্রশাসন বলছে তদন্তে প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনা তদন্তের জন্যে আজ চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঢামেকের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা: এনামুল করিমকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ রয়েছে কমিটিকে।

হাসপাতালের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মৃত বলে ঘোষণা করা মহিলাকে জীবিত প্রমাণ হওয়ার পর থেকে মৃত্যুসনদ গায়েব হয়েছে। এছাড়াও সেদিনকার ঘটনাস্থল নতুন ভবনের ৮০২ নম্বর ওয়ার্ডের ডিউটি রোস্টারও গায়েবের কাতারে পড়ে গেছে বলে জানা গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান মেলেনি। এ বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এব্যাপারে মুখ খুলছেন না। ৮০২ নম্বর ওয়ার্ডে সাংবাদিকরা বিভিন্ন তথ্য জানতে গেলে পড়ছেন তোপের মুখে। এমনকি নানা আইনকানুনের অজুহাত দেখিয়ে রোগীর কাছেও যেতে দিচ্ছেন না চিকিৎসকরা। আজ দুপুরে হাসপাতালে ওই ওয়ার্ডে সাংবাদিকরা প্রবেশ করলে সেখানে কর্তব্যরত এক চিকিৎসক দুর্ব্যবহার করেন। এব্যাপারে তারা কিছু বলবেন না বলে জানান। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, গতকালের ঘটনাটি ছিল ভুলবশত। অপুষ্টির কারণে তার শ্বাস-প্রশ্বাস একেবারেই চলছিল না। এঅবস্থায় তার পালস্ না পাওয়ায় মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল।

এব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, রোগীর আলট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজিসহ আনুসঙ্গিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। তার সার্বিক চিকিৎসা আমরাই করব। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পূর্বে কিছু ঘটনা সম্পর্কে তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি। তবে পরিচালকের এই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরেই মহিলা মারা যান।

মহিলার লাশটি এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। তিনদিন সেখানে রাখা হবে। এরমধ্যে পরিচয় না মিললে দাফনের জন্য লাশটি আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামকে হস্তান্তর করা হবে বলে হাসপাতাল সূত্র জানায়।