ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতা কমেছে বিশ্বব্যাপী। চলতি বছরজুড়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ওপর বিভিন্ন দেশের সরকার কর্তৃক নজরদারি ও অনলাইনে পোস্ট করার ক্ষেত্রে নেতিবাচক হস্তক্ষেপ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। গত বৃহস্পতিবার ইন্টারনেট স্বাধীনতা নিয়ে মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউসের এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্টারনেট স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। খবর এএফপি।
২০১৩ সালে মোট ৬০টি দেশের ওপর গবেষণা চালানো হলেও এবার হয়েছে ৬৫টি দেশে। ইন্টারনেট স্বাধীনতার দিক থেকে ৬৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৪৯তম অবস্থানে রয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে ১৫ কোটি ৬৬ লাখ এবং ইন্টারনেট পেনিট্রেশন বা ব্যবহারের হার দেখানো হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি বছর বাংলাদেশে কোনো অ্যাপ বা ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট সেবা বন্ধ করা হয়নি। কিন্তু রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে বেশকিছু কনটেন্ট ব্লক করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকজন ব্লগার ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারকারীকে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। তথাপি বাংলাদেশের গণমাধ্যম আংশিক মুক্ত বলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্টারনেট ব্যবহারে স্বাধীনতার দিক থেকে বাংলাদেশ ১০০-এর মধ্যে ৪৯ নম্বর পেয়েছে। প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ‘আংশিক স্বাধীন’। প্রতিবেদনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রবেশে বাধা প্রদানের ক্ষেত্রে ১২, কোনো লেখা পোস্ট করায় বাধার ক্ষেত্রে ১২ ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর অধিকার আটকানোর ক্ষেত্রে ২৫ পয়েন্ট পেয়েছে বাংলাদেশ। ১০০-এর মধ্যে পয়েন্টে যত কম হবে, সেই দেশটি ইন্টারনেট স্বাধীনতার দিক থেকে তত উদার। পয়েন্টের দিক থেকে শূন্য থেকে ৩০ হলে, সে দেশটির ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে স্বাধীন হিসেবে ধরা হয়েছে। আর পয়েন্ট ৩১ থেকে ৬০-এর মধ্যে হলে, সে দেশটিকে আংশিক স্বাধীন বলে উল্লেখ করা হয়েছে ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে।
সংবাদ মাধ্যম এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট স্বাধীনতার ক্ষেত্রে গত বছরের মতো চলতি বছরকেও একটি কঠিন বছর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গত বছরের মে মাসের পর থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৬৫টি দেশের মধ্যে ৩৬ দেশই ইন্টারনেট স্বাধীনতার ক্ষেত্রে নেতিবাচক অবস্থান তৈরি করেছে। রাশিয়া, তুরস্ক ও ইউক্রেন ইন্টারনেট স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে পড়েছে। ইরান, চীন ও সিরিয়া ইন্টারনেট স্বাধীনতার ক্ষেত্রে তাদের বাজে অবস্থান ধরে রেখেছে। এছাড়া চলতি বছর জুরে ইন্টারনেটে সেন্সর করা বা কোনো বিষয় বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন দেশে নতুন আইন করা হয়েছে। ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনলাইনের বক্তব্য সেন্সর করার জন্য এবং সরকারি নজরদারি বাড়ানোর জন্য ৪১টি দেশে নতুন আইন করা হয়েছে বা কোনো কোনো দেশে নতুন আইনের প্রস্তাব আনা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তুরস্কের কথা বলা হয়েছে জরিপ প্রতিবেদনে। দেশটিতে টুইটার ও ইউটিউবে সেন্সর জুড়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ব্রাজিল, ভারত ও বেলারুশকে ইন্টারনেটে স্বাধীনতা দেয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইন্টারনেট স্বাধীনতার দিক থেকে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে আইসল্যান্ড। এর পর রয়েছে এস্তোনিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র। বণিকবার্তা।