Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আইপিওতে বিদেশী কোটা

ipoশেয়ারবাজারে যে কোনো প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আবেদন করতে পারবেন। স্থানীয় ও অনিবাসী বাংলাদেশীদের পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য আইপিওর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ার কোটা হিসেবে রাখা হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে ‘পাবলিক ইস্যু বিধিমালা ২০০৬’ সংশোধনের মাধ্যমে আইপিওর কোটা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন, চলতি মাসের মধ্যে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথমার্ধে পাবলিক ইস্যু বিধিমালা সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। এর পর জনগণের মতামতসাপেক্ষে প্রয়োজনে আরো সংশোধনের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের। ওই সংশোধনীতে প্রাইমারি শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রতিটি আইপিওতে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য কোটা রাখা হচ্ছে।

chardike-ad

বর্তমানে কোনো আইপিও সাইজের ২০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের, ১০ শতাংশ অনিবাসী বাংলাদেশী, ১০ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ড ও অবশিষ্ট ৬০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য রাখার বিধান রয়েছে। বিদ্যমান ব্যবস্থার পরিবর্তন এনে আইপিও সাইজের ১০ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য কোটা রাখা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ শেয়ারের পরিমাণ কমতে পারে। অথবা ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ শেয়ার একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর কোটা বাতিল করা হতে পারে। প্রাইমারি বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর অংশ হিসেবে কমিশন আইপিওর বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি ঢেলে সাজাতে চায়। এক্ষেত্রে মিউচুয়াল ফান্ড, বিদেশী বিনিয়োগকারীসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের একটি আইপিওর সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বরাদ্দের জন্য পাবলিক ইস্যু বিধিমালার সংশোধনীতে প্রস্তাব দেয়া হতে পারে।

এদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (পাবলিক ইস্যু) বিধিমালা, ২০০৬ সংশোধনীতে যে কোনো আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাথমিক অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। অর্থাত্ স্টক এক্সচেঞ্জের সম্মতি ছাড়া কোনো কোম্পানি বিএসইসিতে আইপিও আবেদন করতে পারবে না। তবে বিধানটি চূড়ান্ত হওয়ার আগে দক্ষ জনবলের সমন্বয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করেন বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তারা। এজন্য স্টক এক্সচেঞ্জকে আরো ক্ষমতা দেয়া হবে, যাতে আইপিওর প্রাথমিক আবেদন পাওয়ার পর আবেদনকারী কোম্পানির কার্যালয় ও কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শন এবং তার আর্থিক হিসাবের যথার্থতা ও আনুষঙ্গিক ঘোষণা বিষয়ে অনুসন্ধান করতে পারে। স্টক এক্সচেঞ্জ সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ‘তালিকাভুক্ত করার যোগ্য’ ঘোষণা না করা পর্যন্ত আইপিও আবেদন বিবেচনা করা থেকে কমিশন বিরত থাকবে। একই সঙ্গে স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্তি বিধিমালায়ও সংশোধন আনা হবে বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, কমিশনকর্তৃক আইপিও অনুমোদনের পর বিভিন্ন সময়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। চলতি বছর ফার কেমিক্যাল কোম্পানির তালিকাভুক্তির অনুমোদন পাওয়ার পরও সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারে লেনদেন বিলম্বে শুরু হয়। এর আগে ২০১১ সালে এমআই সিমেন্ট ও এমজেএল বাংলাদেশ কোম্পানির শেয়ারে বেশি প্রিমিয়ামের অভিযোগে তালিকাভুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানায় স্টক এক্সচেঞ্জ। পরে কোম্পানি দুটি প্রিমিয়াম কমাবে এবং শেয়ারের দর একটি বিশেষ সময় পর্যন্ত নির্ধারিত পর্যায়ের নিচে নামবে না, এমন গ্যারান্টির পর তাদেরকে তালিকাভুক্তিতে রাজি হয় ডিএসই। এছাড়া ওরিয়ন ফার্মার তালিকাভুক্তি নিয়ে সে সময়ে ডিএসই পরিচালনা প্রকাশ্যে কমিশনের সমালোচনা করে। এসব কারণে পাবলিক ইস্যু বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেয় কমিশন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ আইপিওর অনুমোদন দিয়ে থাকে। দেশে এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে আইপিও অনুমোদনে কোনো প্রশ্ন উঠলে তার দায় স্টক এক্সচেঞ্জকেও নিতে হবে।

এদিকে কোম্পানির আইপিওর প্রসপেক্টাসে প্রকাশিত তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে ইস্যু ব্যবস্থাপকদের ডিউ ডিলিজেন্স সনদে কোনো ঘাটতি দেখা দিলে, সংশ্লিষ্ট ইস্যু ব্যবস্থাপককে কঠোর শাস্তির আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে কমিশন। পাবলিক ইস্যু বিধিমালার সংশোধনীতে এমন বিধান রাখা হচ্ছে। কমিশন মনে করে, ইস্যু ব্যবস্থাপকরা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। কোম্পানি প্রসপেক্টাসে যেসব তথ্য প্রকাশ করছে, ইস্যু ব্যবস্থাপকরা সেসব তথ্যের যথার্থতার সনদ দিচ্ছে। সঠিক যাচাই-বাছাই ছাড়াই তারা ডিউ ডিলিজেন্স সনদ দেয়ায় আইপিও অনুমোদনে কমিশন সমালোচিত হচ্ছে। ইস্যু ব্যবস্থাপকদের ডিউ ডিলিজেন্স সনদের পরও যদি কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বড় ধরনের জরিমানার বিধান রাখা হচ্ছে সংশোধনীতে।

উল্লেখ্য, পাবলিক ইস্যু বিধিমালার আলোকেই আইপিও অনুমোদন করা হয়। ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর এ বিধিমালাকে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেয়া হয়। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এম হাছান মাহমুদ ও পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিমের সমন্বয়ে দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের সুপারিশ জমা দিতে বলা হয়েছিল। জানা গেছে, ওই কমিটি তাদের খসড়া সুপারিশ প্রদান করেছে। ওই সুপারিশ পর্যালোচনা করে পাবলিক ইস্যু বিধিমালা সংশোধনের খসড়া  প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে কমিশন সভায় খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে। বণিকবার্তা।