Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

প্রবাসী আয়ের ৪৬ হাজার কোটি টাকা আসছে অবৈধ পথে

Remitance_sm_196698468ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে রেমিট্যান্স আসছে প্রতি বছর গড়ে ১৪ বিলিয়ন ডলার; স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। যদিও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলছে, এর বাইরে আরো ৩০-৪০ শতাংশ প্রবাসী আয় আসছে অবৈধ পথে বা হুন্ডির মাধ্যমে। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩৪-৪৬ হাজার কোটি টাকা।

আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় হলেও প্রবাসী আয়ের উল্লেখযোগ্য এ অংশ অবৈধ পথে দেশে আসছে। মুদ্রার বিনিময় মূল্য বেশি পাওয়ায় মূলত হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে প্রবাসীরা উত্সাহিত হচ্ছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতাও নেই এ ব্যবস্থায়।

chardike-ad

বাংলাদেশে রেমিট্যান্স নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইএলও। সেখানে অবৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর ব্যাপকতার কথা উঠে এসেছে। সংস্থাটির বাংলাদেশ কার্যালয় থেকে প্রকাশিত ‘ইন দ্য করিডোর অব রেমিট্যান্স: কস্ট অ্যান্ড ইউজ অব রেমিট্যান্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রবাসীরা দেশে পাঠান ১৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার। অঙ্কটা প্রবাসীদের পাঠানো মোট অর্থের ৬০-৭০ শতাংশ। অর্থাৎ এর বাইরে আরো ৪ দশমিক ৩ থেকে ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার এসেছে অবৈধ পথে।

হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর বেশকিছু কারণও আইএলও তাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে। তারা বলছে, বৈধ পথে টাকা পাঠাতে গেলে বিদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অনেক সময়ই রূঢ় আচরণের শিকার হতে হয়। পাশাপাশি টাকা পেতে কিছুটা সময়ও লাগে। অথচ হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো টাকা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পেয়ে যান প্রবাসীর স্বজনরা। এসব কারণেই দেশে স্বজনদের কাছে টাকা পাঠাতে হুন্ডিকেই বেছে নেন প্রবাসীদের অনেকে।

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) চেয়্যার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী বণিক বার্তাকে বলেন, সরকার প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর নগদ প্রণোদনা দিলে বৈধ পথে টাকা পাঠাতে উত্সাহিত হবেন তারা। পাশাপাশি প্রবাসে প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা শ্রমিকদের কাছে সেবা পৌঁছে দেয়ারও ব্যবস্থা করতে হবে। এগুলো করলে হুন্ডি কমে আসবে। মুদ্রা স্থানান্তর ফি কমানোর জন্য বৈশ্বিকভাবে দরকষাকষি করতে হবে সরকারকে।

কাগজপত্রহীন লেনদেন ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের অপরাধে ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে আইনটিতে। পাশাপাশি সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা, সম্পত্তি ক্রোক ও বাজেয়াপ্ত করার বিধানও রাখা হয়েছে। আর কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এ ধরনের অপরাধ করে, সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা জরিমানা ও নিবন্ধন বাতিল করার সুযোগ রয়েছে। তার পরও বন্ধ হচ্ছে না হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ।

সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ও দুদকের প্যানেল আইনজীবী খুরশেদ আলম খান বলেন, মানি লন্ডারিং আইনে সরাসরি হুন্ডি শব্দটি না থাকলেও এ আইনে যে ধরনের কর্মকাণ্ডকে অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য বলে চিহ্নিত করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম হুন্ডি। এরই মধ্যে হুন্ডি বিষয়ক কিছু মামলা হয়েছে। মামলাগুলোর অগ্রগতিও সন্তোষজনক। আইনটির অধীনে হুন্ডি-সংক্রান্ত মামলা বাড়লে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে।

হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসে বসেই শ্রমিক হুন্ডি ব্যবসায়ীর কাছে বিদেশী মুদ্রা দেন। হুন্ডি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অর্থপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়ে দেশীয় এজেন্ট প্রবাসী শ্রমিকের আত্মীয়স্বজনের কাছে টাকায় রূপান্তর করে তা পরিশোধ করে। এ ধরনের অবৈধ লেনদেনের জন্য একটি ফোন কলই যথেষ্ট।

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানার মুন্সীরহাটি গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মোতালেব। কয়েক বছর ধরে সিঙ্গাপুরে থাকেন তার ছেলে মমিনুল ইসলাম। কয়েক দিন আগে বাড়িতে ব্যাগ হাতে একজন লোক এসে জানতে চাইলেন, সিঙ্গাপুর থেকে তার ছেলে (মমিনুল) ফোন করেছিলেন কিনা। হ্যাঁ সূচক জবাব দিলেন মোতালেব। স্বাক্ষর নিয়ে ৫০ হাজার টাকা মোতালেবকে দিয়ে গেলেন হুন্ডি ব্যবসায়ীর ওই এজেন্ট। ১-২ ঘণ্টার মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে গেল পুরো প্রক্রিয়াটি। শুধু মমিনুল নন, এ পদ্ধতিকে অর্থ পাঠান এ অঞ্চলের অধিকাংশ প্রবাসী শ্রমিক।

অবৈধ পথে লেনদেন রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো বিপণন কৌশল শক্তিশালী করেছে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স আকর্ষণে এসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া ২০১২ সালে মানি লন্ডারিং আইন করা হয়েছে, যা হুন্ডি ব্যবসায়ীদের জন্য কিছুটা ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘রেমিট্যান্স বাড়াই প্রমাণ করে হুন্ডি কমেছে। পৃথিবীর কোনো দেশই হুন্ডি পুরোপুরি বন্ধ করতে পারেনি। তবে কমিয়ে আনা সম্ভব। আমরা ঘুরে ঘুরে প্রবাসী শ্রমিকদের সচেতন করছি। অল্প কিছু টাকা বেশি পাওয়ার জন্য তারা এখন আর হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতে চান না।’

উল্লেখ্য, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে। সর্বশেষ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।