Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

তারেক রহমানকে অর্থ জোগান ৫০ প্রবাসী

tarek

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে বসে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কলকাঠি নেড়েই চলেছেন। তাঁর কথাবার্তায় দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। দেশে নাশকতা চালানোর পেছনেও তাঁর হাত রয়েছে। তাঁর ইন্ধনেই জামায়াত-শিবির এবং বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা দেশে নাশকতা, সহিংসতা চালিয়ে আসছে। রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

chardike-ad

তারেক রহমানকে আর্থিকভাবে যাঁরা সহায়তা করছেন তাঁরা মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও আবুধাবিতে বসবাস করছেন। তাঁদের সংখ্যা কমপক্ষে ৫০ জন। তাঁদের প্রোফাইল তৈরি করছেন গোয়েন্দারা। দেশে তাঁদের আত্মীয়স্বজনের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। দেশের কয়েকজন ব্যবসায়ীও তারেককে অর্থ জোগাচ্ছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় নড়েচড়ে বসেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। যুক্তরাজ্য থেকে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে পুলিশ। এ ব্যাপারে সরকারের নীতিনির্ধারকদের সবুজ সংকেত পেয়েছে তারা। এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রক্রিয়াও চালানো হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল সোমবার বলেন, ‘বিদেশের মাটিতে বসে তারেক রহমান দেশে অরাজকতা চালিয়ে যাচ্ছে। সে সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তদের উসকে দিচ্ছে। দেশে নাশকতার জন্য তারেক শতভাগ দায়ী। সে একজন ফেরারি আসামি। তার বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ একাধিক মামলা আছে। তাকে দেশে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হবে। ইতিমধ্যে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘অনেক প্রবাসী তাকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করছেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তাঁদের ব্যাপারেও আমরা হার্ডলাইনে যাব। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

প্রসঙ্গত, ওয়ান-ইলেভেন সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ মার্চ ক্যান্টনমেন্টের বাসভবন থেকে তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। এক বছর পাঁচ মাস ২৫ দিন কারাবন্দি ছিলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পরে এসব অভিযোগের নিরিখে একাধিক মামলা দায়ের করা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। বন্দি অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য তিনি দেশের বাইরে যাওয়ার আবেদন করেন তৎকালীন সরকারের কাছে। সরকার শর্তসাপেক্ষে তাঁকে যুক্তরাজ্য যাওয়ার অনুমতি দেয়। ২০০৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর প্যারোলে ছাড়া পান তিনি। কয়েক দিন পর চিকিৎসার জন্য তিনি পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। সেখানে গিয়ে তিনি বেশ কিছুদিন চুপচাপই ছিলেন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপিসহ ১৮ দলীয় (বর্তমানে ২০ দলীয়) জোটের রাজনৈতিক দৈন্যদশায় তিনি আর স্থির থাকতে পারেননি। সরকারের বিরুদ্ধে তিনি একাই জিহাদ ঘোষণা করেন। দেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে নানা কথা বলতে শুরু করেন। এসব নিয়ে দেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। সরকারপক্ষ থেকে বলা হয়, তাঁর উসকানিতে দেশে নানা ধরনের সহিংসতা সংঘটিত হয়। জামায়াতের বিরুদ্ধে কৌশলে কথাবার্তা বলে আবার তাদেরই গোপনে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করতে সহায়তা করছেন।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চিত হয়েছে, তারেক রহমান প্রতিনিয়ত গোপনে বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের দিকনির্দেশনা দিয়ে চলেছেন। নাশকতা চালানোর জন্য তিনি অর্থও জোগান দিচ্ছেন।

৫০ প্রবাসীর আর্থিক সহায়তা : লন্ডনে যাওয়ার পর থেকেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা তারেক রহমানকে নানাভাবে সহায়তা করে আসছেন বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চিত হয়েছে। তাঁরা হলেন যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও আবুধাবিতে (সংযুক্ত আরব আমিরাত) অবস্থানরত বাংলাদেশিরা। তাদের প্রোফাইল তৈরি করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। একাধিক অর্থ জোগানদাতা প্রায়ই বাংলাদেশে আসেন। তারেকের পক্ষ হয়ে তাঁরা গোপনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে দিকনির্দেশনা নিয়ে যান। লন্ডনে গিয়ে তাঁরা তারেক রহমানের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা বলেন, যাঁরা তারেক রহমানকে অর্থ জোগান দিয়ে সহায়তা করছেন তাঁরা বিএনপির আদর্শের অনুসারী। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় তাঁরা মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে বিদেশে চলে যান। তাঁদের বায়োডাটা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। তাঁদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা, বগুড়া, সিলেট, হবিগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলায়।

ওই দুই কর্মকর্তা বলেন, ‘মালয়েশিয়াপ্রবাসী মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া প্রতি মাসে অন্তত এক কোটি টাকা তারেক রহমানকে দিচ্ছেন বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। দুবাইপ্রবাসী কুমিল্লার জুলহাস, মালয়েশিয়াপ্রবাসী বগুড়ার মোস্তাফিজুর রহমান, সৌদিপ্রবাসী টাঈাইলের রোস্তম আলীসহ অন্তত অর্ধশত প্রবাসী তাঁকে সহায়তা করছেন। দেশের কিছু ব্যবসায়ীও তাঁকে সহায়তা করছেন। তাঁদের গবিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’

লন্ডনে তারেকের ব্যয় মেটানো হয় যেভাবে : আমাদের সিলেট ব্যুরোপ্রধান আহমেদ নুর জানান, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেক রহমানের অর্থের জোগানদাতা প্রবাসী বিএনপি নেতারাই। একসময় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কমর উদ্দিন তাঁর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর এখন কেউ তারেককে একক পৃষ্ঠপোষকতা দেন না। লন্ডনপ্রবাসী বিভিন্ন ব্যক্তি তাঁকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন। তাঁর ব্যয়ের একটি অংশ দেশ থেকেও পাঠানো হয়।

বিএনপি ঘরানার একজন শীর্ষ ব্যবসায়ী, যিনি দেশেই থাকেন, তারেক রহমানকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন। দেশের ও লন্ডনের বিএনপি-ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। লন্ডনে তারেক রহমানের দুটি বাড়ির ভাড়া এবং চিকিৎসা খরচ, সংসার খরচ ও স্ত্রী-সন্তানের লেখাপড়ার খরচ মিলিয়ে মাসে কমপক্ষে ছয় হাজার পাউন্ড প্রয়োজন হয়। এর একাংশ আসে প্রবাসী বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে। বাকি অংশ যায় দেশ থেকে। তবে তারেক রহমানের মেয়ের পড়াশোনার খরচ এখনো বহন করছে কমর উদ্দিনের পরিবার।

কমর উদ্দিনের মৃত্যুর পর তারেক রহমানের একক পৃষ্ঠপোষকতা শেষ হয়ে যায়। তখন দলের প্রবাসী সদস্যরা তাঁকে অর্থ সহায়তা দিতে শুরু করেন। যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক কয়ছর আহমদ ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মুহিদুর রহমান এখন যুক্তরাজ্যে তারেক রহমানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজন। সবাই সিলেটের লোক। এ ছাড়া ব্যারিস্টার এম এ সালাম, মোহাম্মদ সায়েম, তপন, জুয়েল মল্লিকসহ আরো কয়েকজন লন্ডনে তারেক রহমানের কাছের লোক বলে পরিচিত। ক্যামব্রিজ ও অঙ্ফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কয়েকজন শিক্ষক-গবেষক তারেক রহমানের উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন। উপদেষ্টা পরিষদের বিষয়টি দেখাশোনা করেন বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর লন্ডনপ্রবাসী মেয়ে।

লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয় : সূত্র জানায়, চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে গেলেও কিছুদিন পর তিনি সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন। আট মাস আগে আদালত তাঁর পক্ষে রায় দেন এবং তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেন। পরে ব্রিটিশ সরকার তাঁর নামে একটি বাড়ি বরাদ্দ দেয়। কিন্তু তিনি সেই বাড়িতে না থেকে ভাড়া বাড়িতেই থাকছেন।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ