Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আন্দোলনে বিএনপির নতুন ছক

Khaleda-Ziaটানা অবরোধ-হরতালের মধ্যেই আন্দোলনের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে বিএনপি। একই সমান্তরালে চলবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা। আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে ঢাকায় বড় ধরনের শো ডাউনের কথাও ভাবা হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের আরো সক্রিয় করতে এ ধরনের কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে বলে আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত একাধিক নেতা জানিয়েছেন। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এ মাসের মধ্যে যে কোন সময় মাঠে নামতে পারেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের নেতা-কর্মীরা।

অন্যদিকে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আন্দোলন প্রশ্নে অনমনীয় অবস্থানে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। খুব শিগগিরই আন্দোলনের ফল পাওয়া যাবে এমন ‘বার্তাও’ তার কাছে রয়েছে বলে একাধিক নেতা জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কথা বলেছেন জাতিসঙ্ঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। এই আলাপে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে তারা কথা বলেছেন।

chardike-ad

একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট উত্তরণ সম্ভব বলে তারানকোকে জানান বিএনপি চেয়ারপারসন। আমেরিকায় অবস্থানরত দলের একজন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য খালেদা জিয়া-তারানকোর মধ্যকার সম্প্রতি এই ফোনালাপের সময় উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, অবরোধের ৪৩ দিন পার হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে সারাদেশে ২০ দলের ৩০ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ক্রসফায়ার, হত্যা, গুমে’র শিকার হয়েছেন প্রায় এক’শ নেতা-কর্মী। অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। সারাদেশে নেতা-কর্মীরা ঘড়বাড়ি ছাড়া। এ অবস্থায় বিএনপির সামনে আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে পেছনে ফেরার কোন সুযোগ নেই।

বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, অবরোধ রেখেই আন্দোলন কৌশলে নতুন মাত্রা যোগ করার চিন্তাভাবনা চলছে। সেক্ষেত্রে ‘একগুয়েমী’ কাটাতে নেতা-কর্মীদের কিভাবে মাঠে নামানো যায়, তা গুরুত্ব সহকারে ভাবা হচ্ছে। আন্দোলনের সাথে যুক্ত নেতারা বলছেন, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নেতা-কর্মীরা সরকারের ‘দমন কৌশল’ এড়িয়ে আন্দোলনে রয়েছেন। মাঠে নেমে একত্রে শো ডাউন করতে পারলে এই আন্দোলন আরো বেগবান হবে। সরকারকেও ২০ দলের ‘শক্তি’ সম্পর্কে জানান দেয়া যাবে।

দলের শীর্ষ এক নেতা জানান, ২০ দলীয় জোট প্রধান বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলন শুরুর পর তার ছেলেকে হারিয়েছেন। একদিকে যেমন তাকে শোক বইতে হচ্ছে, অন্যদিকে তিনি রয়েছেন ‘গৃহবন্দি’ অবস্থায়। তারপরেও কঠিন মনোবলকে সঙ্গী করে তিনি আন্দোলন চালিয়ে নিচ্ছেন। ‘বিজয়’ অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি পিছপা হবেন না। প্রয়োজনে মার্চ জুড়েও আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন তিনি।

গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সাথে ৩ জানুয়ারি থেকে অবস্থান করছেন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা। তিনি আন্দোলন প্রশ্নে খালেদা জিয়ার অবস্থান তুলে ধরে বলেন, ‘কঠোর মনোভাব ও যথেষ্ট দৃঢ়তা নিয়েই আন্দোলন প্রশ্নে অনমনীয় অবস্থানে রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বিশ্বাস করেন, খুব কম সময়ের মধ্যেই আন্দোলন একটি যৌক্তিক পরিণতির দিকে এগিয়ে যাবে।’ শিরিন সুলতানা বলেন, ‘খালেদা জিয়া মনে করেন, চলমান আন্দোলন ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারের আন্দোলন। ইতোমধ্যে এই আন্দোলনে জনগন স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে। অনেক রক্ত ঝড়েছে। এই অবস্থায় দাবি আদায় না করে পিছু হটার কোন সুযোগ নেই।’

শিরিন সুলতানা বলেন, ‘আমরা যখন ম্যাডামকে গ্রেফতার করা হতে পারে এমন কথা বলি, তখন তিনি বলেন, গ্রেফতার করুক। আমাকে তো ওরা বন্দি করেই রেখেছে।’

মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক জানান, খালেদা জিয়া আন্দোলনের এই পর্যায়ে এসে সবাইকে ধৈর্য্য সহকারে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন।

গত ৩ জানুয়ারি থেকে গুলশান কার্যালয়েই অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তার ডাকে ৬ জানুয়ারি থেকে দেশ জুড়ে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চলছে। এর মধ্যেই গুলশান কার্যালয় ঘিরে বহু বৈরী ঘটনার জন্ম হয়। খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ, টেলিফোন লাইন, ডিস লাইন, ইন্টারনেট লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। বিদ্যুৎ সংযোগ ২০ ঘন্টা পর চালু করে দেয়া হলেও অন্যান্য সংযোগ এখনো স্বাভাবিক হয়নি। কার্যালয়ে খাবার প্রবেশেও এখন বাধা দেয়ার নিত্য অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
কার্যালয়ের অবস্থানকারী নেতারা জানান, ‘এরকম নানামুখী প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আন্দোলন প্রশ্নে দৃঢ়চেতা রয়েছেন বেগম জিয়া। দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলছেন, ‘আন্দোলন সুনির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছবেই’।