Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ব্রিটেনে গুরদুয়ারার ফ্রি খাবার

britain

শিখদের ধর্মপ্রধান গুরু নানক। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন গুরদুয়ারা। এটি শিখদের প্রার্থনালয়। প্রায় ৫০০ বছর আগে ভারতবর্ষে গুরু নানকের হাতে প্রতিষ্ঠিত গুরদুয়ারা এখন বিশ্বজুড়ে দেখা যায়। ভারতের বাইরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গুরদুয়ারা ব্রিটেনের সাউথহলে অবস্থিত। এটির নাম গুরু সিং সভা গুরদুয়ারা। এ ছাড়া ব্রিটেনের সব অঞ্চলেই গুরদুয়ারা রয়েছে।

chardike-ad

এই গুরদুয়ারার বিনামূল্যের খাবার শুধু ব্রিটেনের শিখদের কাছে নয়, ব্রিটিশদের কাছেও অমৃতের মতো। বিশেষ করে গৃহহীন ব্রিটিশরা প্রতিদিন এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন রোববার লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার নেয়। এই খাবারের জন্য কানাকড়ি মূল্যও পরিশোধ করা লাগে না। শিখ স্বেচ্ছাসেবকরা আন্তরিকতার সঙ্গে তা পরিবেশন করেন। গুরদুয়ারার খাবার নিতে দিন দিন শিখদের চেয়ে ব্রিটিশদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।

ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলিম ও হিন্দুদের বর্ণে-বর্ণে যে চরম বিভাজন ছিল, তার পরিবর্তে সবাইকে এক কাতারে এনে শান্তি প্রতিষ্ঠাই ছিল গুরু নানকের ব্রত। এ জন্য তিনি বিশেষ একটি উদ্যোগ হাতে নেন। সবাই যেন একই খাবার গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে পারস্পরিক বিভেদ ভুলে শান্তির পথে আসে, এ জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘লঙ্গর’। এই লঙ্গরের খাবার সবার জন্য উন্মুক্ত। শৃঙ্খলার সঙ্গে লাইনে দাঁড়ালে সবাইকে লঙ্গরের খাবার দেওয়া হয়।

britain 2ব্রিটেনের সাউথহলের গুরু সিং সভা গুরদুয়ারার লঙ্গর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার মানুষের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করা হয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন রোববার তা ১০ হাজারে দাঁড়ায়। প্রতিটি গুরদুয়ারা থেকে এই খাবার বিতরণের কাজ চলে আসছে বহু আগে থেকে। এটি শিখ ধর্মের ঐতিহ্য।

গুরু সিং সভা গুরদুয়ারার ব্যবস্থাপনাদলের সদস্য সুরিন্দর সিং পুরেওয়াল জানিয়েছেন, লঙ্গরের খাদ্য প্রস্তুত ও বিতরণের যাবতীয় দায়িত্ব আমাদের। খাদ্য গ্রহণের জন্য কাউকে এখানে কোনো অনুদান বা স্বেচ্ছাসেবা দিতে হয় না।

তবে বিবিসির অনুসন্ধান বলছে একটু ভিন্ন কথা। ২০০৮ সাল থেকে ব্রিটেনে মহামন্দা দেখা দেওয়ার পর লঙ্গরের খাদ্য নিতে আসা ব্রিটিশদের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যায়। গৃহহীন ও দরিদ্র ব্রিটিশরা লাইনে দাঁড়িয়ে খাদ্য নেয়। এই বিষয়কে অর্থনৈতিক সূচক পড়ে যাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন কোনো কোনো বিশ্লেষক। তবে লঙ্গরের খাবার নিতে আসা মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেলেও তাতে কোনো অস্বস্তি নেই গুরদুয়ারার ব্যবস্থাপকদের। যারা আসে সবাইকে তারা খাবার দেন।

সুরিন্দর সিং পুরেওয়াল এ সম্পর্কে বলেন, লঙ্গরের খাবার নিতে যেই আসুক, আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমাদের ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রেখে শৃঙ্খলার সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে যে-ই আসবে, তাকেই আমরা স্বাগত জানাই।

এখন লঙ্গরের খাবার নিতে গুরদুয়ারায় না গেলেও চলে। অনেক শিখ রাস্তার মোড়ে মোড়ে লঙ্গর নিয়ে বসেন। একটু বলে রাখি, লঙ্গর মানে রান্নাঘর। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে রান্নাঘরের ধারণাও পাল্টে গেছে। এখন গাড়িতে রান্নাঘর থাকে। এ ধরনের রান্নাঘর নিয়ে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করে থাকেন শিখ স্বেচ্ছাসেবকরা।

তবে খাবার মেনু নির্দিষ্ট। পুরোটাই নিরামিষ। সঙ্গে পানীয়, স্যুপ, কপি তো থাকেই। এর মধ্যে যার যেটি পছন্দ, সে সেটি নিতে পারে।

সুুরিন্দর সিং পুরেওয়াল তাদের কাজ সম্পর্কে বলেন, গুরদুয়ারার শিক্ষা হলো- অপরকে সাহায্য করা, প্রতিবেশীকে সাহায্য করা। আমরা খাদ্য বিতরণের মধ্য দিয়ে তা-ই করে যাচ্ছি।