Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মোবাইল ফোনে রেকর্ড আতঙ্ক!

phoneদেশের মোবাইল গ্রাহকরা হ্যাকিং আতঙ্কে পড়েছেন। ইন্টারনেটে হ্যাকিং আতঙ্কে যখন সারাবিশ্বে তোলপাড় চলছে। ঠিক সেই সময় বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের কথোপকথন রেকর্ড বা হ্যাকিংয়ের খরবে ঝড় বইছে।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার দুটি টেলিফোন কথোপকথন ফাঁসের পর দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়েছে। ‘জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠকে আগ্রহী মান্না’ এবং ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ চান মান্না’ শিরোনামে দুটি অডিওবার্তা ছড়িয়ে পড়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন তিনি।

chardike-ad

মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ ৩ জনের ‘কথোপকথন’ এর তথ্য ফাঁসের পর মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, হাট-বাজারসহ সর্বত্রই মান্নার ফোনালাপ নিয়েই তর্ক-বিতর্ক চলছে। আর ফেইসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমও বিষয়টি চাঙ্গা করে তোলা হয়েছে। এ বিষয়ে মাহমুদুর রহমান মান্নার বক্তব্য হচ্ছে- তার ফোনালাপ সত্য। সোমবার সংবাদ মাধ্যমকে তিনি আরো বলেন, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা এবং একজন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথোপকথনের অংশে তার বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

অপর দিকে মাহমুদুর রহমান মান্নার এ ফোনালাপকে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সরকারী দলের নেতাকর্মীরা। সরকার দলের বিভিন্ন মন্ত্রীসহ নেতাকর্মী এমনকি ছাত্রলীগের নেতারা তাকে গ্রেফতারের দাবি জানান। এরই প্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তার বিরুদ্ধে প্রায় ৩০টি জিডি করা হয়। এরপর সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে সাদা পোষাকের লোকজন বনানীর একটি বাসা থেকে তাকে আটক করে নিয়ে যায়। এ খবর দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারের পর সারাদেশে মোবাইল ফোন গ্রাহকদের মাঝে আতঙ্কের ঝড় বইছে।

নারায়ণগঞ্জের ওয়ার্ড কমিশনারসহ ৭ জনকে অপহরণের দুই দিন পর ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল রাত সাড়ে নয়টার দিকে শামীম ওসমানকে ফোন করেন নূর হোসেন। দুই মিনিটের মতো কথা হয় তাঁদের মধ্যে।

তাতে সেভেন মার্ডার মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করার কথা উঠে আসে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে।

নূর হোসেনের সঙ্গে শামীম ওসমানের কথোপকথনের একটি অডিও প্রকাশ করা হয়। মোবাইল ফোন থেকে হ্যাকিং করা তাদের কথোপকথন সংবাদ মাধ্যমে করা প্রচার হয়। তখন ওই ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। তখনকার বিষয়টি নিয়ে এতো বেশি তোলপাড়ও হয়নি। যা মাহমুদুর রহমানকে আটকের পর শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তাঁর কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, মোবাইল ফোন হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট নম্বর ব্যবহার করে গ্রাহকের অগোচরেই হ্যাকাররা কল করছে। কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের ঘটনা সারা দুনিয়াতে প্রকাশ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাহমুদুর রহমান মান্নার ঘটনার পর মোবাইল গ্রাহকরা নতুন আতঙ্কে পড়েছেন। প্রেম-ভালোবাসা, পারিবারিক ও ব্যবসায়ীক আলাপ এমনকি স্বামী-স্ত্রীর একান্ত আলাপচারিতায় অজনা শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

গ্রহকের মোবাইল ফোন কখন হ্যাকাররা হ্যাক করছে তা টেরও পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে যাদের মোবাইল সেটে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই মোবাইলে কথোপকথন খুব সহজেই হ্যাকারা হ্যাক করছে। আর যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন না, তাদের মোবাইলও হ্যাক করা হচ্ছে। এতে ব্যক্তিগত সব তথ্য কপি করে নিয়ে যাচ্ছে হ্যাকাররা। এমনকি নিজের মোবাইল নম্বরটি ব্যবহার করে হ্যাকাররা সহজভাবেই কথা বলে যাচ্ছে, যা মোবাইলের গ্রাহক টেরও পাচ্ছেন না। এমন এক আতঙ্ক এখন সারাদেশে বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রযুক্তির উন্নতির কারণে হ্যাকাররা মোবাইল গ্রাহকদের ব্যক্তিগত সব তথ্যই রেকর্ড করতে পারে। হ্যাকারা গ্রাহকের নম্বর ব্যবহার করেই কল করছে, এসএমএস পাঠাচ্ছে, এমনকি মোবাইল ফোনে সংরক্ষিত সব ধরনের অডিও-ভিডিও ফাইল, ফোন নম্বর, ফোনে ব্যবহার করা পাসওয়ার্ড, ব্যাংক এ্যাকাউন্ট নম্বর সব কিছুই কপি হয়ে তাদের কাছে যাচ্ছে। আর কল রেকর্ড ব্লক সব কিছুই এখন হ্যাকরদের নখদর্পণে। মোবাইল হ্যাকারগোষ্ঠী এমনই শক্তিশালী যে বিশ্বের যে কোন তথ্য জানতে তাদের খুব একটা বেগ পোহাতে হচ্ছে না।

জানা যায়, ভারতে মোবাইল হ্যাকিং নিয়ে সরকারের বড় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোবাইল ফোন হ্যাকিংয়ের কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে বিএনপি নেতা ও এক অজ্ঞাত ব্যক্তির কথোপকথন প্রকাশের পর হ্যাকিংয়ের বিষয়ে দেশের মানুষ সতর্ক হয়েছেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ীসহ সকল পর্যায়ের নাগরিকদের মধ্যে বাড়তি সতর্কতা শুরু হয়েছে।

দেশের মোবাইল গ্রাহকদের কাছে এর আগে অপরিচিত কোড (+৯) দিয়ে ফোন কল আসার বহু নজির রয়েছে। ওই ফোন রিসিভ করার পর গ্রাহকের টাকা কেটে নেয়া হয়েছে। দেশের মোবাইল ফোন সিম ক্লোনিংয়ের ঝুঁকি খুবই বেশি বলেও অভিজ্ঞমহল বলে আসছিলেন। তারা বলেছেন, ক্লোনিং কিংবা হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু বিষয়টি অজ্ঞতার কারণে কেউ জানতে পারছেন না।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন (বেসিস) এর সাবেক প্রেসিডেন্ট হাবিবুল্লাহ এন করিম শীর্ষ নিউজকে জানান, মোবাইল ফোন রেকর্ড করা বা হ্যাকিং সারা পৃথিবীতেই হচ্ছে। যাদের প্রযুক্তি শক্তিশালী তারাই এটা করতে পারেন। আমেরিকা, ইংল্যান্ডেও হ্যাকিং করা হচ্ছে। আর এই হ্যাকিং বা রেকর্ড করার কথা কেউ স্বীকার করছেন, আবার কেউ স্বীকার করছেন না। এটা ঠিক এদেশেও হ্যাকিং বা রেকর্ড করা হচ্ছে। কিন্তু পরিষ্কারভাবে করলে ভাল হয়।

তিনি আরো বলেন, টেরোরিজম বা তালেবানের সঙ্গে কেউ নাশকতার কথা বলছেন কিনা, তা ধরার জন্য সরকার এমনটি করতে পারে। শুধু বাংলাদেশ সরকাই নয়, আমেরিকাও বাংলাদেশের ফোন কলগুলো হ্যাকিং বা রেকর্ড করছেন। দেশের মোবাইল বা ফোন কল রেকর্ড আগে না করা হলেও এখন সরকারের কাছে প্রযুক্তি রয়েছে। ফলে এটা করা এখন অনেকটাই সহজ।