Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সৌদি যেতে নিবন্ধনে সাড়া নেই নারীদের

housemaidsসৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে যেতে ইচ্ছুক নারীদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিন আজ বৃহস্পতিবার। কয়েকদিনের প্রচারের পর ঢাকা বিভাগ দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে জেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত এতে তেমন সাড়া মেলেনি। আর ঢাকা নগরীর চিত্র আরও ভয়াবহ। দিনভর ঢাকার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে স্থাপিত ডিজিটাল কেন্দ্রে কর্মকর্তারা কাগজপত্র নিয়ে বসে থাকলেও তাদের ফিরতে হয়েছে খালি হাতে।

বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সামনে স্থাপিত ডেস্কসহ রাজধানীর কয়েকটি ওয়ার্ডে ঘুরে এবং ঢাকার বাইরের খোঁজ নিয়ে পাওয়া গেছে এমন চিত্র।

chardike-ad

ডিজিটাল কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, সৌদি আরবে নারীদের নির্যাতন ও প্রস্তাবিত বেতন অনেক হওয়ায় কেউ নিবন্ধন করতে আসছেন না। অন্যদিকে পূর্বেই অনেকে নিবন্ধিত হওয়ায় ও প্রচার পর্যাপ্ত না হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৫ ওয়ার্ডের ডিজিটাল সেন্টারের কর্মকর্তা সুলতানা আক্তার বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে বলেন, সরকার আমাদের নিবন্ধনের নির্দেশ দিয়েছে। সকাল থেকে বসে থেকে একজনও নিবন্ধনকারীকে পাইনি। বরং কেউ কেউ এসে নানান অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে বাসায় কাজ করলে একজন মহিলা মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। অন্যদিকে সরকার সৌদি সরকারের সঙ্গে মাত্র ১৬ হাজার টাকায় চুক্তি করেছে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবার-পরিজন রেখে কেউ সৌদি আরব যেতে ইচ্ছুক নয়।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সৌদি সরকারের চাহিদার আলোকে আজ থেকে গৃহকর্মীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে ঢাকা বিভাগের নিবন্ধন শুরু হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ড ও জেলা পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল কেন্দ্রে এ নিবন্ধন আগামী ১১ মার্চ পর্যন্ত চলবে। প্রথম দিন শেষে নির্দিষ্ট সংখ্যা না বললেও নিবন্ধন খুবই কম হয়েছে বলে স্বীকার করেছে মন্ত্রণালয় সূত্র।

জনশক্তি রপ্তানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) মহাপরিচালক বেগম শামসুন্নাহার বলেন, নারীদের নিবন্ধন শুধু সৌদি আরবের জন্য হচ্ছে না। যেকোনো দেশের জন্য এ নিবন্ধন। প্রচার কম হওয়ায় প্রথম দিনের নিবন্ধনে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি।

সিটি কর্পোরেশনের কয়েকটি ওয়ার্ডের ডিজিটাল কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকায় এ নিবন্ধের হার নেই বললেই চলে। খোঁজ নেওয়া ১০টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ২টিতে পাওয়া গেছে একজন করে নিবন্ধনকারী। আর বাকী সবগুলোতেই শূন্য। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১২, ২৯, ০৪ ও ৪৫ ওয়ার্ডে সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত একজন নারীও আসেননি নিবন্ধন করতে। আর উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৪, ১৬ ও ২৮ নং ওয়ার্ডে যোগাযোগ করেও পাওয়া গেছে একই চিত্র।

১৩নং ওয়ার্ডের ডিজিটাল কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক তালুকদার বলেন, গত কাল পুরো এলাকায় মাইকিং ও পোস্টারিং করেছি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে একজনও নিবন্ধনকারী পেলাম না। এখন পোস্টারিং ও মাইকিংয়ের খরচ তুলতে পারবো কি না সে শঙ্কায় রয়েছি।

তিনি বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তিতে নারীদের বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১৬ হাজার টাকা। এ টাকা নারীরা আমাদের দেশে বসেই আয় করতে পারেন। গার্মেন্টস কর্মীদের বেতন এখন ১০ থেকে ১২ হাজার। তাই কেউ সৌদি যেতে ইচ্ছুক নয় বিধায় নিবন্ধন করতে আসে না।
১৪নং ওয়ার্ড ডিজিটাল কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শিরিন জাহান সুমী বলেন, দেশের সর্বত্রই প্রচলিত সৌদি পুরুষরা গৃহকর্মীদের নির্যাতন করে। অনেকে তাদের কাছে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে ফিরেও এসেছে। তাই এত কম বেতনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নতুন করে কেউ যেতে চাইছে না।
কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা বেতন হলে বাংলাদেশের নারীরা যেতে ইচ্ছুক বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার ইফতেখার হায়দার বলেন, সরকারি ডাটাবেজে আগে থেকেই প্রায় ২ লাখ নারীর নিবন্ধন রয়েছে। এখন যে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তার প্রচার ভালোভাবে হয়নি বলে সাড়াও মেলেনি। আর বেতনের বিষয়টিতে আমাদের কিছু করার ছিল না। সৌদি সরকার এর চেয়ে বেশি দিতে ইচ্ছুক নয়। এর মধ্যে কেউ যেতে চাইলে পাঠাবো; আমরা কাউকে জোর করবো না।

সূত্রঃ অর্থসূচক