Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ইবাদতের পর কর্মের তাগিদ

islamঅর্থনৈতিক উত্থান-পতনে দিশাহারা মানবজীবনে মুক্তির বারতা নিয়ে বিশ্ব মানবতার কাছে হাজির হয়েছিলেন হজরত মুহাম্মাদ (সা.)। পারলৌকিক মুক্তির জন্য যেমন নামাজ ও জাকাতের মতো বিধান প্রণয়ন করেছেন, তেমনি ব্যক্তিগত জীবনে স্বনির্ভরতার জন্য প্রত্যেককে উদ্যোগী হওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন। নামাজ শেষ করেই রিজিক অনুসন্ধানে বের হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। ‘আমি বোঝা হব না কারও পিঠে’ এ বলিষ্ঠ শপথে উজ্জীবিত করে কর্মের প্রেরণা ছড়িয়ে দিয়েছেন সবার মাঝে।

স্বাবলম্বনের পথ ছেড়ে পরাশ্রয়ী হওয়া মোটেও পছন্দ ছিল না তাঁর। ব্যবসা, শ্রম বিক্রি কিংবা দাওয়াতি কাজ যাই হোক; হোক ঘরে কী বাইরে, সারা জীবনই মহানবী (সা.) থাকতেন কর্মব্যস্ত। কৈশোরে বেকার বসে থেকে চাচার সংসারে বোঝা না হয়ে চরিয়েছেন মেষ। অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও যৌবনে রেখেছেন সফল ব্যবসায়ীর কৃতিত্বের স্বাক্ষর। তাঁর বাণিজ্যিক সফলতার কথা সে সময়ই ছড়িয়ে পড়েছিল চতুর্দিকে।

chardike-ad

নিজ হাতে উপার্জনই মহানবী (সা.) এর পরম শিক্ষা। হজরত রাফে ইবনে খাদিজ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল সর্বোত্তম উপার্জন কোনটি? জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তির নিজস্ব শ্রমলব্ধ উপার্জন ও সততার ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয়।’ (মুসনাদে আহমাদ)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কারোর নিজ পিঠে কাঠের বোঝা বয়ে এনে বিক্রি করা কারও কাছে হাত পাতার চেয়ে উত্তম। তাকে (প্রার্থীকে) সে কিছু দিক বা না দিক।’ (বোখারি-মুসলিম)।

খ্যাতিমান সাধক শাকিক বলখি (রহ.) একবার ব্যবসায়ের উদ্দেশে সফরে বের হন। তার বাণিজ্যিক সফরের কথা জানান স্বীয় সাধকবন্ধু জগদ্বিখ্যাত ওলি ইবরাহিম ইবনে আদহাম (রহ.) কে। একে অপরকে বিদায় জানান। দেখা হবে অনেক দিন পর। কিন্তু একি! ক’দিন যেতে না যেতেই ফিরে এলেন শাকিক বলখি। হজরত ইবরাহিম ইবনে আদহাম (রহ.) তাকে মসজিদে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলেন যে! বলখি বললেন, সফরে এক আজব ঘটনা দেখে ফিরে এলাম। আদহাম বললেন, আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন! কী সে ঘটনা? বলখি বললেন, পথে ক্লান্ত হয়ে বিশ্রামের জন্য একটি বিরান ঘরে আশ্রয় নেই। চোখে পড়ে একটি অন্ধ পাখি। পাখিটি অচল। অবাক হয়ে ভাবলাম, জনমানবহীন স্থানে এ অন্ধ পাখিটি কীভাবে বেঁচে আছে! চোখে দেখে না, নড়াচড়া করতে পারে না। এরই মধ্যে লক্ষ্য করলাম, একটি পাখি এলো কিছু খাবার নিয়ে। পাখিটি দিনে কয়েকবার খাবার নিয়ে আসে। অন্ধ ও অচল পাখিটির জন্য খানাপিনার এ আয়োজন দেখে ভাবলাম, যিনি এ নির্জনে একটি অচল পাখিকে খাওয়াতে পারেন, তিনি তো আমার জীবিকারও ব্যবস্থা করতে সক্ষম। এ ভেবে ফিরে এলাম।

কাহিনী শুনে ইবরাহিম ইবনে আদহাম (রহ.) বললেন, শাকিক! খুবই আশ্চর্য হলাম আপনার কথায়। আপনি কীভাবে একটি অন্ধ পাখির পথ বেছে নিলেন! সে তো বেঁচে আছে অন্যের ওপর ভরসা করে। আপনি কেন ওই পাখিটির পথ অবলম্বন করতে পারলেন না, যে নিজের জীবিকার সংস্থান করার পাশাপাশি আরেকটি অন্ধ ও অক্ষম পাখির অন্ন সংস্থানও করছে। আপনার কি জানা নেই, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘দাতার হাত গ্রহীতার হাতের চেয়ে উত্তম।’

এ কথা শুনে শাকিক বলখি (রহ.) ইবরাহিম আদহামের হাতে চুমু খেয়ে বলেন, হে আবু ইসহাক! সত্যিই আপনি আমাদের শিক্ষক! অতঃপর শাকিক বলখি ব্যবসায় ফিরে গেলেন। (মুশকিলাতুল ফাকর; ড. ইউসুফ আল কারজাবি, পৃষ্ঠা-৪০)। সূরা জুমার ১০নং আয়াতে উপার্জন চিন্তা বাদ দিয়ে অলসভাবে মসজিদে বসে না থেকে নামাজ শেষ করেই জীবিকার সন্ধানে বের হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ আয়াতের ব্যখ্যায় ইমাম কুরতুবি লিখেছেন, ‘যখন নামাজ শেষ হয়ে যাবে তখন তোমরা ব্যবসায়িক কাজকর্ম ও অন্যান্য পার্থিব প্রয়োজনাদি পূরণে বেরিয়ে পড়।’ তাই নামাজের পর রিজিকের সন্ধান করা ঐচ্ছিক নয়, আবশ্যক।

কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনি আপনার পরিবারের লোকদের নামাজের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না; আমিই আপনাকে রিজিক দেই আর তাকওয়ার পরিণাম শুভ।’ (সূরা ত্বহা : ১৩২)। আয়াতের ব্যাখ্যায় এসেছে, ‘আমি আপনার কাছে রিজিক চাই না, আমি আপনাকে এবং সবাইকে রিজিক দেই অথচ তারা রিজিকের অজুহাতে নামাজ ছেড়ে দেয়।’ (কুরতুবি : ১১/২৩৩)। তাফসিরে এসেছে, যে ব্যক্তি জুমার দিনে নামাজ আদায় করে তারপর বেচাকেনা করে আল্লাহ তার ব্যবসায় ৭০ গুণ বেশি বরকত দান করবেন। (তাফসিরে ইবসে কাসির : ১৭/৪৯৯)। আলোকিত বাংলাদেশ।