Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মহান স্বাধীনতা দিবস আজ

indipendent-dayআজ ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পৃথক বাণী দিয়েছেন।

chardike-ad

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে আরো বেগবান করে দেশ-বিদেশে বসবাসরত সব নাগরিককে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে দেশবাসীকে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও দেশবিরোধী যেকোনো অপতৎপরতা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি এই মহান দিনে সব অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সারা দেশে বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ সরকারি ছুটি।

২৫ মার্চের কালরাতে পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক নেতৃত্ব মুক্তিকামী নিরস্ত্র জনতার ওপর যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করে তারপর চূড়ান্ত হয়ে যায় আমাদের স্বাধীনতার পথচলা। পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে আর নয়।

১৯৭১ সালের তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’ ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে মুক্তিপাগল সচেতন শ্রেণী পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ইঙ্গিত লাভ করে।

২৫ মার্চের রাতে গণহত্যার ঘটনায় পর পুরো জাতি দিশেহারা হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ২৫ মার্চ রাতেই তার ৩২ নং ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যে যার মতো আত্মগোপনে চলে যান। এমনি ঘোরতর দুর্দিনে ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’ ঘোষণায় সম্বিত ফিরে পায় পুরো জাতি। ঝাঁপিয়ে পড়ে চূড়ান্ত সংগ্রামে।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের পর পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নানাভাবে নিপীড়িত হতে থাকে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক শ্রেণীর হাতে। দেশ বিভাগের পরপরই বঞ্চনার নতুন অধ্যায়ের মুখোমুখি হতে লাগল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ । পাকিস্তানের বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য দাবি আদায় এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা অর্পণের দাবিতে আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে তখন ১৫ মার্চ আলোচনার জন্য ঢাকা এলেন প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান। ১৬ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনা শুরু করলেন তিনি। মূলত আলোচনার নামে এটি ছিল একটি প্রতারণা এবং সময়ক্ষেপণ মাত্র। পশ্চিম পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দ প্রতিদিন সমস্যা সামাধানের আশ্বাস দিয়ে গোপনে অস্ত্র এবং সৈন্য আনতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানে। ২৪ মার্চ উচ্চপদস্থ জেনারেলরা ঢাকা ত্যাগ করলেন আন্দোলন দমনে গণহত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করে।

২৫ মার্চ রাতে গণহত্যার নির্দেশ দিয়ে রাতে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে করাচির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন ইয়াহিয়া খান। রাত ১১টায় তিনি করাচি পৌঁছার খবর ঢাকায় পাঠানোর পরপরই শুরু হয় গণহত্যার অভিযান। রাজপথে নেমে আসে ট্যাঙ্ক এবং সশস্ত্র সৈন্য। পূর্ব পাকস্তানের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য শুরু হয় ইতিহাসের তুলনারহিত গণহত্যা। আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় এক অন্যায় যুদ্ধ। শুরু হয় আমাদের স্বাধীনতার পথ চলা। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী লড়াই আর অশেষ ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় প্রিয় স্বাধীনতা। শত্রুমুক্ত ভূখণ্ডের নাম হয় বাংলাদেশ।

কর্মসূচি : যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন উপলে এবার জাতীয়পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যুষে রাজধানীতে একত্রিশ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিভিন্ন শিাপ্রতিষ্ঠানের শিার্থীরা কুচকাওয়াজসহ বিভিন্ন শরীরচর্চা প্রদর্শন করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মসজিদগুলোতে বিশেষ মুনাজাত এবং মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রমসহ এ ধরনের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।

সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং রাতে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে।
দেশের জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হবে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক পেশাজীবী সংগঠন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে।

এদিন রাজধানীর সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকাসহ নানা রঙের পতাকা দিয়ে সাজানো হবে।

আওয়ামী লীগ : মহান স্বাধীনতা দিবস উপলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছেÑ ২৬ মার্চ সূর্যদয়ণে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টায় সাভারস্থ জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ও বেলা ১১টায় টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।

আগামী ২৭ মার্চ বেলা সাড়ে ৩টায় খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভা। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্বে করবেন।
বিএনপি : বিএনপি নেতৃবৃন্দ সকাল ৮টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সকাল ১০টায় শহীদ জিয়ার মাজারে ফাতিহা পাঠ ও দোয়া উপলক্ষে মিলিত হবেন নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া সারা দেশে বিএনপির অঙ্গসংগঠনসমূহ নানা আয়োজনের মাধ্যমে উদযাপন করবে দিবসটি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সকাল ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কেন্দ্রীয় ভবন ও আবাসিক হলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, একই সময়ে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জমায়েত, ৬টা ১৫ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশে যাত্রা ও পু®পস্তবক অর্পণ, ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারীদের সন্তানদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ছাত্র-শিক কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘মুক্তির গান’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের গান, কবিতা, নৃত্য পরিবেশন ও নাটক মঞ্চায়ন। এ ছাড়া জোহর নামাজের পর মসজিদুল জামিয়ায় বিশেষ মুনাজাত এবং বিশ^বিদ্যালয় এলাকায় অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে অনুষ্ঠিত হবে প্রার্থনা।

সশস্ত্রবাহিনীর কর্মসূচি : সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সূর্যোদয়ের সময় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের অনুষ্ঠানমালার সূচনা হবে।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দর রানওয়ের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের এলাকায় আয়োজিত এ সমরাস্ত্র প্রদর্শনী ২৩-২৫ মার্চ এবং ২৭-৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকবে। অন্য দিকে আজ দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের পরিবারবর্গ এবং সেনানিবাসের স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য এবং ৩১ মার্চ তারিখ দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ঢাকা শহরের স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য এ সমরাস্ত্র প্রদর্শনী পরিদর্শনের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

নৌবাহিনীর কয়েকটি জাহাজ সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য ঢাকা সদর ঘাট; নৌ ইউনিট পাগলা জেটি, নারায়ণগঞ্জ; নেভাল জেটি, নিউমুরিং, চট্টগ্রাম; বিআইডব্লিউটিএ রকেট ঘাট, খুলনা; দিগরাজ নেভাল বার্থ, মংলা এবং বিআইডব্লিউটিএ জেটি, বরিশাল জেলায় বেলা ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।

যুবদলের কর্মসূচি : মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী যুবদল। যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে দিবসটি পালনের জন্য সারা দেশের জেলা শাখাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব।

এ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় যুবদল ভোর ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করবে। সকাল ৮টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে এবং সকাল ১০টায় শেরেবাংলা নগর জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত ও শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবে।