দীর্ঘ ৯২ দিন পর খোলা হলো বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। শনিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীনের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা কার্যালয়ে ঢোকেন।
এর আগে ৭টা ১০ মিনিট থেকে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে প্রধান ফটকের তালা খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তারা। দীর্ঘদিন পড়ে থাকা তালায় মরিচা ধরায় সেটি খোলা যায়নি। পরে হ্যাকসো ব্লেড দিয়ে কেটে কার্যালয়ে ঢোকেন তারা।
এ ছাড়া, আগের দিন সরিয়ে নেওয়া পুলিশ সদস্যদেরও সেখানে পুনরায় মোতায়েন করা হয়েছে।
আসাদুল করিম শাহীন উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, কার্যালয়ে আসার আগে তিনি ডিএমপির মতিঝিল জোনের ডিসির সঙ্গে কথা বলেন। ডিসি বলেন, কার্যালয়ে যেতে আপনাদের কোনো সমস্যা নেই। আপনারা স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারেন।
শাহীন আরো জানান, কার্যালয়ে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তিন মাস বন্ধ থাকায় পানি ও বিদ্যুতের বিল বকেয়া হওয়ায় এসব সেবা-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
এ সময় বিএনপি নেতা-কর্মীদের মোমের আলোতে কাজ করতে দেখা যায়। শনিবার বিকেলে বিএনপির কার্যালয় খুলবে- এমন সংবাদে কার্যালয়ের সামনে ভিড় জমান গণমাধ্যমকর্মী ও উৎসুক জনতা। এ সময় কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যসহ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে কার্যালয়ের সামনে দেখা যায়।
বিএনপির সহযোগী সংগঠন শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে কার্যালয়ের সামনে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা কার্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক চাই। আমরা কার্যালয়ের ভেতর প্রবেশ করতে চাই।’
এর আগে ৯১ দিন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীরা প্রবেশ করতে না পারায় সেখানে ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। গত ৩ জানুয়ারি দিবাগত রাতে দলের যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার পর এই কার্যালয়ের কর্মচারীদের বের করে দিয়ে তা তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। সেই থেকে জনমানবহীন কার্যালয়ে জমেছে ধুলোর আস্তরণ। কার্যালয়ের সামনে সতর্ক দায়িত্ব পালন করছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শনিবার দুপুরে কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয়ের প্রধান ফটকটিতে বড় ধরনের তালা ঝুলছে। কার্যালয় খোলার সংবাদের উৎসুক জনতা ও গণমাধ্যমকর্মীরা ভিড় জমিয়েছেন। কার্যালয়ের ভেতরে হকারদের দেওয়া প্রতিদিনের বিভিন্ন পত্রিকা জমা হয়েছে। এর ওপরে ধুলোর আস্তরণ সাক্ষ্য দেয় অনেক দিন সেখানে কেউ প্রবেশ করেনি।
কার্যালয়ে সামনে অনেকটা বিশৃঙ্খলভাবে ঝুলছিল বিদ্যুৎ, টেলিফোন ও ডিশ সংযোগ ক্যাবল। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে টানানো পোস্টারেরও করুণ দশা। কোনোটা ছিঁড়ে পড়েছে, আর কোনোটা ছিঁড়ে পড়ার অপেক্ষায়। কার্যালয়ে আশপাশের দেয়াল ক’দিন পরপর নতুন পোস্টারের ছেয়ে যাওয়ার রীতি থাকলেও এখন এখানে সেই সুযোগ নেই। ধুলোর আবরণে কার পোস্টার তা যেন চেনা দায়!
ঢাকার ব্যস্ততম এলাকা নয়াপল্টনে অবস্থিত বিএনপির এই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচলও সীমিত। চারতলা ভবনটির ভেতরে-বাইরের পরিবেশ অনেকটাই ভুতুড়ে। রাতে ভেতরে বা বাইরে আলো জ্বালানোর কেউ নেই।
গত ৩ জানুয়ারি রাতে দলের যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে আসার সিদ্ধান্ত নেন গুলশানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান করা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই রাতেই গুলশান কার্যালয় ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ‘অবরুদ্ধ’ হয়ে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন। আর এদিকে অসুস্থ রিজভীকে কার্যালয় থেকে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ।
পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও বের করে দেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পরে পুলিশ মূল ফটকে দুটি তালা ঝুলিয়ে দেয়। তখন থেকে কার্যালয়টি পুলিশি প্রহরায় রয়েছে। ওই দিন থেকে কার্যালয়ের নিচে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তবে কার্যালয় থেকে কর্মচারীদের বের করে দেওয়ার আগে মূল গেটে লাগানো তালার চাবি বয়স্ক কর্মচারী রুস্তম আলীর কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর কিছুদিন কার্যালয়ে গেছেন রুস্তম। কিন্তু তাকেও ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কার্যালয় বন্ধ থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতাও বন্ধ।
ওই কার্যালয়ে বিএনপির ১৪ জন এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করতেন। কার্যালয়ে তালা লাগানোর পর অনেকে গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। কেউ কেউ রাজধানীতেই আত্মীয়স্বজনের বাসায় থাকছেন। কখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, আর কবে তারা কার্যালয়ে যেতে পারবেন সেই আশায় দিন গুনছিলেন তারা।
সূত্রঃ রাইজিংবিডি