Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

যাদের বীরত্বে ধরা পড়ে ডাকাতেরা

bank-rubber-1

সাভারের আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের শাখায় ঘটেগেলো এক তান্ডব। একদল ডাকাতের আক্রমণে প্রাণ হারালো নিরীহ কিছু সাধারণ মানুষ। এ ঘটনায় আরও অনেকে প্রাণ হারাতে পারতো কিন্তু স্থানীয় কয়েকজনের বীরত্বের কারণে নিহতের সংখ্যা আর বাড়েনি। এছাড়াও কয়েকজন যুবকের সাহসীকতার কারণে ব্যাংক ডাকাতির পর তিনজন ডাকাতকে হাতেনাতে ধরা গেছে।

chardike-ad

রনি তালুকদার (৩২)। তিনি একজন স্থানীয় বাসিন্দা। রনি বলেন, ‘ওরা আমার এলাকার লোকজনকে মেরে চলে যাবে, আর আমি হাত গুটিয়ে বসে থাকব? জীবন বাজি রাখছি কি না জানি না। তবে ওদের ছাড়িনি। খুনি ধরতে পারছি, এইটাই শান্তি, টাকার লোভ আমাদের নাই।’ শরীরে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট, তবে স্বস্তির ঝিলিক খেলে যাচ্ছিল তাঁর চোখে-মুখে। সুঠামদেহী এই যুবক ও তাঁর বন্ধুরা এখন আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার বীরে পরিণত হয়েছেন।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ডাকাতদলের আক্রমণের পর যে কয়েকজন এলাকাবাসী প্রতিরোধ গড়েছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম রনি। নিজের প্রাইভেট কার নিয়ে মোটরসাইকেলে পালাতে থাকা ডাকাতদের ধাওয়া করেন তিনি ও তাঁর দুই বন্ধু। ডাকাতরা তাঁর গাড়িতে বোমা ছুড়ে মারে। গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে হাল ছাড়েননি রনিরা। সেই গাড়ি নিয়ে ডাকাতদের পেছনে ছুটতে থাকেন। একপর্যায়ে ডাকাতদের মোটরসাইকেলকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। মোটরসাইকেল উল্টে গেলে পড়ে যায় তিন ডাকাত। জনতার হাতে ধরা পড়ে তারা। ডাকাতদের ব্যাগে ছিল লুটের চার লাখ ২০ হাজার টাকা ও অস্ত্র। সেগুলো উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন রনি ও তাঁর বন্ধুরা।

রনির সঙ্গে এই সাহসী অভিযানের সঙ্গী ছিলেন তাঁর দুই বন্ধু নয়ন দেওয়ান (৩০) ও সোহেল মোল্লা (৩০), আর ছিলেন গাড়িচালক হাসান (২৭)। রনিরা ছাড়াও ডাকাতদের প্রতিহত করার আরেক নায়ক কাঠগড়া বাজার বায়তুল আমান জামে মসজিদের খাদেম তৈয়ব আলী (৪০)। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের সামনেই এই মসজিদের অবস্থান। ব্যাংকের ভেতরে ডাকাতির ঘটনা টের পেয়ে তৈয়ব মাইকে অনবরত ঘোষণা করেছেন- ‘ব্যাংকে ডাকাত পড়ছে। আপনারা বাইর হন…।’ তাঁর ঘোষণা শুনে প্রথমে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী ব্যাংকের ভবনের বাইরের সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। তবে ডাকাতদের গ্রেনেড, বোমা আর গুলির কাছে হার মানে সেই প্রতিরোধের চেষ্টা।

রনি দেওয়ান জানান, ‘দুপুরে খাওয়ার পর বাসার সামনে বসে ছিলাম। হঠাৎ মাইকের আওয়াজ শুনি- ‘ডাকাত ডাকাত’। দ্রুত আমার প্রাইভেট কারটি নিয়ে রাস্তায় বের হই। সঙ্গে নয়ন ও সোহেলও আসে। আমরা তিন রাস্তার মোড়ে উঠতেই লোকজন বলে, ‘ওই যে ডাকাত চলে যাচ্ছে।’ দেখি একটা লাল রঙের ডিসকভারি মোটরসাইকেল বিশ মাইলের দিকে যাচ্ছে। আমরা সেটিকে ধাওয়া করি। কিছুদূর যেতেই ওরা আমার গাড়িতে বোমা মারে।’ কাঠগড়ার আমতলা এলাকার আজমত গার্মেন্টে রাখা ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িটি দেখিয়ে রনি বলেন, ‘তবু থামিনি, হাসানকে (চালক) বলি, জোরে চালা। পেছন থেকে বাড়ি দে। ৫০০ মিটারের মতো যাওয়ার পর আমরা মোটরসাইকলটিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিই। তখন লোকজনকে নিয়ে ডাকাতদের একটাকে ধরে ফেলি। বাকি দুজন দৌড়ে গেলেও পরে ধরা পড়ে।’ রনির বন্ধু নয়ন ও সোহেল জানান, মোটরসাইকেলে থাকা তিনজনের মধ্যে দুজনের পরনে ছির জিন্সের প্যান্ট, গায়ে ছিল শার্ট। একজনের পরনে ছিল পায়জামা-পাঞ্জাবি। সেই ছিল মোটরসাইকেলের চালক। ভারাসাম্য হারিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে পড়ে যাওয়ার পর ডাকাতদের কাঁধে থাকা দুটি ব্যাগও সেখানে পড়ে যায়। একটি ব্যাগ থেকে টাকা বের হয়ে আসে। তিনজন মিলে (রনি, নয়ন ও সোহেল) সেই টাকা গুনে পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। সেখানে ছিল চার লাখ ২০ হাজার টাকা। ডাকাতদের একটি ব্যাগে তিনটি বোমাও ছিল বলে জানান রনিরা।

ডাকাতদের তাণ্ডবে কাঠগড়ার পুরো এলাকায় এতটাই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল যে কারা ডাকাতদের ধরল, এর খোঁজ নেওয়ার ফুরসত মেলেনি কারো। তবে এসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই রনি ও তাঁর বন্ধুদের।