Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের দখলে বিমানের হজ টিকিট

hajjমন্ত্রী-এমপি ও সংসদীয় কমিটির সদস্যদের আত্মীয়স্বজনের দখলে বাংলাদেশ বিমানের প্রথম ধাপের ১৫ হাজার হজ টিকিট। এসব টিকিট নির্ধারিত দামের চেয়ে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নিয়মানুযায়ী, যারা দীর্ঘদিন ধরে বিমানের টিকিট বিক্রি করে আসছিল নিয়মানুযায়ী তাদের মধ্যে শীর্ষ বিক্রেতারাই আনুপাতিকহারে এসব টিকিট পাওয়ার কথা। কিন্তু এ পর্বে ১৫ হাজার টিকিটের অধিকাংশ এদের কাউকে দেয়া হয়নি। বেশিরভাগ টিকিট পেয়েছে ভুঁইফোড় ও সানইবোর্ডসর্বস্ব ট্রাভেল এজেন্টরা।

chardike-ad

তাদের অধিকাংশই সরকারি দলের নেতা, মন্ত্রী-এমপি ও সংসদীয় কমিটির সদস্যদের আত্মীয়স্বজন। এরাই চড়া দামে বিমানের তালিকাভুক্ত ট্রাভেল এজেন্টদের কাছে টিকিটের স্লট বিক্রি করছে।

অভিযোগকারীরা বলেছেন, এসব মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে এ বছর হজ যাত্রীদের বিমানের টিকিট ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেশি দামে কিনতে হবে।

অভিযোগ রয়েছে, এ বছর বিমানের টিকিটের বেশিরভাগই হাতিয়ে নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের ভাতিজা পরিচয়দানকারী জনৈক যুবলীগ নেতা আতিক। তিনি নিজেকে রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলের পরিচালক দাবি করে সেই হোটেলের সব সুযোগ-সুবিধাও ভোগ করছেন।

বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের নিয়োগ থেকে শুরু সব ধরনের টেন্ডার এখন এ আতিকের নিয়ন্ত্রণে। তার ইশারা ছাড়া বিমানে কোনো নিয়োগ হয় না। এছাড়া বিমানের মতিঝিল অফিসের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এ টিকিট কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে প্রতি টিকিটে ওই সিন্ডিকেট দুই হাজার টাকা করে লাভ করছে। আর এ লাভের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হচ্ছে বিমানের মার্কেটিং বিভাগের একদম নিচ থেকে শুরু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যন্ত।

জানা গেছে, প্রথম দফার টিকিটের জন্য বিমানের তালিকাভুক্ত ট্রাভেল এজেন্টদের কেউ কেউ দু’মাস আগে লিখিত আবেদন করেও টিকিট পাচ্ছেন না। মতিঝিলের বিমান কার্যালয়ে দফায় দফায় ধরনা দিয়ে হজ টিকিট না পেয়ে সাধারণ হজ এজেন্সির মালিকরা চরমভাবে ক্ষুব্ধ।

মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়ার তারিখ ঠিক রাখতে তাই বাধ্য হয়ে তাদের এ সিন্ডিকেটের কাছ থেকে চড়া দামে টিকিট কিনতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি মো. ইব্রাহিম বাহার বলেন, বিমানের প্রথম পর্বের ১২ হাজার টিকিট ৬২টি এজেন্সির মধ্যে বিক্রি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ ৬শ’ করে হজ টিকিট পেয়েছে ভার্সেন্টাইল, স্টার ট্যুরস ও রয়েল এয়ার এজেন্সি।

তিনি আরও বলেন, প্রায় দেড় লাখ টাকার হজ টিকিট বিক্রি করে একটি এজেন্সি ১-২ হাজার টাকা অতিরিক্ত নিতেই পারে। তবে ৫-১০ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত নিলে তা নীতি-নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না। তিনি বলেন,টিকিট বিক্রিতে মধ্যস্বত্বভোগী থাকলে দাম বাড়বেই। তিনি এ ধরনের অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান।

বিমানের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং পরিচালক শাহ নেওয়াজ বলেন, সারা বছর যেসব এজেন্সি বিমানকে ব্যবসা দিয়েছে সেসব এজেন্সিকে মূলত বেশি বেশি টিকিট দেয়া হয়েছে। কোনো ভুঁইফোড় কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের কাছে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না। তবে মার্কেটিং শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজনৈতিক নেতারা বিভিন্ন এজেন্সির নামে টিকিট নিয়ে পরবর্তীকালে সেগুলো বাইরে বিক্রি করছে।

শনিবার থেকে বিমানের দ্বিতীয় পর্বের হজ টিকিট বিক্রি শুরু হবে। বিমানের পরিচালক (মার্কেটিং) অস্বীকার করলেও সরেজমিন বিমানের মতিঝিল অফিস ঘুরে দেখা গেছে, সিন্ডিকেট প্রথম স্লটের হজ টিকিট ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে।

হজ টিকিটবঞ্চিত আটাব কার্যকরী কমিটির সদস্য ও আল-নাসের এভিয়েশন সার্ভিসেসের স্বত্বাধিকারী অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল-নাসের বলেন, ১১ জুন বিমানের মহাব্যবস্থাপকের কাছে ২৩১ হজযাত্রীর টিকিটের জন্য লিখিত আবেদন করে একটি টিকিটও পাইনি।

হাবের সাবেক সভাপতি জামাল উদ্দিন আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তিনি তার ৭৬ হজযাত্রীর টিকিটের মধ্যে মাত্র ৪০টি টিকিট পেয়েছেন।

এ ব্যাপারে বিমান জেনারেল ম্যানেজার সেলস (ভারপ্রাপ্ত) আতিক রহমান চিশতি বলেন, এবার সব ধরনের নীতিমালা অনুসরণ করেই হজ টিকিটি বিক্রি করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো দুর্নীতি হয়নি।

তিনি বলেন, সবাইকে নিয়ম অনুযায়ী টিকিট দেয়া হবে। সবাই টিকিট পাবেন। এখনও সব টিকিট ছাড়া হয়নি। কোনো সিন্ডিকেট কিংবা কোনো রাজনৈতিক নেতাকে টিকিট দেয়া হচ্ছে না। যারা সত্যিকারের ট্রাভেল এজেন্ট এবং যারা দীর্ঘদিন বিমানের টিকিট বিক্রি করছেন তাদেরই মূলত টিকিট দেয়া হচ্ছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আবাবিল হজ গ্রুপ ১৭শ’ হজযাত্রীর মধ্যে ১২শ’ হজযাত্রীর বারকোড হাতে পেয়েছে বলে জানা গেছে। তারা বিমানের কাছে ১৭শ’ হজযাত্রীর টিকিটের জন্য আবেদন করলেও বিমান কর্তৃপক্ষ তাদের প্রথম পর্বের শেষদিনে ২৬ আগস্ট মাত্র ৯৬ জন হজযাত্রীর টিকিট দিয়েছে।

হজ অফিস আইটি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৭৮ হাজার হজযাত্রীর ভিসা লজমেন্টের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। সউদি দূতাবাস থেকে বুধবার সরকারি ৬শ’ হজযাত্রীর মধ্যে ২শ’ জনের ভিসা ইস্যু সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার আরও সহস্রাধিক সরকারি হজযাত্রীর পাসপোর্ট দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে।

আগামী ১৬ আগস্ট দুপুরে সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের প্রথম হজ ফ্লাইট (এসভি-৮০১) জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবে। অভিযোগ উঠেছে, ইতিমধ্যে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের অনেক টিকিটও চলে গেছে একটি সিন্ডিকেটের দখলে। সিন্ডিকেটটি এখন চড়া দামে সেসব টিকিট বিক্রি করছে হজযাত্রীদের কাছে। তবে এ সিন্ডিকেটে রাজনৈতিক নেতা ও মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজন নেই। টিকিটের অধিকাংশই চলে গেছে প্রভাবশালী ৮টি ট্রাভেল এজেন্টের হাতে। এরাই এখন মনোপলি ব্যবসা শুরু করেছে।(ঢাকাটাইমস২৪)