Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

রাখে আল্লাহ, মারে কে

Ripaআমাদের দেশে জনপ্রিয় একটি প্রবাদ রয়েছে, ‘রাখে আল্লাহ, মারে কে?’ যাকে সৃষ্টিকর্তা বাঁচিয়ে রাখতে চান তিনি ভয়াবহ দুর্ঘটনার মধ্য থেকেই অক্ষত অবস্থায় বেঁচে আসতে পারেন। একটি দুটি দুর্ঘটনা থেকে কেউ বেঁচে ফিরলে সেটিকে স্বাভাবিক ধরা যায়। কিন্তু তিন-তিনটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে কেউ বেঁচে ফিরলে বিষয়টি কিছুটা হলেও অস্বাভাবিক লাগে। তেমনই একজন বিস্ময় জাগানিয়া নারী মিস ভায়োলেট জেসপ। সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ তিনি সব সময়ই পেয়েছিলেন।

আয়ারল্যান্ডপ্রবাসী পিতা-মাতার ঘর আলো করে ১৮৮৭ সালে আর্জেন্টিনায় জন্মগ্রহণ করেন মিস ভায়োলেট জেসপ। ছোটবেলা থেকেই জেসপ ছিলেন অসম্ভব রকম ভাগ্যবতী। খুব কম বয়সে তিনি যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হন। তখন ডাক্তাররা বলেছিলেন, তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হবে না। বড়জোর কয়েক মাস বাঁচতে পারেন তিনি। কিন্তু তিনি এই রোগ পরাস্ত করে দীর্ঘ ৮৪ বছর সুস্থভাবে বেঁচে ছিলেন। শুধু বেঁচে ছিলেন বললে ভুল হবে, সবাইকে অবাক করে দিয়ে বেঁচে ছিলেন। খেতাব পেয়েছিলেন ‘দি আনসিঙ্কেবল লেডি’।

chardike-ad

তার বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবার নিয়ে তারা ব্রিটেন চলে যায়। সেখানে তার মা জাহাজের যাত্রীসেবিকা হিসেবে চাকরি নেন। কিন্তু তার মা-ও কয়েক বছরের মধ্যে মারা যান। তাই লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ভাই-বোনদের দায়িত্ব নিতে হয় জেসপকে। তিনিও তার মায়ের মতো জাহাজের যাত্রীসেবিকা হিসেবে কাজে যোগ দেন। মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি রয়েল মেইল লাইন কোম্পানিতে চাকরি নেন। ওই চাকরি ছেড়ে ১৯০৮ সালে হোয়াইট স্টার লাইন কোম্পানিতে যোগ দেন।

১৯১০ সালে ওই কোম্পানির ‘অলিম্পিক’ নামক একটি জাহাজে তিনি কাজ শুরু করেন। সেখানে তার সময় ভালোই কাটছিল। কিন্তু ১৯১১ সালে ‘এইচএমএস হাওয়াক’ নামক একটি জাহাজের সঙ্গে অলিম্পিকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুইটি জাহাজই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকে হতাহত হন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে অলিম্পিক জাহাজটি ডুবে যাওয়ার আগেই তীরে এসে ভিড়তে সক্ষম হয়। এতে জেসপ বেঁচে যান।

বছর দুয়েক পরে হোয়াইট স্টার লাইনের কর্মকর্তারা ‘দি আনসিঙ্কেবল শিপ’ হিসেবে খ্যাত জাহাজ টাইটানিক-এ নিয়োগ দেওয়ার জন্য লোক খুঁজতে থাকেন। পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের কথায় তিনি টাইটানিকে চাকরি নেন। আমরা সবাই জানি যে, টাইটানিক জাহাজটি একটি বরফখণ্ডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় এবং এই ঘটনায় অন্তত ১৫০০ লোক নিহত হয়। কিন্তু ভাগ্যদেবীর অশেষ কৃপায় জেসপ প্রাণ নিয়ে ফিরে আসেন।

দু-দুটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা জেসপকে জাহাজে কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আহতদের সেবা করার উদ্দেশ্যে তিনি ‘ব্রিটানিক’ জাহাজে সেবিকা হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু ১৯১৬ সালের ১৯ নভেম্বর জাহাজটি জার্মানির যুদ্ধজাহাজ জার্মান ইউ-বোট’র আক্রমণের শিকার হয়। ইউ-বোট থেকে ছুড়ে মারা একটি ক্ষেপণাস্ত্র জাহাজটির তলদেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই ডুবতে থাকে ব্রিটানিক। তখন জেসপ জাহাজের তলার একটি অংশ ধরে বেঁচে থাকেন! অলিম্পিক, টাইটানিক ও ব্রিটানিকের ভয়াবহ সব দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়ায় জেসপকে ‘দি আনসিঙ্কেবল লেডি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

৬১ বছর বয়সে তিনি যাত্রীসেবিকার চাকরি থেকে অবসর নেন। তিন-তিনটি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হাত থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে এলেও ১৯৭১ সালে ৮৪ বছর বয়সে হৃদরোগের কাছে হার মানেন মিস ভায়োলেট জেসপ। মৃত্যুবরণ করেন তিনি। আর এর মধ্য দিয়ে যবনিকাপাত ঘটে একজন আনসিঙ্কেবল লেডির সত্য ও আশ্চর্যজনক জীবনের।

শামীমা নাসরিন রিপা