উত্তর কোরিয়ার একটি উল্লেখযোগ্য হোটেল রেইউংইয়ং। ১৯৮৭ সালে এর নির্মাণ শুরু হয়। ৩০ বছরে সম্পন্ন হয়েছে হোটেলের শুধু বহিরাবরণটিই। এ পর্যন্ত এতে ৭৫ কোটি ডলার ব্যয় হয়ে গেলেও ভেতরটা এখনো খালি। পৃথিবীতে অনেক ভবন রয়েছে, যেগুলোর নির্মাণকাজে দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে, কিন্তু এ হোটেল ভবনটির দীর্ঘসূত্রতার পেছনে আছে ব্যতিক্রমী ইতিহাস, যা মানুষের কাছে এক অজানা রহস্য।
আধুনিকতার ছোঁয়া দিতে ৩০ বছর আগে অত্যাধুনিক গগনচুম্বী রেইউংইয়ং হোটেলের কাজ শুরু করেছিলেন দেশটির তৎকালীন শীর্ষ নেতা কিম ইল সুন। স্বপ্ন ছিল ১০০০ ফুট উচ্চতার ১০৫ তলা এ ভবন তিন হাজার কক্ষ, একটি ক্যাসিনো ও ঘূর্ণায়মান পাঁচটি রেস্তোরাঁসহ বিশ্বের বুকে উত্তর কোরিয়াকে আধুনিকতার প্রতীক হিসেবে দাঁড় করাবে। কিন্তু আজো এ অভিলাষ কল্পনাই রয়ে গেছে।
প্রাথমিক পর্যায়ে সমাজতান্ত্রিক মিত্র রাশিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় এ দানবীয় কাজ হাতে নেন সুন; কিন্তু দুই বছরের মাথায় রাশিয়ার অর্থনৈতিক ধসের কারণে থমকে যায় এর নির্মাণকাজ। ১৯৯৪ সালে সুনের মৃত্যু এবং দেশটির কৃষি খাতে চরম বিপর্যয় দেখা দিলে পুরো প্রকল্পটি স্থবির হয়ে পড়ে। দীর্ঘ ১৬ বছর পর মিসরের কোম্পানি ‘ওরাসকম টেলিকম হোল্ডিং’ ২০০৮ সালে ৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলে রেইউংইয়ংয়ের নতুন করে জীবন ফিরে পাওয়ার আশা জাগে। তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল সেবা চালুর লক্ষ্যে ওরাসকম কাজ শুরু করে। ফলে ভবনটির শীর্ষদেশে মোবাইল টাওয়ারের কাজসহ বহিরাবরণের কাজ শেষ হয়। ২০১০ সালের দিকে তাদের বিনিয়োগের অর্থ শেষ হলে বাকি কাজ অসম্পন্ন থেকে যায়। এরপর থেকে কোটি টাকার ভবনটিতে একটা মোবাইল টাওয়ারই স্থান পেয়েছে।
অবশ্য বছর দুয়েক পরে ২০১২ সালে বিখ্যাত হোটেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কেমপিন্সকি ‘রেইউংইয়ং’-এর বাকি কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা হাতে নেয়; কিন্তু বিনিয়োগ নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় সে পরিকল্পনাও বানচাল হয়ে যায়। বর্তমানে সমালোচকেরা এ হোটেলকে তুলনা করছেন মৃত্যুপুরীর সাথে। কেননা এ বিলাসী প্রকল্পের খেসারত দিতে হচ্ছে দেশটির জনগণকে। আর কোনো দিন এটি সুসম্পন্ন হলেও এসব নাগকিকের প্রবেশাধিকার থাকবে না। আপাতত কোনো সাধারণ ব্যক্তি এ ভবনে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে না। কিছু সামরিক কর্মকর্তাই এর হর্তাকর্তা সেজে বসে আছেন। ফলে জনগণের কাছে এটি একটি রহস্যপুরীই হয়ে আছে।
সূত্র : হাফিংটন পোস্ট