Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ইপিজেডে বিনিয়োগে শীর্ষে দক্ষিণ কোরিয়া

২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩:

বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আওতাধীন আটটি ইপিজেডে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৩৭টি দেশের বিনিয়োগ রয়েছে। ১৯৮৩-৮৪ সালে বেপজা প্রতিষ্ঠার পর এসব কারখানা থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ১০ বিলিয়ন ডলার এককভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার মালিকানাধীন কোম্পানির, যা বেপজার মোট রপ্তানির প্রায় ৩১ শতাংশ।

chardike-ad

বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (ইপিজেড) পথচলার শুরু থেকেই বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়াকে। এরপর দিন দিন শিল্প ও রপ্তানি খাতে ইপিজেড যেভাবে বিকশিত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগও সেভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। এ সম্প্রসারণের গতি এতটাই যে দেশের আটটি সরকারি ইপিজেডে বিদেশি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান আর রপ্তানির প্রতিটি শাখায় দক্ষিণ কোরিয়া শীর্ষস্থানে।

20121107-logo-bepza-300বেপজার তথ্যানুযায়ী, ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ইপিজেডে বাংলাদেশ বাদে ৩৬টি দেশের ২৯৮টি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। আর এই বিদেশি কারখানাগুলোয় কর্মসংস্থান হয়েছে দুই লাখ ৯২ হাজার ১৪৫ জন বাংলাদেশি শ্রমিকের। ১৯৮৭-৮৮ সালে চট্টগ্রাম ইপিজেডে ইয়াংওয়ানের কারখানা স্থাপনের মধ্য দিয়ে ইপিজেডে কোরীয় বিনিয়োগ শুরু হয়। এরপর থেকে বিনিয়োগ শুধু বেড়েই চলেছে। এই সম্প্রসারণের ধারাবাহিকতায় আজ বেপজায় অবস্থিত ৭৩টি কারখানার মালিক দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যবসায়ীরা। যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ৮৭ হাজার ৯৩৫ জন বাংলাদেশি শ্রমিকের। এসব কারখানায় কোরিয়ানরা মোট ৫৭০ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে এ পর্যন্ত রপ্তানি করেছে ১০ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। মূলত গার্মেন্ট খাত দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও বর্তমানে তাঁবু, ইলেকট্রনিক্স শিল্পেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ এসেছে কোরিয়া থেকে।

আট ইপিজেডে বাংলাদেশের মধ্যে এককভাবে শীর্ষ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইয়াংওয়ান গ্রুপ। বর্তমানে চট্টগ্রাম ও ঢাকা ইপিজেডে এই গ্রুপের মালিকানাধীন ১৭টি কারখানায় প্রায় ৪০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করে বলে জানালেন ইয়াংওয়ানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, কোরিয়ানরা বাংলাদেশে ব্যবসা করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। বিশেষ করে তুলনামূলকভাবে সস্তাশ্রম এবং বিদেশি বিনিয়োগে সরকারি সহায়তার সুযোগ নিয়ে শুরু থেকেই তারা শীর্ষস্থানে। পাশাপাশি শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা ও কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়নে অন্যান্য দেশের ফ্যাক্টরিগুলোর তুলনায় কোরীয় কর্তৃপক্ষ তুলনামূলকভাবে উদার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ও জীবনমানের উন্নয়নে দক্ষিণ কোরিয়ার অবদান অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি।’

বিশ্বের সবচেয়ে বড় তাঁবু কারখানা কোরিয়ান মালিকানাধীন ‘এইচকেডি ইন্টারন্যাশনাল’ বাংলাদেশের সিইপিজেডে। ২০ বছর ধরে চট্টগ্রাম ইপিজেডে উৎপাদিত তাঁবু দিয়েই বিশ্বের ২০০টি তাঁবু কারখানার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে এইচকেডি। যাদের দখলে রয়েছে বিশ্বের ২৫ শতাংশ তাঁবুবাজার।

বাংলাদেশে বিনিয়োগে উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কারণেই দেশের প্রথম বেসরকারি ইপিজেডের অনুমোদন দেওয়া হয় কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতীরবর্তী আনোয়ারা ও পটিয়া উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার একর জায়গা নিয়ে ‘কোরিয়ান ইপিজেড’ গড়ে তোলা হয়। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে অনুমোদনের ১৪ বছর পরেও পুরোপুরি চালু হতে পারেনি ইপিজেডটি। শুধু স্বল্প পরিসরে একটি জুতা ফ্যাক্টরি চালু আছে এখানে।

বেপজার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কোরিয়ান কম্পানির ম্যানেজমেন্ট খুব ভালো। ফ্যাক্টরির ভেতরে মেডিক্যাল সুবিধা, ক্যান্টিন চালুর মতো যুগান্তকারী পদক্ষেপ কোরিয়ানদেরই আইডিয়া। কোরীয় মালিকানাধীন কম্পানির কমপ্লায়েন্স নিয়ে তেমন কোনো অভিযোগ নেই। না হলে ছোট্ট পরিসরে সিইপিজেডে চালু হওয়া ইয়াংওয়ান আজ এত বড় গ্রুপ হয়ে উঠতে পারত না।’ সূত্রঃ কালের কন্ঠ