Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

চীনবিরোধী ‘ব্লক’ জন্মের আগেই মারা গেল!

চলতি নভেম্বর মাসে প্রথম দুই সপ্তাহ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মেগা সফরে এশিয়াতে এসেছিলেন। তিনি ৩ নভেম্বর হাওয়াই দিয়ে সফর শুরু করেছিলেন। এরপর পাঁচটি রাষ্ট্রের (জাপান, দ: কোরিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন) প্রত্যেক রাষ্ট্রে তিনি কমপক্ষে এক দিন করে কাটিয়েছেন। এ ছাড়া এই সফরে দুটি ‘রাষ্ট্রজোটের সম্মেলন’ ছিল- ভিয়েতনামে ২১টি রাষ্ট্রের এপেক সম্মেলন আর ফিলিপাইনে ১০ রাষ্ট্রীয় আসিয়ান সম্মেলন। ফলে ওই দুই সম্মেলন মিলিয়ে সম্ভবত আরো দুই ডজন রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে ট্রাম্প এই স্বল্পকালে মোলাকাত করেছেন। এদের মধ্যে বার্মার সু চিও আছেন। এর বাইরে, ট্রাম্পের এই সফরে যাওয়া হয়নি এমন আরো কিছু এশিয়ান রাষ্ট্রে (আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার) কাছাকাছি সময়ে ট্রাম্পের সেক্রেটারি অব স্টেট রেক্স টিলারসন সফর করেছেন। সব মিলিয়ে গত এক মাস এশিয়া ছিল আমেরিকান কূটনীতির মুখ্য ফোকাস।

 

chardike-ad

সফরগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করে দেখা যায়। এর একটা অংশে ছিল ট্রাম্পের চীন সফর; মানে চীনের কাছ থেকে সঙ্ঘাতহীন পন্থায়, তবে স্বার্থে অটল থেকে, আমেরিকান ব্যবসাবাণিজ্যের স্বার্থ বুঝে নেয়া বা আদায় করার আলাপ। এর সাথে ছিল উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক বোমা ইস্যুতে চীনের ভূমিকা আমেরিকার জন্য ইতিবাচক- এই অনুভব নিয়ে ট্রাম্পের গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ কোরিয়া সফর। ট্রাম্পের বাকি এশিয়ান রাষ্ট্র সফর ছিল অন্য ভাগে। সেটার নাম দেয়া যায়, এশিয়ায় চীনের পাল্টা প্রভাব সৃষ্টি ও বিস্তারের লক্ষ্যে সফর। আগের ওবামা প্রশাসন বলেছিলেন, তার ভাষায়, ‘এশিয়ায় এখনো আমরাই নেতা’। এই ভাব ধরে তিনি এশিয়া সফর করেছিলেন; তবে এটা কূটনীতিক ভাষার আড়াল। এখানে লুকিয়ে থাকা কথার তাৎপর্য খুব বোঝা যাবে না। সরাসরিভাবে বললে, এশিয়ায় আমেরিকার ‘চীন ঠেকাও’ নীতি জারি আছে সেই ২০০৭-০৮ সাল থেকে। সে সময় সেটা ছিল প্রেসিডেন্ট বুশের কর্মসূচি। সেটা ওবামার হাতে গোছানো আকার পেয়ে নাম হয়েছিল ‘এশিয়া পিভট’ বা ভরকেন্দ্র নীতি। সেই নীতিটাকেই আরেকবার অন্তত নামের কিছু পরিবর্তন করে তা নিয়ে এবার ট্রাম্প এশিয়ায় গিয়েছিলেন। বদলে নেয়া সে নাম হলো, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ পলিসি। এটাকে আগে ‘এশিয়া-প্যাসিফিক’ নীতি বলা হতো। এখন ট্রাম্পসহ তার প্রশাসনের লোকেরা আনুষ্ঠানিকভাবে একে ডাকছেন ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ নীতি বলে। বলছেন, ‘একটা অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিকের অঞ্চল’ বজায় রাখার পক্ষে আমেরিকা সবার অবস্থান তৈরি করতে চাইছে। ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ নামে ডাকার পরে এ নিয়ে মিডিয়া প্রতিক্রিয়া হলো, এটা কোনো নতুন নীতি নয়। অর্থাৎ চীন ঠেকাও নীতি আমেরিকার যেটা ছিল- সেটাই মূল লক্ষ্য হয়ে আছে। তবে একালে এর ভেতর কিছু লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে আমেরিকা ও তার বন্ধুজগতে।

 

চীন ঠেকানো- এই ধারণার অরিজিনাল উৎস অন্যখানে, অন্য কারণে। সেটা হলো, আমেরিকা একক পরাশক্তির এক গ্লোবাল পাওয়ার হলেও এটা আর থাকছে না; এই ফ্যাক্টস আমেরিকা যেদিন নিজ সরকারি স্টাডি ও গবেষণায় নিশ্চিত হয়ে যায়, তখন থেকেই আমেরিকার চীন ঠেকানোর চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছিল। দুনিয়ার আমেরিকান নেতৃত্বের (অন্তত অর্থনৈতিক নেতৃত্ব) অবস্থান চীনের হাতে চলে যাওয়া (আর ঠেকানো সম্ভব নয় বলে) অন্তত বিলম্বিত করিয়ে দেয়া যায় কি না, এর লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল আমেরিকা। যেমন, এই পদক্ষেপ হিসেবে এশিয়ায় আরেক রাইজিং অর্থনীতি হিসেবে ভারতের পিঠে হাত রাখা, কাছে টেনে ফেভার করে চীনের বিরুদ্ধে লাগানো- এই নীতিও চীন ঠেকানোর মতলবে। তবে সে আমেরিকা ‘একটি ক্ষেত্রে অবাধ এশিয়া-প্যাসিফিকের অঞ্চল’-এর গুরুত্ব বুঝানোর আড়ালে তার ‘এশিয়া নীতি’ বলে হাজির করেছে।

 

যেকোনো রাষ্ট্রজোটের আহূত সম্মেলনে মূল অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপ্রধানরা অনেকে ফাঁকে ফাঁকে সংক্ষিপ্ত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও সেরে নিয়ে থাকেন। আসিয়ান সম্মেলনে তেমনি এক বৈঠক হয়েছে। মানুষের অনেক গোপন সম্পর্ক থাকে এবং মরার বয়সে পৌঁছলে সে পাবলিকলি তা স্বীকার করে ফেলে। ব্যাপারটা অনেকটা সে রকম। তবে এর গুরুত্ব ভিন্ন অর্থে আসিয়ান সম্মেলনের চেয়ে বেশি বলে অনেক মিডিয়া গুরুত্ব দিয়েছে। সেটা হলো, এক ‘কোয়াড’ ব্লকের মিটিং।

 

আসিয়ান সম্মেলনের সাইড লাইনে এশিয়ায় চীনবিরোধী প্রকাশ্য নিরাপত্তা জোটের আদলে আমেরিকা, জাপান, ইন্ডিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানেরা এক হয়ে বসেছিলেন। কিন্তু সেটা আবার কোনোভাবেই যেন শোরগোল না তুলে ফেলে, চীন যেন ক্ষেপে না যায়, সে দিকে খেয়াল রেখে তা তারা করতে চেয়েছে। যেমন এভাবে চার রাষ্ট্রের একসাথে বসার নাম কী, সে দিকে তারা নিজেরা এর নাম দেননি। মিডিয়ায় এটাকে কোয়াড ব্লক (ইংরেজি কোয়াড মানে চার- চার মুরব্বির জোট) বলা হয়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা, কোনো যৌথ ঘোষণাও এখান থেকে দেয়া হয়নি। নেহায়েতই চার নেতার এক ডিনার যেন, তবে যারা ট্রাম্পের এশিয়া নীতি- ‘একটি খোলা এশিয়া-প্যাসিফিকের অঞ্চল’-এর গুরুত্ব বোঝানোর কাজে একমত, তারাই যেন জড়ো হয়েছেন। একটি কোয়াড করার আইডিয়াটা অনেক পুরনো। ২০০৭ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এই চারের কাছে প্রস্তাবটা পেশ করেছিলেন। কিন্তু এত দিন এটা আলোর মুখ দেখেনি। আর এখন যৌথ ঘোষণা না দিতে পারা কোয়াড, ওই ডিনার অনুষ্ঠানের পরবর্তীকালে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের সচিবপর্যায়ে একসাথে বসলেও শেষে যে বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যায়- (ভারতের প্রাচীন দক্ষিণী দৈনিক ‘দি হিন্দু’ অনুসারে), ‘চার দেশের বিবৃতি চার রকমের।’ সার কথায় বললে, এখন আমরা দেখছি, আসলে তাদের পরস্পরের অবস্থানের ভিন্নতা নিরসনের আগেই তারা একসাথে বসে গিয়েছিলেন। দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে ভারত এটা চীনের বেল্ট ও রোড উদ্যোগের সরাসরি বিরোধিতাকারী জোট হবে বলে আশা করেছিল। কিন্তু বাকিরা সেখান থেকে সরে গেছেন। বিশেষ করে ট্রাম্পের এ মাসের চীন সফরে তিনি, চীন-আমেরিকার যৌথ ৪০ বিলিয়ন ডলারের এক ‘সিল্ক রোড ফান্ড’ গঠনের চুক্তি করে ফেলেছেন।

 

গ্লোবাল বা রিজিওনাল রাজনীতি বোঝাবুঝির দিক থেকে, বিশেষ করে ‘জাতীয়তাবাদী’ অবস্থান কী তা বোঝার দিক থেকে, চলতি শতক আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভিন্ন। বোঝাবুঝি এখন বদলে গেছে। আমরা যে জাতীয়তাবাদী ধারণা নিয়ে গত শতকে যেসব অভিজ্ঞতায় বড় হয়েছি তার অনেক কিছুই এই শতকে অচল। সংক্ষেপে বললে এর মূল কারণ, সেগুলোর পটভূমি ছিল কোল্ড ওয়ারের ‘গ্লোব’, দুনিয়া একই কিন্তু দুটি বিচ্ছিন্ন অর্থনীতির ব্লক তখন দুনিয়ায় বিরাজ করত। অর্থাৎ যোগাযোগ সম্পর্কের দিক থেকে দুটোই আলাদা, বিচ্ছিন্ন। পণ্য পুঁজি টেকনোলজি ইত্যাদির বিনিময়ের দিক থেকে বিচ্ছিন্ন দুটি অর্থনীতিতে বড় হয়ে ওই শতক কাটিয়েছি আমরা। ক্যাপিটালিজম সম্পর্কে বা এর বিস্তারিত বিনিময় সম্পর্ককে আমরা যা জেনেছি বুঝেছি, তা কোল্ড ওয়ারের বিচ্ছিন্ন দুই ব্লকের অর্থনীতির পটভূমিতে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৯১ সালে (চীনের বেলায় আরো আগেই, ১৯৭৮ সালের পর থেকে) ভেঙে যাওয়ার পর ব্লকে ভাগ হয়ে থাকা আগের দুনিয়া এবার একই গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের অধীনে এলো। এতে আমরা সবাই এবার ভাগহীন, দুনিয়াজুড়ে এক ব্যাপক বিনিময় সম্পর্কের- পণ্য পুঁজি টেকনোলজি ইত্যাদির ব্যাপক বিনিময়ের যুগে প্রবেশ করেছি। আর এর ভেতরে আগের রক্ষণশীল ব্লক যুগের জাতীয়তাবাদের ধারণা যেটা ছিল, তা একালে অচল হয়ে যায়। কারণ পারস্পরিক বিনিময় সম্পর্কের কোনো অবশেষও নেই এমন কালের জাতীয়তাবাদ ধারণা আমরা সবাই ওতপ্রোতভাবে পরস্পর পণ্য লেনদেনে ও বিনিময় সম্পর্কে জড়িয়ে গেছি। সে পটভূমিতে তখনকার জাতীয়তাবাদবোধ তো অচল হবেই বর্তমান যুগে। তাই এই নতুন গ্লোবাল বিনিময়ের দুনিয়ায় কোনো এক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু রাষ্ট্রের এক রাষ্ট্রজোট খাড়া করা এবং তা টেকানো খুবই কঠিন ও জটিল। যেমন চীনের বিরুদ্ধে আমেরিকার অন্যদের নিয়ে কোনো রাষ্ট্রজোট করে টিকানো খুবই জটিল। কারণ খোদ আমেরিকাসহ হবু জোটের সব রাষ্ট্রই আবার চীনের সাথে নানা পণ্য বিনিময়, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত। আবার চীনের বিরুদ্ধে বাকি সবার স্বার্থ-ঝগড়া একরকম নয়। অর্থাৎ চীনের সাথে বিরোধ আছে; কিন্তু একেক রাষ্ট্রের ইস্যু একেকটা। সেখান থেকে একটা কমন স্বার্থ বের করা খুবই মুশকিল। এ ছাড়া ‘কোয়াডের’ চার রাষ্ট্র তাদের নিজেদের মধ্যেও তো পরস্পরবিরোধী গুরুতর স্বার্থবিরোধ আছে। যেমন- ভারত ও অস্ট্রেলিয়া ব্যাংক বিনিয়োগ ও ফাইন্যান্সিং খাতে নানা ইস্যুতে তৎপরতায় খোদ আমেরিকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আর চীনের সাথে হাত মিলিয়ে গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট হয়ে আছে। ওদিকে আমেরিকার বিরুদ্ধে রাশিয়া ও চীনের উদ্যোগে গঠিত নিরাপত্তা ও বাণিজ্য জোট ‘সাংহাই কো-অপারেশনে’ সদ্য যোগ দেয়া সদস্য হলো ভারত। আর চীন যেমন গ্লোবাল অর্থনীতিতে আমেরিকার স্থান নেয়ার জন্য ধাবমান, প্রায় তেমনি অর্থনীতির ক্ষেত্রে আমেরিকাকে পেছনে ফেলে দেয়ার আকাক্সক্ষা তো ভারতেরও আছে। আর সেই আকাক্সক্ষা পূরণের দিক থেকে দেখলে, ভারতের কাছে চীন বাস্তব সঙ্গী ও বন্ধু। এই অবস্থায় আগেরকালের জাতীয়তাবাদ দিয়ে একালের রাষ্ট্রস্বার্থ বোধ বুঝতে চাইলে মারাত্মক ভুল হবে; আগের জাতীয়তাবাদী বোধের ধারণা একালে অচল। একালে যার সাথে বড় স্বার্থবিরোধ আছে, তার সাথেই আবার গভীর বাণিজ্য বিনিয়োগ সম্পর্কে জড়িয়েও থাকে।

 

আরো কথা আছে। রোহিঙ্গা ইস্যু আমাদের জন্য বিরাট শিক্ষক, বিরাট অভিজ্ঞতা। মানুষের কী হবে, মানুষ কে, কী- এসবের জবাব উত্তর এখন জানতেই লাগবে। মানুষের মর্যাদা কী হবে, এটা কি অর্থনীতির বাইরের প্রশ্ন? মানুষের মর্যাদা, মৌলিক মানবিক ও রাজনৈতিক অধিকার এগুলো পাশ কাটিয়ে কি আমরা একটি গ্লোবাল অর্থনীতির নিয়মশৃঙ্খলা কায়েম করতে পারব? আসলে মানুষের মর্যাদা, মানুষের মৌলিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার প্রসঙ্গে দুনিয়ায় সবার জন্য পালনীয় এবং তা

 

রক্ষা করতে বাধ্য ও কমিটেড- এমন এক রাজনৈতিক ব্যবস্থা অবশ্যই লাগবে, এটা পূর্বশর্ত।

কেবল অর্থনীতিই সব, জীবনের সব লক্ষ্য অর্জন মানেই বৈষয়িক অর্জন- এটা সবচেয়ে ভুল কথা, এক অর্থহীন ধারণা এর প্রমাণ?

 

এই যে ‘কোয়াড ব্লক’, আমেরিকা জাপান ভারত ও অস্ট্রেলিয়া মিলে চারটি রাষ্ট্র- চীনের বিরুদ্ধে, চীনের বেল্ট ও রোড উদ্যোগের বিরুদ্ধে জোট হয়ে উঠতে চেয়েছিল। চীনের বিরুদ্ধে এটাই তাদের কমন লক্ষ্য হওয়ার কথা। তাহলে রোহিঙ্গারা, সামান্য এগারো লাখের এক জনগোষ্ঠী- এক রোহিঙ্গা ইস্যু তাদের কোথায় নিয়ে গেল? চীন-ভারত মোটা দাগে এক দিকে আর আমেরিকা আরেক দিকে, কেন? ‘কোয়াড’ গড়ার খায়েশ যাদের আছে তাদের তো এই আলাদা আলাদা পরিণতি হওয়ার কথা নয়।

 

এটা প্রমাণ করে যে, মানুষের প্রশ্নকে পাশ কাটিয়ে কোনো জোট বা কোনো কমন স্বার্থ খাড়া করা যায় না, যাবে না। টিকবে না। মানুষকে বাদ দিয়ে অর্থনৈতিক স্বার্থ বলে কিছু নেই।

ভারতের এক আঁতেল, থিংকট্যাংক ব্যক্তিত্ব হলেন সাবেক নৌ-কমডোর সি উদয়ভাস্কর। তিনি বলছেন, ‘কোয়াড’ যাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে তারা হলেন সব ‘গণতন্ত্রের লোক’। ‘গণতন্ত্র তাদের লক্ষ্য, তাদের ধ্রুবতারা-চোখের মণি। সে দিকে তাকিয়ে নাকি হাঁটছে ওই ‘কোয়াড’। ‘এটা হলো গণতন্ত্রীদের ঐক্যতান কনসার্ট’। হতে পারে হয়তো; তবে সেটা রাষ্ট্রসীমার ভেতরে। আর চীনকে নিচু দেখানোর উদ্দেশ্যে বললে, তা বটে, তারা নির্বাচনের দেশ। কিন্তু তাহলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে পুরো ‘কোয়াডের’ সদস্যরা একমত নন কেন? সব ‘গণতন্ত্রীদের ঐক্যতানের’ পক্ষরা এক দিকে; আর বিপক্ষরা চীনের সাথে অন্য দিকে- এই ভিত্তিতে অবস্থান নিতে পারলেন না কেন? আর তারা যদি গণতন্ত্রকে ধ্রুবতারা মেনে হেঁটেই থাকেন, সে ক্ষেত্রে তাদের এই গণতন্ত্রবোধ কি নিজ নিজ রাষ্ট্রসীমায় থেমে যায়? ‘গণতন্ত্রবোধ ভারতের রাষ্ট্রসীমার’ ভেতরেই কেবল কাজ করে? আর বাইরে কাজ করে না বলেই রোহিঙ্গারা মরবে, ১৯৯২ সালের নাগরিকত্ব আইন ওদের ওপর প্রয়োগ করা হবে? গ্লোবাল ইউনিভার্সাল হিউম্যান রাইট বলে কিছু থাকবে না বা নেই? আর উদয় শঙ্করেরা এ ব্যাপারে উদাসীন হবেন। হায়রে গণতন্ত্রী!

 

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক

goutamdas1958@hotmail.com