Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দেশে চাকরি হয় না, কোরিয়ায় গিয়ে রিসার্চ প্রফেসর

bangladeshi-in-koria
বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন কোরিয়ার তথ্য অনুযায়ী দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। তার মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার ইপিএস কর্মী (শ্রমিক)। ১০০-১৫০ ব্যবসায়ী ৪শ এর মতো কোরিয়ান রেসিডেন্ট এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার। এর মধ্যে পিএইচডি গবেষক প্রায় ৪শ।

তেমনই একজন গবেষক ড. মোহাম্মদ আফছার উদ্দীন। আফছার উদ্দীনের জম্ম ১৯৮৬ সনে নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ উপজেলায়। ছোটবেলা থেকে শিক্ষাব্রতী আফছার উদ্দিন কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সম্পন্নের পর ভর্তি হন দেশের অন্যতম সেরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে। সেখান থেকে সাফল্যের সাথে স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তর চলাকালীন সময়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য বৃত্তি নিয়ে পাড়ি জমান দক্ষিণ কোরিয়া বুসান ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে।

chardike-ad

স্নাতকোত্তর-পিএইচডির (সমন্বিত) এই দীর্ঘ যাত্রায় শুরু থেকেই কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে গবেষণায় কৃতিত্বের সাক্ষর রেখে ২০১৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। পরবর্তীতে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে কিছুদিন চীনের সাউথ ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজিতে গবেষণা করেন।

বর্তমানে তিনি বিশ্বখ্যাত কোরিয়া ইউনিভার্সিটির রিসার্চ প্রফেসর পদে কাজ করছেন। গবেষণার ক্ষেত্র হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ যা সহজ করছে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর জীবনের মান উন্নয়নে।

কর্মজীবনে রসায়নে ২০০০ সালে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর অ্যালান জে হিগার এবং পিস্ট্রলি মেডালিস্ট খেতাবপ্রাপ্ত অধ্যাপক টবিন জে মার্কের মতো বিশ্বখ্যাত রসায়ন বিজ্ঞানীদের সাথে রয়েছে তার যৌথ গবেষণাপত্র।

আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি, রয়েল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রিসহ রসায়নের বিখ্যাত সব বিজ্ঞান সাময়িকীতে এ পর্যন্ত তার ৩৯টি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরের হিসেবে ৩০০ অতিক্রম করা ড. আফছার উদ্দিনের গবেষণা কর্ম অন্য গবেষকরা সাইটেশন করেছেন ১০০০ বারের বেশি, যেটি সংক্ষিপ্ত গবেষণাকালের হিসেবে নি:সন্দেহে অনন্য অর্জন।

সংক্ষিপ্ত এ শিক্ষা জীবনে নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন ড. মোহাম্মদ আফছার উদ্দীন। অংশ নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অনেক কনফারেন্সে।

২০১৭ সালে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন কোরিয়ায় তিনি সেরা গবেষকে সম্মানিত হয়েছেন তিনি। তার হাতে সম্মাননা তোলে দেন কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব জাহিদ হোসেন। এসময় ছিলেন দ্বিতীয় সচিব রহুল আমিন এবং বিসিকের নেতৃবৃন্দ।

বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ প্রফেসর হিসেবে কাজ করার সুযোগ হলেও নিজ দেশ বাংলাদেশে আফছার উদ্দীন পাননি কদর। বুয়েট এবং গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার জন্য অনেক চেষ্টা করেও বিখ্যাত এ তরুণ গবেষক সুযোগ পাননি।

আফছার উদ্দীন নিজের মেধা খরচ করছেন ভিন দেশ তথা কোরিয়ান শিক্ষার্থীদের অগ্রগতির জন্য, অথচ তার এ মেধা ও সৃষ্টিশীলতা দিয়ে এগিয়ে নিতে পারতো দেশকে, উপকৃত হতো বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা।

বিসিকে অ্যাওয়ার্ডে সেরা গবেষকের সম্মান পাওয়ার পর সংক্ষিপ্ত অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ঝরে পড়লো হতাশা।বলছিলেন, “দেশে ফিরে যেতে চাই। আমার গবেষণাকর্ম কাজ লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখতে চাই”।

দক্ষিণ কোরিয়ায় ড. আফছার উদ্দীনের মতো এমন আরো অনেক গবেষক আছেন, যারা কিনা দেশের জন্য অবদান রাখতে পারেন। কিন্তু দেশ মেধাবীদের কদর বুঝতে পারছে না। কদর বুঝছে রাজনৈতিক পরিচয়ের, ক্ষমতার আর স্বজনপ্রীতির। মেধাবীদের কদর কখন বুঝবে বাংলাদেশ?

লেখক: সাইফুল্লাহ সাদিক