জাতিগত দাঙ্গায় হঠাৎ করেই উত্তাল হয়ে উঠেছে শ্রীলঙ্কা। দেশটির পর্যটন নগরী ক্যান্ডিতে গত রোববার হঠাৎ করেই মুসলিম-বৌদ্ধ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতির সামলাতে দেশব্যাপী ১০ দিনের জরুরি অবস্থাও জারি করেছে সরকার।
জাতিগত সমস্যা শ্রীলঙ্কায় নতুন কিছু নয়। সংখ্যাগুরু সিংহলিজদের সঙ্গে তামিলদের সমস্যা আশির দশকে রূপ নিয়েছিল রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে। তামিল বিচ্ছিন্নবাদীদের দমনে ২৬ বছর ধরে লড়তে হয়েছে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীকে। তামিলরা শিকার হয়েছে ব্যাপক নৃশংসতার। ২০০৯ সালে এই যুদ্ধের অবসানের পর ভারত মহাসাগরের ছোট্ট এই দ্বীপরাষ্ট্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে ব্যাপকভাবে। সে কারণেই ক্যান্ডিতে রোববারের জাতিগত দাঙ্গা হতবাক করে দিয়েছে দেশটির শান্তিপ্রিয়, বিবেকবান মানুষকে।
শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শান্তির বার্তা দিয়েছেন। ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তিনি বলেছেন, ‘আমরা কি অতীত থেকে কোনো শিক্ষাই নিইনি?’
কুমার সাঙ্গাকারা হতাশার সুরেই বলেছেন, ‘আমরা সবাই কি মানসিকভাবে এতটাই দৈন্য যে আমরা বুঝতে পারছি না বিবেকহীন ও নির্বোধ কাণ্ডকীর্তি আমাদের ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত করছে! আমরা কি মৌলিক মানবিক গুণাবলি হারিয়ে ফেলছি?’
ক্যান্ডির দাঙ্গায় রোববার মুসলিম সম্প্রদায়ের দোকানপাট ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একজন সিংহলিজ ট্রাকচালকের মৃত্যু ও তাঁর শেষকৃত্যের পরপরই এই ঘটনা ঘটে।
সাঙ্গাকারা এখনই এই হানাহানি, এই হিংসা, এই বিদ্বেষের শেষ দেখতে চান। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেছেন, একে অন্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রত্যেক লঙ্কান নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য, ‘অপরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব। প্রতিবেশীর ভালো-মন্দ দেখাও আমাদের দায়িত্ব। আমরা আমাদের বোনের রক্ষাকবচ, ভাইয়ের রক্ষাকবচ। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে প্রত্যেক শ্রীলঙ্কান নিরাপদ। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কাছে স্বাগত ও গ্রহণীয়।’
মনটাকে উদার রাখার আহ্বানও আছে সাঙ্গাকারার ভিডিও বার্তায়, ‘আমরা প্রত্যেকের জন্য আমাদের হৃদয় ও মনকে খোলা রাখব। সবাই মিলে আমরা এই জাতিগত বিদ্বেষ ও দাঙ্গার পাগলামি বন্ধ করতে চাই। এসব আমাদের এখনই বন্ধ করতে হবে।’
আবেগ ঢেলে দিয়েই সাঙ্গাকারা বলেছেন, কি সিংহলিজ, কি তামিল, কি মুসলিম—তাঁর কাছে সবাই এক, ‘আমি যখন আমাদের শ্রীলঙ্কান ভাইবোনদের চোখের দিকে তাকাই, আমি কিন্তু কোনো পার্থক্য দেখি না। সিংহলিজ, তামিল, মুসলিম—সবার মধ্যেই আমি নিজেকে দেখতে চাই। আমি তাদের চোখে একই ধরনের প্রত্যাশা ও স্বপ্ন দেখতে পাই। আমি সবার চোখেই দেশের জন্য একই ধরনের ভালোবাসার দৃষ্টি দেখি। একে অন্যের প্রতিও ভালোবাসা দেখি। আসুন, আমরা নিশ্চিত করি, এই চোখগুলোয় অজ্ঞানতার কারণে যেন কোনো ধরনের অন্ধতা ভর না করে। কোনো ভয় ও সংশয়ও যেন না থাকে।’
পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) খেলতে এই মুহূর্তে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন সাঙ্গাকারা। সেখান থেকে পাঠানো এই বার্তা কতজন শ্রীলঙ্কানের কাছে পৌঁছাবে, সেটা নিয়ে কিন্তু সংশয় আছেই। গতকালই দাঙ্গা প্রতিরোধে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে শ্রীলঙ্কান সরকার।