আধিপত্য বিস্তার ও ঘাটের ইজারা নেয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের কোপে একজন নিহত হয়েছেন। শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ড়াইলের কালিয়ায় পাঁচগ্রাম ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামে হেমা মুন্সির বাড়ির সামনে পাকা সড়কের ওপর এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির লাশ বাড়ির উঠানে রেখেই প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। দুপক্ষের লোকজন স্থানীয় নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তির সমর্থক।
নিহত পান দোকানি আবু সাঈদ ভূঁইয়া (৬০) যাদবপুর গ্রামের মুজিবর ভূঁইয়ার ছেলে ও আওয়ামী লীগের সমর্থক ।
এ ঘটনায় রাজ্জাক ভূঁইয়া (৩০), হাবিব ভূঁইয়া (৪৫), আহাদ ভূঁইয়া (১৭), জিয়া ভূঁইয়া (৩০), মামুন গাজীসহ (২৫) উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়। আহতদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও পাঁচগ্রাম ইউপির সাবেক মেম্বার যাদবপুর গ্রামের হেমায়েত মুন্সী পক্ষের ও একই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কিবরিয়া গাজীর পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলে আসছিল। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে যাদবপুর খেয়াঘাটের ইজারা নেয়াকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। এরই জেরে শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হেমায়েত মুন্সির সমর্থকরা কিবরিয়া গাজীর সমর্থকরা যাদবপুর খেয়াঘাট অভিমুখে যাওয়ার পথে হামলা করলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে কিবরিয়ার সমর্থক আবু সাঈদ ভূঁইয়াকে ধারালো দা দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে ঘটনাস্থলেই হত্যা করে প্রতিপক্ষরা।
এদিকে নিহত আবু সাঈদের লাশ বাড়ির উঠানে রেখেই কিবরিযা গাজীর লোকজন প্রতিপক্ষ হেমা মুন্সির সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ সময় একই গ্রামের মিলন মুন্সি,আনসার মুন্সি,মহসীন মুন্সি,ভেল্টু মুন্সি,সাইফুল মুন্সি,তারিক মুন্সি,তহিদুল মুন্সিসহ অনেকে অন্তত ৪০ বাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর এবং লুটপাট চালায়।
ভাঙচুর ও লুটপাটে ক্ষতিগ্রস্ত মিলন মুন্সির স্ত্রী আমেনা বেগম জানান, ‘৪০-৫০ জন লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমাদের বাড়ির ফ্রিজ,টিভিসহ যাবতীয় মালামাল ভাঙচুর করে। এ ছাড়া গোয়ালঘরে থাকা গরু-ছাগল লুট করে নিয়ে যায়। পুলিশের উপস্থিতিতেই এই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।’
ঘটনার পরপরই নড়াইলের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মেহেদী হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, ‘দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ফলে আবু সাঈদ ভূঁইয়া নিহত হয়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সেদিকে পুলিশের বিশেষ নজর রয়েছে।’
পুলিশের উপস্থিতিতে ভাঙচুরের ঘটনা অস্বীকার করে কালিয়া থানার ওসি শেখ শমসের আলী বলেন, ‘এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলে আসছে। উভয়ের মধ্যে একাধিক মামলা-মোকদ্দমা বিদ্যমান। হত্যার পরে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে, বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।’