রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নির্মূলের মুখে বাংলাদেশ সীমান্তে নোম্যান্সল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া একটি রোহিঙ্গা পরিবার শনিবার দেশটিতে ফিরে গেছে। এর আগে যদিও জাতিসংঘ হুশিয়ারি দিয়েছে, রোহিঙ্গাদের এখনই নিরাপদ প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়।
রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ফেরার অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে তাদের প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা করার জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশের মধ্যে শুক্রবার একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।-খবর এএফপির। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইউএনএইচসিআরের সদর দফতরে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও ইউএনএইচসিআরের মহাপরিচালক ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি ওই সমঝোতায় সই করেন।
দেশটির সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে চার লাখ রোহিঙ্গা গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে জাতিগত নির্মূল অভিযান শুরু হলে আরও সাত লাখ রোহিঙ্গা এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউএনএইচসিআর বলেছে, শরণার্থীদের নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারে এখনও অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়নি। দেশটির সরকারকে সেই পরিবেশ তৈরি করতে অবকাঠামোগত প্রস্তুতির বাইরে আরও কাজ করতে হবে। সংস্থাটি জানায়, বাংলাদেশে থাকা শরণার্থীরা বলেছে, মিয়ানমারে ফেরার আগে তাদের নাগরিকত্বের অধিকার ও রাখাইনে নিজেদের ভূমিতে সব মৌলিক অধিকার নিয়ে বসবাস করার নিশ্চয়তা চায়।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাটি জানিয়েছে, রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে যারা এখনও মিয়ানমারের ভেতরে অবস্থান করছেন, তাদের নির্বিঘ্নে চলাফেরার সুযোগ করে দেয়া হলে তা বাংলাদেশে অবস্থানরত শরণার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক হবে। মিয়ানমার সরকার ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে জানায়, শনিবার প্রথম প্রহরে রোহিঙ্গাদের একটি পরিবার মিয়ানমারে ফিরেছে। পাঁচ সদস্যের ওই মুসলিম পরিবারটি রাখাইনের টাওয়াংপেলিটাও শহরে প্রত্যাবাসন শিবিরে ফিরে এসেছে।
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয় অস্বীকার করে মুসলিম বলে সম্বোধন করে। দেশটির কর্তৃপক্ষ জানায়, যেহেতু তারা একসময় এ দেশে বসবাস করেছেন, তাই তাদের একটি জাতীয় প্রত্যয়নপত্র দেয়া হবে। অর্থাৎ তারা নাগরিকত্ব কিংবা দেশটিতে বেঁচে থাকার পূর্ণ অধিকার পাচ্ছেন না।
মিয়ানমারে প্রবেশের পর দেশটির অভিবাসন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাদের স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা করেছেন। সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুর্নবাসনবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে চাল, মশারি, কম্বল, গেঞ্জি, লুঙ্গি ও রান্নার জিনিসপাতি দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলেছে, এখন ব্যাপকহারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করা হলে সেটি একটি অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত হবে। মিয়ানমার সরকার এখনও তাদের ওপর আইনগত বৈষম্য ও কয়েক দশকের নির্যাতনের প্রক্রিয়া বন্ধ করেনি।
রোহিঙ্গারা কয়েক দশক ধরে রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে এলেও বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে তাদের বাঙালি অভিবাসী বলে ডাকা হয়। দেশটিতে তাদের নাগরিকত্বের অধিকার কেড়ে নিয়ে চরম অবমাননাকর আশ্রয় শিবিরে বসবাস করতে বাধ্য করা হয়েছে। তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চলাফেরা ও অন্যান্য মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গত ২৩ নভেম্বর নেপিদোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দফতরের মন্ত্রী চ টিন্ট সোয়ে একটি চুক্তি সই করেন। তখন দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কথা ছিল।
এর পর রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠনোর বিষয়ে অবকাঠামোগত আয়োজন নামে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি মাঠপর্যায়ের আরেকটি চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়। তাতে প্রত্যাবাসন শুরুর দুই বছরের মধ্যে তা শেষ করতে উভয়পক্ষ সম্মত হয়।