Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

drag-businessকারাগার হলো সংশোধনের জায়গা। অথচ সেই কারাগারে বসেই চলছে রমরমা মাদক ব্যবসা। দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও অপরাধীরা কারাগারে থেকে অবাধে চালাচ্ছে মাদক ব্যবসা। একই সঙ্গে তারা নিয়মিত মাদক সেবনও করে যাচ্ছে। মাদক সেবন ও ব্যবসায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন কারাগারগুলোতে দায়িত্বে থাকা শতাধিক কর্মকর্তা ও কারারক্ষী। এমন অভিযোগ ইতিমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে এসেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের কারাগারগুলোতেও মাদক সেবন ও পাচারে জড়িতদের শাস্তি দিতে তদন্ত চলছে। কারাগারে বন্দিদের প্রায় ৬০ শতাংশ আসামি মাদক সংক্রান্ত মামলার আসামি।

এদিকে মাদক নির্মূলে সারাদেশে র‍্যাব-পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ১৩ হাজার ৫৩ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবনকারী। নিহত হয়েছে ১১২ জন। উদ্ধার করা হয়েছে ১০০ কোটি টাকার ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক। র‍্যাবের অভিযান শুরু হয় গত ৪ মে থেকে। র্যাবের অভিযানে এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ৪ হাজার ২৩ জন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৩ হাজার ২৭৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। মোট অভিযান পরিচালনা করা হয় ৭২৪টি। র্যাব ৫৯ কোটি টাকার মাদক উদ্ধার করে। র্যাবের সঙ্গে গুলি বিনিময়কালে ২৫ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।

chardike-ad

অপরদিকে পুলিশ পয়লা রমজান থেকে মাদক নির্মূল অভিযান শুরু করে। অভিযানে এ পর্যন্ত ৯ হাজার ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিহত হয়েছে ৮৭ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। মামলা হয়েছে ৭০২৬টি। উদ্ধার করা হয়েছে ৪১ কোটি ৫৭ লাখ টাকার মাদক। এরমধ্যে ১৭ লাখ পিস ইয়াবা, ২২৮৬ কেজি গাজা, ২৩ কেজি হেরোইন, ১৬ হাজার বতল ফেনসিডিল, ১২১০টি বিয়ার, ৫৫ হাজার লিটার চোলাই মদ (দেশি)।

দেশের বিভিন্ন স্থানে অবাধে মাদক পাচার হলেও কারাগারে পাচার হওয়ার বিষয়টি অনেকের অজানা ছিল। কারাগারে বন্দিদের মাদক সরবরাহে বিভিন্ন কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নানা সময়েই উঠেছে। অভিযান শুরু হওয়ার পর আস্তে আস্তে সকল তথ্য বের হয়ে আসছে। মাদক সেবন ও পাচারে জড়িত থাকার অভিযানে ইতিমধ্যে কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত ও শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার তিনজনকে চাকরিচ্যুত এবং ১৪ জনকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। কারা অধিদপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মাদক সংরক্ষণ, সেবন এবং বন্দিদের সরবরাহ করার অভিযোগে ব্যবস্থা গত এক বছর ধরেই নিচ্ছেন তারা।

গত বছরের মার্চ মাসে শরীয়তপুর কারাগারের সালাউদ্দিন, পলাশ হোসেন ও ফারুক হোসেন নামে তিন কারারক্ষীর বিরুদ্ধে ইয়াবা সেবনের অভিযোগ আসে। অভিযোগ আসার পরপরই তাদের সাময়িক বরখাসস্তকরা হয়। এরপর বিভাগীয় তদন্তে প্রমাণ পাওয়ায় গতকাল তাদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। এছাড়া মাদক সেবনের অভিযোগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষী রায়হান উদ্দিন ও আশরাফুল ইসলামকে অন্যত্র শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, বর্তমানে জেলার, ডেপুটি জেলার এবং কারারক্ষীসহ প্রায় শতাধিক কর্মকর্তারা বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে। এদের কেউ বন্দিদের কৌশলে মাদক সরবরাহ করেছেন, কেউবা আসক্ত, আবার কেউ নিজের কাছে সংরক্ষণ করে সময় ও সুযোগ মতো বিক্রি-সরবরাহ করে থাকেন। ইতিমধ্যে কারা কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে প্রায় ১০০ জনের সাময়িক বরখাস্ত করেছে। কারা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, কারা কর্তৃপক্ষ মাদকের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে। অপরাধ অনুযায়ী তাদের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হবে।

উদ্ধার করা ইয়াবা বিক্রির অভিযোগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার মোমিনুল ইসলামকে গত মার্চ মাসে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এছাড়া মাদকের সংশি­ষ্টতার অভিযোগে অনেকের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে পদাবনতি, পদোন্নতি না দেওয়া, অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সাত হাজার আসামির মধ্যে প্রায় ৫ হাজারই মাদক সেবন, ব্যবসা ও পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে বন্দি রয়েছে। কারাগারের ভেতরেও এসব আসামি জমজমাট মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বন্দিদের পাশাপাশি জমাদার ও কারারক্ষীদের একটি অংশ এ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। অসাধু কিছু কারারক্ষী ও কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কয়েকজন দাগি কয়েদি মাদক ব্যবসার একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়া বন্দিরা পায়ুপথসহ নানা কৌশলে শরীরের বিভিন্ন অংশে মাদক নিয়ে কারাগারে ঢুকে পড়ে। কারা অভ্যন্তরে স্বজনদের দেওয়া খাবারের সঙ্গে ইয়াবা, হেরোইন ও গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য প্রবেশ করছে। তাছাড়া কতিপয় কারারক্ষী মাদকদ্রব্য ভেতরে বহন করে নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীর (কয়েদি) হাতে পৌঁছে দিয়ে আসে। এসব চলে কমিশনের ভিত্তিতে। ফলে অনেক অধূমপায়ীও কারাগার থেকে ভয়ানক মাদকসেবী হয়ে বাইরে বের হচ্ছে।

কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ও আদালতে হাজিরা দিতে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, কারাগারের ভেতরে ও বাইরে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি বড় সিন্ডিকেট রয়েছে। বন্দি মাদক ব্যবসায়ীদের লোকজন আদালত চত্বরে এসে তাদের হাতে ছোট ছোট মাদকের পুটলি তুলে দেয়। ওই মাদকদ্রব্য বহন না করলে কারাগারের নির্যাতনের শিকার হতে হয়। নির্যাতনের ভয়ে অনেকে মাদকদ্রব্য বহন করতে বাধ্য হন। সম্প্রতি জজকোর্টে হাজিরা দিতে যাওয়া চার’জন বন্দি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা অন্তত ১০ বার ইয়াবা ট্যাবলেট সঙ্গে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন বলেন, শরীরের সঙ্গে স্কচটেপ মেরে, জুতার মধ্যে, মলদ্বারে, গালের মধ্যে বিশেষ উপায়ে ইয়াবা গাঁজা বহন করেন। একজন কারারক্ষী বলেন, ঢালাওভাবে সব কারারক্ষী মাদক পাচার করে না। কারারক্ষীদের একটি চক্র সক্রিয় আছে মাদক পাচারে। তারা প্রধান ফটক দিয়েই মাদকদদ্র্য ভেতরে নিয়ে নির্দিষ্ট মাদক ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেয়। লভ্যাংশর কমিশন পায় তারা। স্বজনদের দেওয়া খাবারের ভেতরেও মাদক পাচার করা হয়ে থাকে।

সৌজন্যে- দৈনিক ইত্তেফাক