Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পিএইচডি গবেষক পাচ্ছে না ইউজিসি

University grant commisionশিক্ষকদের উচ্চতর গবেষণায় উৎসাহিত করতে প্রতি বছরই পিএইচডি ফেলোশিপ দিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। যদিও কোনো বছরই ফেলোশিপের জন্য কাঙ্ক্ষিতসংখ্যক শিক্ষক খুঁজে পাওয়া যায় না। চলতি অর্থবছরেও নির্ধারিত ১০০টি ফেলোশিপের বিপরীতে আবেদন পড়েছে মাত্র ৬৮টি। এসব আবেদনের ভিত্তিতে ফেলোশিপের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র ২২ জন শিক্ষক।

ইউজিসির রিসার্চ সাপোর্ট অ্যান্ড পাবলিকেশনস বিভাগ (রিসাপ) সূত্রে জানা গেছে, পিএইচডি ফেলোশিপের জন্য প্রতি বছরই দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজের শিক্ষকদের কাছ থেকে গবেষণা প্রস্তাবনা আহ্বান করে আসছে ইউজিসি। প্রতি বছর ১০০ জনকে এ ফেলোশিপ দেয়ার সুযোগ থাকলেও কোনোবারই এর সমপরিমাণ আবেদন পাওয়া যায় না।

chardike-ad

ইউজিসি বরাবর সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরে। ওই বছর ফেলোশিপের জন্য আবেদন করেছিলেন ৮১ জন শিক্ষক। এর পরের বছর ফেলোশিপ দেয়া হয় ৬৮ জনকে, এর মধ্যে তা গ্রহণ করেছিলেন ৫৭ জন। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ সেশনের ফেলোশিপের জন্য আবেদনের শেষ তারিখ ছিল গত ১৫ মার্চ। এ সময়ের মধ্যে আবেদন পড়েছে মাত্র ৬৮টি। গতকাল এসব আবেদনে উল্লেখ করা গবেষণা প্রস্তাবনা বাছাইয়ের জন্য গঠিত কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৬৮টি গবেষণা প্রস্তাবনার মধ্যে সভায় মাত্র ২২টিকে নির্বাচিত করা হয়।

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এ প্রসঙ্গে বলেন, আগে বছরপ্রতি পিএইচডি ফেলোশিপ দেয়া হতো ৫০ জন শিক্ষককে। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর সেটি ১০০ করে দিয়েছি। অথচ আমরা ফেলোশিপ দেয়ার জন্য শিক্ষক পাচ্ছি না। শিক্ষকদের ফেলোশিপ না দিতে পেরে এ খাতের টাকা অব্যবহূত থেকে যাচ্ছে। এটি খুব দুঃখজনক। গবেষণা প্রস্তাবনার অধিকাংশই আসে বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষকদের কাছ থেকে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ব্যবসায় শিক্ষাকেন্দ্রিক বিষয়গুলোর। এসব বিষয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে হাতেগোনা কয়েকটি আবেদন পড়ে।

তিনি আরো বলেন, শুধু পিএইচডি ফেলোশিপ নয়; প্রতি অর্থবছরে গবেষণার জন্য যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাও খরচ করতে পারছে না। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই গবেষণা খাতের অর্থ অব্যবহূত থেকে যাচ্ছে।

ফেলোশিপের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক না পাওয়ায় এ বছর আবারো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গবেষণা প্রস্তাবনা আহ্বান করবে ইউজিসি। এ বিষয়ে রিসাপের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ওমর ফারুক বলেন, প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষক না পাওয়ায় আবারো গবেষণা প্রস্তাবনা আহ্বান করা হবে। তবে এতদিন পিএইচডি ফেলোশিপের আসন ছিল ১০০টি। প্রত্যেকের জন্য মাসপ্রতি ১৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ ছিল। এখন আসন সংখ্যা কমিয়ে ৫০ জন করে মাসপ্রতি ৩০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। শিক্ষকরা যাতে উৎসাহিত হন, সেজন্য টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ শিক্ষকেরই পিএইচডি ডিগ্রি নেই। এর পরও প্রয়োজনীয়সংখ্যক আবেদন পাচ্ছে না ইউজিসি। সংস্থাটির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে দেশের ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক ছিলেন ১৩ হাজার ৭২ জন। এর মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রিধারীর সংখ্যা ৪ হাজার ৫৮৬। সে হিসাবে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫ শতাংশ শিক্ষকেরই পিএইচডি ডিগ্রি নেই। এর বাইরে এমফিল ডিগ্রিধারী রয়েছেন ৯৬৬ জন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে তুলনামূলক নতুনগুলোয় পিএইচডি ও এমফিলধারী শিক্ষকের সংখ্যা কম। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সরকারি কলেজগুলোয় আরো কয়েক হাজার শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য গবেষণাকেই মানদণ্ড হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু পদোন্নতিতে গবেষণার পরিবর্তে রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পাচ্ছে। ফলে গবেষণা ও প্রকাশনার দিক অনেকটা নিষ্প্রভ থেকে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সবসময় বলা হয়, বরাদ্দ না থাকার কারণে গবেষণা করা যাচ্ছে না। প্রয়োজনের তুলনায় কম বরাদ্দ গবেষণায় শিক্ষকদের নিরুৎসাহিত করছে। কিন্তু এটিই একমাত্র কারণ নয়। শিক্ষকদের গবেষণাবিমুখতার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, পদায়নের ক্ষেত্রে গবেষণাকে গুরুত্ব না দেয়া। একজন শিক্ষক যদি গবেষণা ও প্রকাশনা ছাড়াই অধ্যাপক হয়ে যেতে পারেন, তাহলে তার ক্ষেত্রে গবেষণায় নিরুৎসাহিত হওয়াটাই স্বাভাবিক।

তিনি আরো বলেন, উন্নত বিশ্বে একজন শিক্ষককে প্রমোশন দেয়া হয় তার পরিচালিত গবেষণা প্রকল্প এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধ, কনফারেন্স-সেমিনার, বই ও শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে। অথচ আমাদের দেশে শিক্ষকদের মূল্যায়নে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসৃত হয় না, চাকরির সময়কেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়।

সূত্রঃ বণিক বার্তা