Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কর্তৃপক্ষের এক ভুলের কারণে নানামুখী ক্ষতির মুখে বিমান

bangladesh-bimanবিমানের আসন সংখ্যা ৪১৯। কিন্তু হজ ফ্লাইটের জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধন করার সময় উল্লেখ করা হয় ৩১৯ আসন। এখন হজযাত্রী পরিবহন করতে গিয়ে অতিরিক্ত ১০০ আসনের জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষকে জরিমানা দিতে হচ্ছে।

অন্যদিকে প্রথম দিন থেকেই প্রায় প্রতিটি ফ্লাইটে কিছু আসন খালি যাচ্ছে। যার কারণে যাত্রী পরিবহনের সামর্থ্য কমছে। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৭টি ফ্লাইটে প্রায় ৯০০ আসন খালি গেছে বা যাত্রী পরিবহনের সামর্থ্য কমেছে (ক্যাপাসিটি লস)।

chardike-ad

বিমানের বিক্রয় শাখার একটি সূত্র জানায়, প্রতিটি ফ্লাইটে আসন সংখ্যা ৪১৯-এর স্থলে ৩১৯ করার কারণে আগাম টিকিট বিক্রিও সেভাবে হয়েছে। ১৪ জুলাই হজ ফ্লাইট শুরুর আগের দিন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি টের পায়। ফলে আসন খালি যাচ্ছে। কিন্তু ১৫ আগস্টের মধ্যে ১৮৭টি ফ্লাইটে ৬৩ হাজার ৫৯৯ জন হজযাত্রীকে সৌদি আরব পৌঁছাতে হবে। এ অবস্থায় শুরুর দিকে এভাবে যাত্রীর অভাবে আসন খালি গেলে শেষ দিকে গিয়ে নতুন সংকট তৈরি হবে।

বিমানের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কর্তৃপক্ষের এক ভুলের কারণে বিমানকে নানামুখী ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। একদিকে খালি আসনের কারণে রাজস্ব আসছে না, আরেক দিকে ওই খালি আসনের জন্যও সৌদি আরবে জরিমানা গুনতে হচ্ছে। আবার খালি আসনের এসব যাত্রীকে পরে পাঠাতে গেলে বিমানকে সংকটে পড়তে হবে। নিয়মিত ফ্লাইটে যাত্রীদের রেখে এসব হজযাত্রীকে পাঠাতে হবে, সেটা আরেক ক্ষতি। কারণ, সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে, এবার ১৮৭টি ফ্লাইটের বাইরে অতিরিক্ত কোনো হজ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হবে না।

বিমানের সংশ্লিষ্ট আরেক কর্মকর্তা বলেন, হজ ফ্লাইটের একেকটি টিকিটের মূল্য ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। প্রায় দুই মাস আগে থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথম ফ্লাইট বা প্রথম দিনের সব ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি করে পরের দিনের টিকিট বিক্রি করার কথা। সে ক্ষেত্রে তো আসন খালি যাওয়ার কথা নয়। অথচ প্রথম ফ্লাইটেও আসন খালি গেছে।

আশকোনা হজ অফিসের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ১৪ জুলাই থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত চার দিনে বিমানের ২৭টি ফ্লাইটে ১০ হাজার ৩০৬ জন হজযাত্রী পরিবহন করেছে।

বিমান সূত্র জানায়, চারটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ দিয়ে বাংলাদেশ বিমান হজ ফ্লাইট পরিচালনা করছে। যার তিনটি ৪১৯ আসনের, একটি ৪০২ আসনের। উড়োজাহাজে আসন সংখ্যা অনুযায়ী ২৭ ফ্লাইটে যাওয়ার কথা ১১ হাজার ২০৫ জন। অর্থাৎ, এই চার দিনে আসন খালি গেছে ৮৯৯টি। সর্বশেষ গতকাল যে ছয়টি ফ্লাইট গেছে, তার মধ্যে ৪১৯ আসনের প্রথম তিনটি ফ্লাইটের প্রতিটিতে যাত্রী গেছে ৪০২ জন করে। আরেকটি ফ্লাইটে ৪১৭ জন। অর্থাৎ চারটি ফ্লাইটে ৫৩ আসন খালি গেছে।

কার ভুলে এমনটা হলো? এ জন্য দায়ী কারা? বিমানের হজ সেল, জেদ্দা অফিস, পরিচালন শাখা না পরিকল্পনা শাখার? এ বিষয়ে বিমানের বক্তব্য জানতে এই প্রতিবেদক গতকাল দিনভর প্রধান কার্যালয় বলাকায় ঘুরেও কোনো জবাব পাননি।

বলাকার সপ্তম তলায় বিমানের হজ সেল। সেখানকার বাণিজ্যিক কর্মকর্তা হামিদ সরকারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। জনসংযোগ শাখায় যোগাযোগ করেন।’ জনসংযোগ শাখায় গিয়ে জানা গেল, এর মহাব্যবস্থাপক বিদেশে। পাওয়া গেল ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাছমিন আকতারকে। তিনি বিষয়টি নিয়ে বিমানের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের আশরাফুল আলমের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেন। আশরাফুল আলম এ প্রসঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর এই প্রতিবেদক বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসাদ্দেক আহমেদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাঁর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, সন্ধ্যায় বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সভা আছে। তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাই কথা বলতে পারবেন না।

পরে ফোনে কথা হয় বিমানের জেদ্দার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ওসমান গনির সঙ্গে। তিনি ভুল হওয়া ও জরিমানা দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, প্রাক্‌-হজ ও ফিরতি হজ ফ্লাইটের প্রথম ১০ দিন একটি বিমান সংস্থা কত হজযাত্রী পরিবহন করতে পারবে, তার একটি কোটা চালু করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। কোনো সংস্থা চাইলেই নিজেদের ইচ্ছামতো যাত্রী বহন করতে পারে না। সে জন্য বিমান ৩১৯ বা ৪১৯ জন করে এনে তাদের সেই কোটা পূরণ করছে। যাত্রী পরিবহন সামর্থ্য কমার কথাও তিনি অস্বীকার করেন।

সৌজন্যে- প্রথম আলো