Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ড. ইউনুসের কারণে পদ্মাসেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে বিশ্বব্যাংক : প্রধানমন্ত্রী

sheikh-hasinaড. মুহম্মদ ইউনুসের প্ররোচণায় বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু নির্মাণের অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ড. ইউনুস বেআইনিভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে ছিলেন। তাকে বলার পরও তিনি সরলেন না। উল্টো সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করলেন। মামলায় হেরে আমেরিকায় যান। সেখানে তার প্ররোচণায় তখনকার বিশ্বব্যাংক প্রধান এ প্রকল্পের অর্থ বন্ধে অর্ডার দিয়ে যান।

রোববার (১৪ অক্টোবর) মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর নামফলক উম্মোচন শেষে বেলা ১১ টায় টোলপ্লাজা সংলগ্ন গোলচত্বরে সুধি সমাবেশে প্রধানঅতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

chardike-ad

তিনি বলেন, অনেকের ধারণা ছিল বিশ্বব্যাংক ছাড়া পদ্মা সেতু হবে না। কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছে। চলবেও। নিজের জন্য রাজনীতি করি না। এদেশের জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করি।

মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর নামফলক উম্মোচনের পাশাপাশি এন-৮ মহাসড়কের ঢাকা-মাওয়া এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি পরিদর্শন, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন, মূল নদীশাসন কাজ সংলগ্ন স্থায়ী নদী তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

hasina
পদ্মাসেতু এলাকায় বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নামফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। এর আগে বেলা ১১টা ১৭ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী পদ্মাপাড়ের মাওয়া প্রান্তে পৌঁছান। দুপুরে প্রধানমন্ত্রী জাজিরা পয়েন্টে সেতুর কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন। পরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিবচরে যাবেন এবং ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কাঠালবাড়ি ফেরিঘাটে জনসমাবেশে ভাষণ দেন।

রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ‘পদ্মা ব্রিজ রেল লিঙ্ক কনস্ট্রাকশন প্রজেক্ট’-এর প্রথম পর্যায়ের কাজ জাজিরা ও শিবচর হয়ে মাওয়া ও ভাঙ্গার মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপন করবে। আর পদ্মা বহুমুখী সেতুর মাধ্যমে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও যশোরের মধ্যে বৃহত্তর সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে।

চীন সরকার মনোনীত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লি. চীন জিটুজি পদ্ধতির আওতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ ব্যাপারে চীন এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ২৬৬৭ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ২৩ কিলোমিটার এলিভেটেড সেতুপথ নির্মিত হবে। এই সেতুপথে একাধিক লিফটসহ দুটি প্লাটফর্ম, একটি মেইন লাইন ও দুটি লুপ লাইন নির্মাণ করা হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নয়া দিগন্তের সূচনা হবে এবং দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি জেলার প্রায় ৬ কোটি মানুষের জীবনযাত্রায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। শুধু তাই নয়, রাজধানী ঢাকাসহ সমগ্র দেশের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে।

তারা আরো জানান, এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসমূহের লোকদের দীর্ঘ ভোগান্তি লাঘব হবে। দেশের অন্য প্রান্তে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তাদের যাত্রার সময় দুই থেকে তিন ঘণ্টা কমে যাবে। কংক্রীট ও ইস্পাত কাঠামোয় তৈরি দুই স্তরের পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন আর নীচ দিয়ে চলবে রেল।

সরকার ৩০ হাজার কোটি টাকার নিজস্ব তহবিলে দেশের সর্ববৃহৎ ‘পদ্মাসেতু’ নির্মাণ করছে। মূল সেতু, নদী শাসন, দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণসহ ৫ ভাগে সম্পন্ন হচ্ছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ।

এই সেতুতে থাকবে মোট ৪২টি পিলার। এগুলোর প্রতিটি ৬টি পাইলের ওপর দন্ডায়মান থাকবে। পিলারগুলোর ওপরে বসানো হবে ইস্পাতের স্প্যান। সেতুতে মোট ৪১টি স্প্যান বসবে।

মূল সেতু নির্মাণ করছে চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন। নদী শাসন কাজে নিয়োগ করা হয়েছে চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশনকে এবং দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লি.।

এই সেতুর নির্মাণ কাজ তদারক করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বুয়েট ও কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন এন্ড এসোসিয়েটস। সেতুটি নির্মাণের ফলে দেশের বাণিজ্য, উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।