Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

এক দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসীর করুণ গল্প

আলম (ছদ্মনাম)। ২৭ বছর বয়সে ইপিএস (এপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম) এর মাধ্যমে অনেক স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমিয়ে ছিলো স্বপ্নের দেশ দক্ষিণ কোরিয়াতে। বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিলো তাকে নিয়ে। সবসময় দোয়া করতো তার জন্য, ভালোবাসতোও অনেক। আলম দক্ষিণ কোরিয়ায় যা অায় করে ছিলো তার কষ্টার্জিত পুরো টাকায় পাঠিয়ে দেয় বাবা মায়ের কাছে। বাবা মা, ভাইবোনদের নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করার স্বপ্ন ছিলো তার। স্বপ্ন বাস্তবায়নে টানা কাজ করতে থাকে আর কষ্টার্জিত অর্থ পাঠায় বাবা মাকে।

chardike-ad

দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজ করা কঠিন। কাজ করতে করতে কোমরে ব্যাথা শুরু হয় আলমের। ক্রমেই কোমরের ব্যাথা বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে ভিসার পূর্ণ মেয়াদ শেষ হতে থাকে। ইপিএস এর নিয়ম অনুযায়ী ৪ বছর ১০ মাস পর বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে আলমকে। বৈধভাবে কাজ করে দেশে ফিরে কিছু করাই ছিল আলমের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে উপার্জনের সব টাকা বাবার নামেই পাঠান আলম। ৪ বছর ১০ মাসে  প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ্য টাকা পাঠায় বাবার নামে।

সময় শেষ করে দেশে ফিরে আলম। কোমর ব্যাথা নিয়ে প্রবাস না করে এবার দেশে কিছু একটা করতে হবে। বয়স পার হয়ে যাচ্ছে তাই বিয়েটাও করা দরকার। একদিন আলম বাবার সাথে বসলো দেশে ব্যবসা বাণিজ্য কিছু করবে বলে। কিন্ত আলমের বাবা নারাজ। বাবার জবাব তার কাছে ব্যবসার জন্য দেওয়ার মত কোন টাকা নেই। হতবাক হয়ে আলম জিজ্ঞেস করলো ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা পাঠালাম। ঐ টাকার খরচ বাদে বাকী টাকাতো থাকার কথা। বাবা বললো কোন টাকা নেই। আলম জিজ্ঞেস করে কি করলেন এতো টাকা?

বাবার উত্তর ‘সে কৈফিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে?‘ এক পর্যায়ে বাবা বলেন, ‘এক ছেলেকে (আলমের ভাই) ৮ লাখ টাকা দিয়েছি, অারেক ছেলে অনেক টাকা নষ্ট করেছে। সে ২ মাস পর পর মোটরসাইকেল পাল্টায়।  বাড়ি করেছি। এক মেয়েকে (আলমের বোন) বাড়ি করতে কিছু টাকা দিয়েছি। তোমার অারেক বোনজামাইকে ব্যবসা করতে কিছু টাকা দেয়েছি। অার অামি কিছু জমি কিনেছি। এতেইতো টাকা শেষ!’

হতভাগা আলম হতবিহবল হয়ে যায়! বাবাকে জিজ্ঞেস করে সবাইকে টাকা দিয়েছেন, ছোট ভাইকে টাকা নষ্ট করতে দিয়েছে্‌ অামার জন্য কি রেখেছে? কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ছোট ভাই বাবার পক্ষ নিয়ে ধমক দিয়ে দিয়ে কথা বলে আলমকে। একেতো টাকা নষ্ট করেছে অাবার ধমক দিয়ে কথা বলায় মেজাজ খারাপ হয় আলমের। মারতে উঠে ছোট ভাইকে। কিন্তু মারতে পারেনি প্রিয় ছোট ভাইকে। তাই বলে ছোট ভাই কিন্তু বসে থাকেনি স্বজোরে কিল-ঘুষি বসিয়ে দেয় আলমের উপর।

টাকাতো গেলই, সাথে ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে মার খেতে হলো। ভীষণভাবে অপমানিত বোধ করে আলম। প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে উঠে আলম। এর মধ্যে বাবা থানায় ফোন করে। পরিস্থিতি ঠান্ডা করতে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায় আলমকে। অাত্নীয়স্বজনরা বসে অালোচনা করে থানা থেকে ছাড়িয়ে অানলেও আলম আর ফিরে যায়নি বাবা মায়ের কাছে। চাইতেও যায়নি তার অধিকার।

এক অাত্নী্যের বাড়িতে আশ্রয় নেয় আলম। অাত্নীয় স্বজনদের অনেকেই বুঝতে পারে তা অবস্থা। তার জন্য আত্মীয় স্বজনরা মেয়ে দেখতে থাকে। আলম আবারো কোরিয়ায় আসার প্রস্তুতি নিতে থাকে। কোরিয়া আসতে হলে স্পেশাল সিবিটি পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। প্রস্তুতির মধ্যে বিয়ের জন্য একটি মেয়ে দেখে বিয়ের আয়োজন করে আত্মীয়স্বজনরা। বিয়ের পর স্পেশাল সিবিটি পরীক্ষা দিয়ে পাশও করে। পাশের পর ভিসা ইস্যু হলেও কোরিয়া আসার বিমান ভাড়াও জোগাড় করতে হিমশিম খায় আলম।

ফোন করে দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করা তার বন্ধুদের কাছ থেকে ধার নেয় বিমান ভাড়াসহ খরচের জন্য প্রায় ১ লাখ টাকা। আলম ফিরে আসে দক্ষিণ কোরিয়ায়। আবারো কর্মযুদ্ধে নেমে যায় আলম। এবার তাকে সফল হতে হবে। দেশে গিয়ে কিছু করতে হবে। ভুলে যেতে যায় সব কষ্ট। এখন তার অন্তত একজন জীবনসঙ্গী আছে।

এই গল্প যাকে নিয়ে সে আমার বন্ধু। আমরা চাই না আলমের মত ঘটনা কারো সাথে ঘটুক। সবাই যেন সতর্ক থাকে। প্রবাসীরা যেন তাদের পরিবারের সবার জন্য কিছু করার পাশাপাশি। নিজেদের স্বার্থের ব্যাপারেও সতর্ক থাকে। আমরা বলছি না পরিবারের জন্য কিছু না করতে। নিজেদের জন্য কিছু করেই যেন অন্য সবার জন্য করে। সকল প্রবাসী সবার জন্য শুভকামনা রইল।

আতাউর রহমান, ইয়ংইন সিটি, দক্ষিণ কোরিয়া