Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দক্ষিণ কোরিয়ায় টানা ৮ ঘণ্টা ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা

korea-examদক্ষিণ কোরিয়ার স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ঠিক সকাল ৮টা ৪০ মিনিট থেকে শুরু হয়েছে কলেজ স্কলাস্টিক অ্যাবিলিটি টেস্ট (সিএসএটি) অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। দেশটিতে এটি সুনেউং নামে পরিচিত। উল্লেখ করার মতো বিষয় হল টানা ৮ ঘণ্টা ধরে এই ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়। প্রায় পাঁচ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। এর ওপর নির্ভর করছে তাদের বাকি জীবন।

কারণ এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া মানে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া নয়, বরং এটা চাকরি, আয় এবং ভবিষ্যতে কোথায় তাদের অবস্থান হবে তাও নিশ্চিত করে দেবে। প্রতি বছরের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয় সুনেউং, যা সারাদেশকে একরকম অচল করে দেয়।

chardike-ad

এদিন দেশটির রাজধানী সিউল যেন নীরব হয়ে যায়। রাজধানীর দোকান ও ব্যাংকগুলো বন্ধ হয়ে যায়। স্টক মার্কেটও দেরিতে খোলে। বেশির ভাগ নির্মাণ কাজ এবং সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ কর্মসূচি থেমে যায়। এমনকি আকাশে উড়তে দেখা যায় না কোনও প্লেন।

এই দিনটি আসলেই অভিভাবকদের মাঝে এক ধরনের ভীতি কাজ করে। তাদের সন্তানরা যাতে পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হতে পারে, সেজন্য প্যাগোডা ও গির্জায় সন্তানদের ছবি সঙ্গে নিয়ে প্রার্থনা করতে দেখা যায় এসব অভিভাবকদের।

korea-examলি জিন-ইউং। ২০ ব্ছরের এ তরুণ এর আগে দুইবার সুনেয়াং পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে আমি এক সপ্তাহ আগে থেকেই সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে ওঠা শুরু করেছি। যাতে করে এ সময় পড়লে আমার ব্রেন ভালো কাজ করে। আমি প্রায়ই নিজেকে বলি-তুমি অনেক বেশি পড়াশেনা করেছ। এখন সময় এসেছে তার ফল দেখানোর।’

তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমার স্পষ্ট মনে আছে, গত বছর যখন পরীক্ষা উপলক্ষে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে স্কুল গেটে পৌছালাম, তখন দেখেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে পড়ুয়া একদল ছাত্র গান গাইছেন আর স্লোগান দিচ্ছেন। তারা আশির্বাদস্বরূপ আমাদের হাতে ইয়ট (এক ধরনের মিষ্টান্ন) তুলে দিয়েছিলেন।’

আনুষ্ঠানিকভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার একমাস পর পরীক্ষার্থীদের স্কোর জাতীয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। তবে অবৈধভাবে বিভিন্ন ওয়েবসাইট পরীক্ষার পরপরই উত্তর প্রকাশ করে। পরীক্ষার্থীরা এগুলো থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান বুঝতে পারে।

অতি গোপনীয়তায় প্রশ্নপত্র তৈরি: পুরো পরীক্ষাটি যেন একটি রহস্যে আবৃত। পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে প্রতি সেপ্টেম্বরে (পরীক্ষার দুই মাস আগে) সিউল থেকে ৫০০ শিক্ষক বাছাই করা হয় এবং তাদেরকে রাখা হয় পর্বতবেষ্টিত গাংওন প্রদেশের এক গোপন জায়গায়। পরীক্ষার এক মাস আগেই তাদের কাছ থেকে ফোনগুলো নিয়ে নেয়া হয়। নিষিদ্ধ করা হয় বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাদের সব ধরনের যোগাযোগ। এ সময় তারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন না। এমনকি তারা বাইরেও বের হতে পারেন না।

পরীক্ষার প্রশ্ন ও মানবন্টন: জাতীয় ভাষা-অতীত (৪৫টি প্রশ্ন, ১০০ পয়েন্টস, ৮০ মিনিট), গণিত (৩০টি প্রশ্ন, ১০০ পয়েন্ট, ১০০ মিনিট), ইংরেজি-অতীত ইংরেজি (৪৫টি প্রশ্ন, ১০০ পয়েন্ট, ৭০ মিনিট), কোরিয়ান ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান/বিজ্ঞান/কারিগরি শিক্ষা, ২০টি প্রশ্ন, ৫০ পয়েন্ট, ১০২ মিনিট। এর মধ্যে কোরিয়ান ইতিহাস আবশ্যিক। বিদেশি ভাষা অথবা চীনা বিষয়াবলি ও ক্লাসিক, ৩০টি প্রশ্ন, ৫০ পয়েন্ট, ৪০ মিনিট।

সূত্র: বিবিসি