Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অগ্রসর অর্থনীতি সেরে ওঠায় লাভবান এশিয়ার তিন দেশ

সিউল, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪:

বড় অর্থনীতির দেশগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জোরে ছুটতে শুরু করেছে বহির্মুখী ও উদার অর্থনীতির দেশগুলো। এশিয়ার তিনটি দেশের অর্থনীতির পথপরিক্রমা এমনটাই সাক্ষ্য দিচ্ছে।

chardike-ad

দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরের অর্থনীতির দুটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেগুলো তাদের বিশ্ব অর্থনীতির দর্পণের ভূমিকায় উপনীত করেছে। প্রথমত, উল্লিখিত তিন দেশের প্রতিটির অর্থনীতিই উদার এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য তাদের জিডিপির একটি কেন্দ্রীয় উপাদান। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি দেশই এমন একটি অর্থনীতির সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত, যেটি এক দশক ধরে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালকের ভূমিকা পালন করছে অর্থাৎ চীনের সঙ্গে এসব দেশের অর্থনীতির সম্পর্ক বেশ গভীর।

images (1)২০১৩ সালে তিনটি দেশেরই প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। শেষ (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রান্তিকেও বৈশ্বিক অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির সত্যিকারের ছায়া পড়েছে তাদের পারফরম্যান্সে।

বিশ্বের ১৩তম বৃহৎ অর্থনীতি দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিপিতে রফতানির অবদান ৫৬ শতাংশ। এর অর্থনীতির ‘উদারতার অনুপাত’ (ওপেননেস রেশিও) ১১০ শতাংশ, যার অর্থ দাঁড়ায় বছরে দেশটির মোট আমদানি-রফতানি জিডিপির ১১০ শতাংশের সমান।

২০তম বৃহত্তম অর্থনীতি তাইওয়ানের জিডিপিতে রফতানির ভূমিকা ৭৬ শতাংশ। তাদের ওপেননেস রেশিও গত বছর ১৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
জনসংখ্যায় ১১৬তম হলেও জিডিপির বিচারে সিঙ্গাপুরের অবস্থান ৪০তম। হংকংয়ের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম পুনঃরফতানিকেন্দ্রও সিঙ্গাপুর। বার্ষিক রফতানি জিডিপির ২০০ শতাংশের সমান। ওপেননেস রেশিও ৩৯৭, যা উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।

তিনটি দেশই বৈদ্যুতিক, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, রাসায়নিকসহ শিল্প খাত ও ভোক্তা পর্যায়ে অনেক আবশ্যক পণ্যের বিশ্বসেরা উৎপাদক। এসব দেশের বৈশ্বিক অর্থনীতির নির্ভরযোগ্য দর্পণ হয়ে ওঠার পেছনে এসব শিল্পই মূল ভূমিকা রাখছে।

উচ্চ উৎপাদন সক্ষমতার কারণে তারা নিছক অভ্যন্তরীণ ভোগের ওপর নির্ভরশীল থাকতে পারে না। বিশ্ব অর্থনীতির চাহিদাই বরং তাদের কোম্পানিগুলোর ব্যবসাকে প্রভাবিত করে। বাণিজ্যিক চ্যানেলে আসা মুনাফাই কার্যত এসব অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ চাহিদা সৃষ্টি করে।
বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর এ নির্ভরতা দেশগুলোর প্রবৃদ্ধিকে বৈশ্বিক চাহিদার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত করেছে। তাদের প্রবৃদ্ধির ওপর বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাস-বৃদ্ধির প্রভাব উন্নত অর্থনীতিগুলোর তুলনায় বেশি।

বিগত বছরগুলোর তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, ২০১১ সালের শেষ প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান ও চাহিদা পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে সঙ্গে কোরিয়া, তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরের প্রবৃদ্ধিও কমতে শুরু করে। ২০১২ সালের শেষ প্রান্তিকে তা সবচেয়ে বেশি কমে যায়।

২০১৩ সালের প্রথমার্ধে মার্কিন অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রবৃদ্ধিও বাড়তে শুরু করে। দেশ তিনটির প্রবৃদ্ধির গড় ২০১২ সালে ছিল ১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০১৩ সালে ৩ শতাংশ। জাপান এবং ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে চাহিদা বাড়ার সঙ্গে এর সম্পর্কটি স্পষ্ট।
গত বছর সিঙ্গাপুরের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এ সময় আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ প্রবৃদ্ধি হয় দেশটির। ২০১৩ সালে তাদের জিডিপি বেড়েছে ৪ দশমিক ১ শতাংশ। এর কারণ তাদের ওপেননেস রেশিও। গেল বছরটিতে সিঙ্গাপুরের আর্থিক খাত ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ম্যানুফ্যাকচারিং বেড়েছে ৭ শতাংশ।

কোরিয়ার প্রবৃদ্ধি ২০১২ সালের ২ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে গত বছর ৩ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়। তাইওয়ানের প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয় ২ দশমিক ২ শতাংশ।

২০১৩ সালটির দিকে তাকালে দেখা যাবে, শুরু থেকেই পুনরুদ্ধারের পথে যাত্রা করেছে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি জাপান। দেড় দশকের মূল্য সংকোচন সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকেই প্রবৃদ্ধি, চাহিদা সবই বাড়তে থাকে জাপানের।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি শক্তি ফিরে পাওয়ায় প্রণোদনা তুলে নেয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু হয় মার্কিন নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। সার্বিকভাবে ইউরোপও ঘুরে দাঁড়ায়।
২০১৪ সালে চাহিদা বাড়ানোর চ্যালেঞ্জটি থেকে গেলেও ভোগ বাড়ছে উন্নত দেশগুলোয়। এশিয়ার উদারতম বাজার অর্থনীতিগুলোর প্রবৃদ্ধিতে এর প্রভাব দেখা যাবে— এ বিষয়ে বিনিয়োগকারী, বিশ্লেষক, নীতিনির্ধারক সবাই একমত। সূত্রঃ বণিকবার্তা।