কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় স্বর্ণলতা নামে একটি যাত্রীবাহী বাসে শাহিনুর আক্তার তানিয়া (২৪) নামে এক নার্সকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। পরে তাকে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় ধর্ষণকারীরা।
সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের গজারিয়া জামতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাহিনুর কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শাহিনুর আক্তার ওরফে তানিয়া ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে চাকরি করতেন। সোমবার বিকেলে তিনি বিমানবন্দর কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়ে স্বর্ণলতা পরিবহনে ওঠেন। স্বর্ণলতা বাস মহাখালী থেকে কটিয়াদী হয়ে বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত চলাচল করে। পিরিজপুর থেকে তার বাড়ির দূরত্ব মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা।
বিকেলে বাসে ওঠার পর থেকে বাবা এবং ভাইদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কথা হয় শাহিনুরের। রাত ৮টার দিকে তিনি যখন মঠখোলা বাজার অতিক্রম করেন তখন তার বাবাকে জানিয়েছেন, আধা ঘণ্টার মধ্যে বাড়ি পৌঁছাতে পারবেন। তার বাবা তখন এশা এবং তারাবির নামাজের জন্য মসজিদে যাচ্ছেন।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাসটি কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে তখনো ভাইয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় শাহিনুরের। বলেন, আর মাত্র পাঁচ-সাত মিনিট লাগবে পিরিজপুর পৌঁছাতে।
কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে বাসের সব যাত্রী নেমে যায়। কিন্তু গাড়িচালক ও হেলপার কৌশলে কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড থেকে তাদের সঙ্গের চার-পাঁচজনকে যাত্রীবেশে গাড়িতে তোলেন। কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড পার হয়ে দুই কিলোমিটার দূরবর্তী ভৈবর-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের গজারিয়া জামতলী নামক নীরব জায়গায় শাহিনুরকে জোরপূর্বক চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণ করে এবং গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে। তার মৃত্যুর পর ধর্ষণকারীরা রাত পৌনে ১১টার দিকে কটিয়াদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে দুর্ঘটনার কথা বলে মরদেহ ফেলে রেখে যায়।
হাসপাতালের রেজিস্টার সূত্রে জানা যায়, শাহিনুরের মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন আল-আমিন, বাবা ওয়াহিদুজ্জামান, গ্রাম ভেঙ্গারদি, কাপাসিয়া, গাজীপুর।
এদিকে পাঁচ মিনিটের কথা বলে দীর্ঘ সময় তানিয়া পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ডে স্বর্ণলতা বাস না পৌঁছায় তার ভাই মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। গভীর রাতে খবর পায় শাহিনুরের মরদেহ কটিয়াদী হাসপাতাল থেকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
তানিয়ার ভাই কফিল উদ্দিন সুমন বলেন, শাহিনুরের সঙ্গে একটি এলইডি ১৯ ইঞ্চি টেলিভিশন, একটি স্যামসাং মোবাইল ফোন ও বেতনের ১৫-১৬ হাজার টাকা ছিল।
পুলিশ সূত্র জানায়, বাসটি রাত সাড়ে ৯টার দিকে কটিয়াদি আসার পর তানিয়া ও অন্য দুই যাত্রী ছাড়া সবাই নেমে যায়। উজানচর এলাকায় ওই দুই যাত্রীও নেমে যায়। বাসটি গজারিয়া এলাকায় পৌঁছালে চালক ও সহকারী তাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে দেয়। সেখান থেকে এলাকাবাসী তাকে কটিয়াদি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তানিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিন বলেন, শুধুমাত্র আমাকে দেখার জন্য মেয়ে বাড়ি আসছিল। বাসে ওঠার পর কয়েকবার মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে আমার কথা হয়। মেয়ের সঙ্গে কথা বলে আমি তারাবি নামাজ পড়তে যাই। এসে শুনি হাসপাতালে মেয়ের লাশ। আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য প্রকল্পের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাজরীনা তৈয়ব বলেন, রাত পৌনে ১১টার দিকে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পাই। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে কটিয়াদী থানা পুলিশকে জানানো হয়। তানিয়ার ঠোঁট, গলা ও বুকসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
কটিয়াদী মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম হাসপাতাল থেকে খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে তানিয়ার মরদেহ দেখতে পায়। পরে অভিযান চালিয়ে বাসচালক নূরুজ্জামান ও হেলপার লালন মিয়াসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাসচালক ও হেলপার জানায়, মেয়েটি বাস থেকে লাফিয়ে পড়েছে। তবে তাদের জিজ্ঞাসবাদ করা হচ্ছে। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ